আনুমানিক ত্রয়োদশ শতাব্দীতে নির্মিত প্রস্তর দুর্গামূর্তি। মিলিছে কাশ্মীরে।
দেবলীনা কর্মকার
প্রাচীন হিন্দুশাস্ত্র মতে, ব্রহ্মাণ্ডের সকল শক্তির মিলিত রূপ হলেন দেবী মা দূর্গা। জানা যায়, দুর্গা শক্তির বিকাশ আনুমানিক খ্রিষ্টীয় চতুর্থ থেকে পঞ্চম শতকে রচিত মার্কন্ডেয় পুরাণ এবং শ্রীশ্রীচন্ডীতে। তবে এর সূত্রপাত হয় বিষ্ণুপুরাণ, হরিবংশ, দেবীপুরাণ, ভাগবত ও বাসনপুরাণে। মহাভারতের বিরাট পর্বে ও ভীষ্ম পর্বেও দুর্গাস্তব আছে। বিষ্ণুপুরাণের পঞ্চম অংশে দেবকীর গর্ভে দেবী যোগমায়ার জন্মানোর বৃত্তান্ত আছে। শ্রীশ্রীচন্ডীতে বলা হয়েছে, তিনি জগত্ পালিকা আদ্যাশক্তি ও সনাতনী।
মহিষাসুরের
অত্যাচারে স্বর্গ থেকে বিতাড়িত হয়ে দেবতাকুল শ্রীবিষ্ণু ও মহাদেবের কাছে
সাহায্যের জন্য উপস্থিত হন। প্রবল পরাক্রমশালী মহিষাসুরকে বধ করার জন্য সকল দেবতার
তেজ থেকে এক অপূর্ব নারী মূর্তির সৃষ্টি হয়। সকল দেবতারা তাঁকে অস্ত্র ও অলংকার
দিয়ে সজ্জিত করেন। এই নারী মহিষাসুরকে যুদ্ধে আবাহন করেন। প্রচণ্ড যুদ্ধের পর
ত্রিশূল দিয়ে গেঁথে মহিষাসুরকে বধ করেন দুর্গা।
শ্রীশ্রীচন্ডীতে
বর্ণিত আছে প্রাচীনকালে রাজা সুরথ ও সমাধি বৈশ্য সর্বহারা হয়ে নিজেদের সবকিছু
ত্যাগ করে বনে গমন করেন। মেধা মুনি নামে ওই ঋষি তাঁদের দুর্দশার কাহিনী শোনার পর
তাঁদের বলেন “বিশ্ব সংসারকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য জগতের পালন কর্তা বিষ্ণুর মহামায়া
শক্তির প্রভাবে এই রকম হয়। মুনির উপদেশ পেয়ে সুরথ ও সমাধি মাটির প্রতিমা গড়ে তিনবছর
কঠোর তপস্যার পর দেবী তুষ্ট হয়ে তাঁদের দেখা দেন এবং মনোবাঞ্ছনা পূর্ণ করেন।
বসন্তকালকে দুর্গাপূজার উপযুক্ত সময় নির্ধারণ করে বাসন্তী পূজার প্রচলন করেন
তাঁরা।
মহাকাব্য রামায়ণ
অনুসারে দুর্গাপুজো বা অকাল বোধনের সূচনা করেছিলেন শ্রীরামচন্দ্র। রাবণের হাত থেকে
সীতাকে উদ্ধার করার জন্য লঙ্কা গমন করার আগে অকাল বোধন করে শরত্কালে দুর্গা পুজো
করেন। দেবীর দশহাতে ত্রিশূল, খড়গ, সুদর্শন চক্র, ধনুবার্ন, শক্তি খেটক, পূর্নচাপ, নাগতালা, অংকুশ ও পরশু এই ধরনের অস্ত্র দেখা যায় বলে
তিনি দশপ্রহরণধারিত্রী।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন