দুর্গতিনাশিনী – যিনি সমস্ত দুর্গতি নাশ করেন

মা দুর্গা

অর্চনা

আলোর বেনু বেজে গিয়েছে। সমগ্র চরাচর জুড়ে আগমণীর সুর। নীল আকাশে পেঁজা তুলোর মতো মেঘ। হঠাৎ এক পশলা বৃষ্টি। মাঠ ছেয়ে রয়েছে সাদা কাশফুল। 'চিন্ময়ীকে মৃন্ময়ীরূপ দানের' প্রস্তুতি চলেছে সর্বত্র।

বঙ্গদেশে শরৎকালে দুর্গাপুজোর সময় এবং নামকরণ নিয়ে বিভিন্ন মত রয়েছে। কারও মতে, শরৎকালে আমরা যে দেবীর পুজো করে থাকি, তিনি মহিষাসুরমর্দিনী দুর্গা। সেই কারণেই দেবীপুজোয় 'নমশ্চণ্ডিকায়ৈ' মন্ত্র প্রারম্ভে উচ্চারিত হয়। আবার অনেকের ধারণা, দুর্গ অথবা দুর্গম নামক অসুরকে শক্তিরূপিনী বধ করেছিলেন বলে তিনিই দুর্গা। যদিও শাক্তমতে দুজনেই এক ও অভিন্না। কিন্তু, আবির্ভাবের কাল এবং অসুর-বধের স্থানের ভিত্তিতে তাঁদের আলাদা করা হয়ে থাকে।

মার্কেণ্ডেয় পুরাণ এবং শ্রীশ্রীচণ্ডিতে পাওয়া তথ্য থেকে জানা যায় যে বাংলায় প্রচলিত আসলে মহিষাসুরমর্দিনী চণ্ডিকার পুজো। তবে নামের রহস্য দুর্গা নামেই রয়ে গিয়েছে। শব্দকল্পদ্রুম-এ বলা হয়েছে, 'দুর্গ' শব্দের এক অর্থ সংকট, বিপদ। যিনি সেই বিপদ থেকে উদ্ধার করেন তিনিই দুর্গা। আবার দুর্গ অসুরকে বধ করেছিলেন, এর অর্থ হিসেবে বলা হয়েছে 'দুর্গ' অর্থাৎ মহাবিঘ্ন, মায়ার বাঁধন, কুকর্ম। মার্কেণ্ডেয় পুরাণের দেবস্তবে বলা হয়েছে- 'দুর্গা দৈত্যে মহাবিঘ্নে ভববন্ধে কুকর্মণি, দুর্গে স্মৃতা হরসি ভীতিমশেষজন্তোঃ'। অর্থাৎ দুর্গ শব্দে '' বর্ণটি ব্যবহার করা হয়েছে 'হন্তা' বা 'নাশ করা' বোঝাতে। 

শব্দের বর্ণবিভাগ থেকে জানা যায়- দুর্গা শব্দে '' বর্ণের অর্থ দৈত্য নাশ করেন, উ-কার অর্থ বিঘ্ন নাশ, রেফ এখানে রোগ নাশ, '' বর্ণের অর্থ পাপ নাশ। তাই দুর্গা শব্দের সবচেয়ে সাধারণ অর্থ এটাই যে- দুর্গা সব প্রকারের দুর্গতি যিনি নাশ করেন। সেই দুর্গতির অর্থে মহিষাসুর বা দুর্গাসুর যিনিই থাকুন না কেন! আসুরিক শক্তিকে পরাস্ত করে ভয় দূর করেই তিনি বঙ্গদেশের দুর্গা।

দুর্গাসপ্তশতী চণ্ডিতে তাই বলা হয়েছে- 'ভয়েভ্যস্ত্রাহি নো দেবি দুর্গে দেবি নমোস্তু'তে' অর্থাৎ- হে দেবী! তুমি আমাদের সকল ভয় থেকে পরিত্রাণ করো, তাই তুমি দেবী দুর্গা।                                                                

তথ্যসূত্র- শ্রীশ্রীচণ্ডী, মার্কেন্ডেয় পুরাণ, শব্দকল্পদ্রুম- 'দুর্গা শব্দ'

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন