চটি বই কালে কালে রূপ পেল চটি গল্পে। বাঙালি কৈশোরে ইরোটিকের প্রথম পাঠ। লিখছেন শ্রীদেব।
আমি তখন চতুর্থ শ্রেনীর ছাত্র। স্কুলের ক্লাস টেস্টের আগে দিনিমনি মাকে ডেকে বললেন, এবার ক্লাস টেস্টে স্কুল থেকে পেপার দেওয়া হবে না। ছাত্র-ছাত্রীদেরই বাড়ি থেকে একটা চটি খাতা সঙ্গে আনতে হবে। মা মাথা নেড়ে দিদিমনির কাছে সবটা বুঝে নিল। কিন্তু আমি বুঝলাম না। তখনও পর্যন্ত আমার গবেট বুদ্ধিতে ‘চটি’ বলতে হাওয়াই চটি বুঝি, এবং বুঝি খাতা বিদ্যার জিনিস। আর চটি ও খাতা একজায়গায় হওয়া মানে বিদ্যার দেবী রুষ্ট হবেন।
স্কুল থেকে বাড়ি ফিরলাম। দুপুরের খাওয়া-দাওয়া সেরে মায়ের পাশে শুয়ে ঘুমালাম। বিকেলে ঘুম থেকে উঠে মাঠে খেলতে গেলাম। ফিরে এসে বই নিয়ে পড়তে বসলাম। পড়ে উঠে রাতের খাওয়া সেরে আবার বিছানায়। কিন্তু সারাক্ষণ মনের মধ্যে একটা শব্দই ঘুরপাক খেতে লাগল – চটিখাতা।
পরেরদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে ব্যপারটা ভুলে গিয়েছিলাম। স্কুলের ক্লাসে সেই দিদিমনিকে দেখে আবার প্রশ্নটা উঁকি দিতে শুরু করল। তবে দিদিমনিকে প্রশ্নটা করা সাহস হল না। তাঁর কোনও প্রশ্নের আমিই সঠিক উত্তর কখনও দিতে পারি না, তাঁকে আর প্রশ্ন করে নিজের বিড়ম্বনা বাড়াবো না ঠিক করলাম। ভাবলাম, আজকে মা নিতে আসলেই জিজ্ঞাসা করবো।
সেটাও পরে ভুলে গিয়েছিলাম। বাড়ি ফিরে দেখলাম, মা ডজন খানেক সাদা ও রুল টানা বঙ্গলিপি খাতা এনে রেখেছে। নেড়েচেড়ে দেখে মাকে বললাম, এগুলে চটি খাতা!
মা বলল, হ্যাঁ। কেন?
– চটি তো পায়ে পড়ে, বিদ্যার জিনিস খাতার অমন হতে যাবে কেন?
মায়েদের কাছে ছেলের সব মুর্খামির ক্ষমা আছে। মা হেসে বলল, ওরে না-না। পাতলা খাতাকে চটি খাতা বলে। এটা ২৫ নম্বর খাতা।
সেই প্রথম আবার বোধে এল যে পাতলা খাতাকে চটিখাতা বলে।
দিনকয়েক আগে ফেসবুকের একটা গ্রুপে এক সদস্যের চটুর পোস দেখলাম। হোয়াটসঅ্যাপ চ্যাটিংয়ের স্ক্রিনশট। তাতে প্রথমজন জানতে চেয়েছেন, choti golper boi kothay paoya jay?
উত্তরে দ্বিতীয়জন প্রশ্ন করেছেন, আপনি কি রবীন্দ্রনাথের ছুটি গল্পের কথা বলছেন?
তাতে প্রথমজন স্পষ্ট করেছেন, na, choti boiyear katha bolchi
এই স্ক্রিনশট দিয়ে পোস্টদাতা লিখেছেন, এই চটি বই জিনিসটি কী?
আমার উত্তর হল, চটি বই মানে পাতলা বই। মানে এক বা দুই ফর্মার, ১৬ বা ৩২ পৃষ্টার নরম কাগজের মলাট দেওয়া বই। ২৫ নম্বর বঙ্গলিপি খাতার ফরমুলায় অন্তত সেটাই।
তবে কালক্রমে চটিবইয়ের অর্থ বদলে গিয়েছে। চটি বই অর্থে এখন ‘অশ্লীল’ বই। যা ফুটপাথে বা রেলস্টেশনে সস্তা বইয়ের পসারে সাজানো থাকে। এমনকী, ইউটিউবেও বহু অডিও স্টোরি পাওয়া যায়, যেখানে শিরোনাম থাকে ‘বাংলা চটি গল্প’। সেগুলি সবই ইরোটিক। কিন্তু, ইরোটিক কিভাবে চটি বই হয়ে গেল, বা চটি বই কিভাবে ইরোটিক হয়ে গেল সে বড় কঠিন প্রশ্ন।
আটের দশকের মাঝ। মনমোহন সিংয়ের বিশ্বায়ন তখন বহুদূরে। মোবাইল ফোন ভবিষ্যতের গর্ভে। ছেলে-ছোকরাদের কলেজ ডুব মেরে ধর্মতলার সিনেমাহলে নুন-শোয়ে সি-গ্রেডের দক্ষিণী ছবি দেখা বা লুকিয়ে ভিসিআর ভাড়া করে বিদেশী পর্নফিল্ম দেখার জমানায় স্মার্টফোনে অবাধ যৌনছবি কারও কল্পনাতেই নেই। সেই বাজারে তুলনামূলকভাবে সস্তা ও সহজলভ্য ছিল ইরোটিক বই। লজ্জার মাথা খেয়ে দোকানের সামনে দাঁড়িয়ে হাতে বই তুলে নিতে হবে। ব্যাস। তারপরেই নারী-পুরুষের যৌনতার গোপন দুনিয়ায় ঢুকে পড়া।
ওই সময়টায় বইয়ের চাহিদা ছিল। একদিকে যেমন রবীন্দ্র-রচনা, শরৎ-সাহিত্য, ব্যোমকেশ, বিভূতিভূষণ বন্দ্যপাধ্যায়ের মতো লেখকদের সঙ্গে সমকালীন লেখকদের বইয়ের বড় সংখ্যায় পাঠক ছিল, তেমনই সদ্য স্কুল পার করা বা অল্প শিক্ষিতদেরও বই পড়ার অভ্যাস ছিল। তাদের পছন্দ ছিল ফুটপাথ, রেলস্টেশন কিংবা মেলায় বইয়ের পসার থেকে কেনা পাতলা বইগুলো। সেসব জায়গায় মিলত রামায়ন-মহাভারতের সংক্ষিপ্তসার, পৌরানিক পালা, বেতালপঞ্চবিংশতি, জাতক কথা, নিবেদিতা, বিবেকানন্দ থেকে শুরু করে স্বপনকুমারের জনপ্রিয় ড্রাগন সিরিজ। মোটকথা ট্রেন-বাসের দীর্ঘযাত্রার একঘেয়েমি কাটাতে এইসব বই সঙ্গী হত। আর এর মধ্যেই থাকত নিত্যকর্মপদ্ধতি, লক্ষীপাঁচালি ইত্যাদিও।
এই বইসম্ভারের আড়ালেই থাকতো সেই ইরোটিক। দোকানি অঞ্চল ও সেখানকার লোকজনের ওজন বুঝে নিয়ে সেগুলি মেপে প্রদর্শন করত। যেমন ধরুন, কোনও বসত এলাকার বাজারে, যেখানে সচরাচর কেই সাহস করে ওই ধরনের বই কিনতে আসবে না, দোকানি সেখানে সেগুলো চেপে রাখত। তাছাড়া, পসারে ওই বই দেখলে ভদ্রসাজা লোকগুলো আপত্তিও তুলতে পারে। বেপরোয়া কেউ খোঁজ করতে গেলে বের করে দিত। তবে ধরুণ মহত্মা গান্ধী রোডের ফুটপাথে কোনও পসার, সেখানে আবার এই বইগুলোই সামনে এগিয়ে রাখা হত।
সস্তা নিউজপ্রিন্টে লেটারপ্রেসে ছাপা তিরিশ-বত্রিশ পাতার বই। কাঠের ব্লকে মাল্টিকালারে পাতলা ও গ্লসি পেপারের প্রচ্ছদ। একটি নগ্ন লাস্যময়ী নারী অথবা স্ত্রী-পুরুষের অন্তরঙ্গ ছবি। ভিতরেও ওই ধরনের সাদাকালো ছবি বেশ কয়েকটা। নামেই সেই বইয়ের চরিত্র প্রকাশ– কামিনীর কামনা, বৌদির দুঃখ, চামেলির আহ্লাদ, ১০১ প্রেমপত্র ইত্যাদি ইত্যাদি। বই খুললেই আদি রসাত্মক শব্দ ছত্রেছত্রে। তাতেই সদ্য কৈশোরে পা রাখা ছেলেটির বুক ঢিপঢিপ, দ্রুত হয় শ্বাস-প্রশ্বাস। হারিয়ে যায় ফ্যান্টাসির জগতে।
প্রথমদিকে পসার থেকে সেই বই হাতে তুলে নিয়ে পাতা উল্টে দেখা যেত। কিন্তু, সমস্যা হল, বহু মানুষ দাঁড়িয়ে পাতা উল্টে দেখে বই না কিনেই চলে যেত। এমন বারবার নাড়াচাড়ায় বই নষ্ট হয়ে যেত। সে কারণে বইয়ের পাতাগুলো স্টেপল করে দেওয়া শুরু হল। তাতেও ঝামেলা কমল না। বরং বইয়ের পৃষ্ঠা ছেঁড়াছেড়িতে ঝগড়াঝাটি বাঁধতে থাকলো। এরপর হলুদ সেলোফেন পেপারে সেই বই প্যাক করা হল। প্রচ্ছদ দেখ, দেখে পছন্দ হলে কেনো, না হলে বাড়ি যাও।
সেই থেকে ইরোটিকের নাম হল ‘হলুদ বই’। পাতলা বই বলে সংকীর্ণ অর্থে সেই বই-ই হয়ে গেল চটি বই। আর তাতে থাকা গল্পের জঁরটি হল ‘চটি গল্প’– অর্থাৎ, অশ্লীল ও যৌনতা। একসময় তো এই সব বইয়ের জনপ্রিয়তা দেখে মধ্য কলকাতার কয়েকটা প্রেস মাসিক ম্যগাজিন প্রকাশ শুরু করে দিয়েছিল। সেখানে অবশ্য ভাষায় একটু রাখঢাক থাকতো।
স্কুলের অষ্টম-নবম-দশম শ্রেণির ছাত্রদের স্কুলব্যাগে ঢুকে পড়েছিল হলুদ বই। ক্লাসের ব্ল্যাকবোর্ডের পিছনে কিংবা মাস্টারমশাইয়ের ডেস্কের প্ল্যাটফর্মের নীচে লুকানো থাকতো সযত্নে। পর্যায়ক্রমে হাত বদল হতে থাকতো একটি বই। কে এনেছে কার কাছে গিয়ে সে বই থামবে, তা নিয়ে কারও মাথাব্যাথা থাকতে না। এখন চটিবই নামটিই শুধুমাত্র থেকে গিয়েছে, তার অস্তিত্ব আর নেই।
স্কুল থেকে বাড়ি ফিরলাম। দুপুরের খাওয়া-দাওয়া সেরে মায়ের পাশে শুয়ে ঘুমালাম। বিকেলে ঘুম থেকে উঠে মাঠে খেলতে গেলাম। ফিরে এসে বই নিয়ে পড়তে বসলাম। পড়ে উঠে রাতের খাওয়া সেরে আবার বিছানায়। কিন্তু সারাক্ষণ মনের মধ্যে একটা শব্দই ঘুরপাক খেতে লাগল – চটিখাতা।
পরেরদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে ব্যপারটা ভুলে গিয়েছিলাম। স্কুলের ক্লাসে সেই দিদিমনিকে দেখে আবার প্রশ্নটা উঁকি দিতে শুরু করল। তবে দিদিমনিকে প্রশ্নটা করা সাহস হল না। তাঁর কোনও প্রশ্নের আমিই সঠিক উত্তর কখনও দিতে পারি না, তাঁকে আর প্রশ্ন করে নিজের বিড়ম্বনা বাড়াবো না ঠিক করলাম। ভাবলাম, আজকে মা নিতে আসলেই জিজ্ঞাসা করবো।
সেটাও পরে ভুলে গিয়েছিলাম। বাড়ি ফিরে দেখলাম, মা ডজন খানেক সাদা ও রুল টানা বঙ্গলিপি খাতা এনে রেখেছে। নেড়েচেড়ে দেখে মাকে বললাম, এগুলে চটি খাতা!
মা বলল, হ্যাঁ। কেন?
– চটি তো পায়ে পড়ে, বিদ্যার জিনিস খাতার অমন হতে যাবে কেন?
মায়েদের কাছে ছেলের সব মুর্খামির ক্ষমা আছে। মা হেসে বলল, ওরে না-না। পাতলা খাতাকে চটি খাতা বলে। এটা ২৫ নম্বর খাতা।
সেই প্রথম আবার বোধে এল যে পাতলা খাতাকে চটিখাতা বলে।
দিনকয়েক আগে ফেসবুকের একটা গ্রুপে এক সদস্যের চটুর পোস দেখলাম। হোয়াটসঅ্যাপ চ্যাটিংয়ের স্ক্রিনশট। তাতে প্রথমজন জানতে চেয়েছেন, choti golper boi kothay paoya jay?
উত্তরে দ্বিতীয়জন প্রশ্ন করেছেন, আপনি কি রবীন্দ্রনাথের ছুটি গল্পের কথা বলছেন?
তাতে প্রথমজন স্পষ্ট করেছেন, na, choti boiyear katha bolchi
এই স্ক্রিনশট দিয়ে পোস্টদাতা লিখেছেন, এই চটি বই জিনিসটি কী?
আমার উত্তর হল, চটি বই মানে পাতলা বই। মানে এক বা দুই ফর্মার, ১৬ বা ৩২ পৃষ্টার নরম কাগজের মলাট দেওয়া বই। ২৫ নম্বর বঙ্গলিপি খাতার ফরমুলায় অন্তত সেটাই।
তবে কালক্রমে চটিবইয়ের অর্থ বদলে গিয়েছে। চটি বই অর্থে এখন ‘অশ্লীল’ বই। যা ফুটপাথে বা রেলস্টেশনে সস্তা বইয়ের পসারে সাজানো থাকে। এমনকী, ইউটিউবেও বহু অডিও স্টোরি পাওয়া যায়, যেখানে শিরোনাম থাকে ‘বাংলা চটি গল্প’। সেগুলি সবই ইরোটিক। কিন্তু, ইরোটিক কিভাবে চটি বই হয়ে গেল, বা চটি বই কিভাবে ইরোটিক হয়ে গেল সে বড় কঠিন প্রশ্ন।
আটের দশকের মাঝ। মনমোহন সিংয়ের বিশ্বায়ন তখন বহুদূরে। মোবাইল ফোন ভবিষ্যতের গর্ভে। ছেলে-ছোকরাদের কলেজ ডুব মেরে ধর্মতলার সিনেমাহলে নুন-শোয়ে সি-গ্রেডের দক্ষিণী ছবি দেখা বা লুকিয়ে ভিসিআর ভাড়া করে বিদেশী পর্নফিল্ম দেখার জমানায় স্মার্টফোনে অবাধ যৌনছবি কারও কল্পনাতেই নেই। সেই বাজারে তুলনামূলকভাবে সস্তা ও সহজলভ্য ছিল ইরোটিক বই। লজ্জার মাথা খেয়ে দোকানের সামনে দাঁড়িয়ে হাতে বই তুলে নিতে হবে। ব্যাস। তারপরেই নারী-পুরুষের যৌনতার গোপন দুনিয়ায় ঢুকে পড়া।
ওই সময়টায় বইয়ের চাহিদা ছিল। একদিকে যেমন রবীন্দ্র-রচনা, শরৎ-সাহিত্য, ব্যোমকেশ, বিভূতিভূষণ বন্দ্যপাধ্যায়ের মতো লেখকদের সঙ্গে সমকালীন লেখকদের বইয়ের বড় সংখ্যায় পাঠক ছিল, তেমনই সদ্য স্কুল পার করা বা অল্প শিক্ষিতদেরও বই পড়ার অভ্যাস ছিল। তাদের পছন্দ ছিল ফুটপাথ, রেলস্টেশন কিংবা মেলায় বইয়ের পসার থেকে কেনা পাতলা বইগুলো। সেসব জায়গায় মিলত রামায়ন-মহাভারতের সংক্ষিপ্তসার, পৌরানিক পালা, বেতালপঞ্চবিংশতি, জাতক কথা, নিবেদিতা, বিবেকানন্দ থেকে শুরু করে স্বপনকুমারের জনপ্রিয় ড্রাগন সিরিজ। মোটকথা ট্রেন-বাসের দীর্ঘযাত্রার একঘেয়েমি কাটাতে এইসব বই সঙ্গী হত। আর এর মধ্যেই থাকত নিত্যকর্মপদ্ধতি, লক্ষীপাঁচালি ইত্যাদিও।
এই বইসম্ভারের আড়ালেই থাকতো সেই ইরোটিক। দোকানি অঞ্চল ও সেখানকার লোকজনের ওজন বুঝে নিয়ে সেগুলি মেপে প্রদর্শন করত। যেমন ধরুন, কোনও বসত এলাকার বাজারে, যেখানে সচরাচর কেই সাহস করে ওই ধরনের বই কিনতে আসবে না, দোকানি সেখানে সেগুলো চেপে রাখত। তাছাড়া, পসারে ওই বই দেখলে ভদ্রসাজা লোকগুলো আপত্তিও তুলতে পারে। বেপরোয়া কেউ খোঁজ করতে গেলে বের করে দিত। তবে ধরুণ মহত্মা গান্ধী রোডের ফুটপাথে কোনও পসার, সেখানে আবার এই বইগুলোই সামনে এগিয়ে রাখা হত।
সস্তা নিউজপ্রিন্টে লেটারপ্রেসে ছাপা তিরিশ-বত্রিশ পাতার বই। কাঠের ব্লকে মাল্টিকালারে পাতলা ও গ্লসি পেপারের প্রচ্ছদ। একটি নগ্ন লাস্যময়ী নারী অথবা স্ত্রী-পুরুষের অন্তরঙ্গ ছবি। ভিতরেও ওই ধরনের সাদাকালো ছবি বেশ কয়েকটা। নামেই সেই বইয়ের চরিত্র প্রকাশ– কামিনীর কামনা, বৌদির দুঃখ, চামেলির আহ্লাদ, ১০১ প্রেমপত্র ইত্যাদি ইত্যাদি। বই খুললেই আদি রসাত্মক শব্দ ছত্রেছত্রে। তাতেই সদ্য কৈশোরে পা রাখা ছেলেটির বুক ঢিপঢিপ, দ্রুত হয় শ্বাস-প্রশ্বাস। হারিয়ে যায় ফ্যান্টাসির জগতে।
প্রথমদিকে পসার থেকে সেই বই হাতে তুলে নিয়ে পাতা উল্টে দেখা যেত। কিন্তু, সমস্যা হল, বহু মানুষ দাঁড়িয়ে পাতা উল্টে দেখে বই না কিনেই চলে যেত। এমন বারবার নাড়াচাড়ায় বই নষ্ট হয়ে যেত। সে কারণে বইয়ের পাতাগুলো স্টেপল করে দেওয়া শুরু হল। তাতেও ঝামেলা কমল না। বরং বইয়ের পৃষ্ঠা ছেঁড়াছেড়িতে ঝগড়াঝাটি বাঁধতে থাকলো। এরপর হলুদ সেলোফেন পেপারে সেই বই প্যাক করা হল। প্রচ্ছদ দেখ, দেখে পছন্দ হলে কেনো, না হলে বাড়ি যাও।
সেই থেকে ইরোটিকের নাম হল ‘হলুদ বই’। পাতলা বই বলে সংকীর্ণ অর্থে সেই বই-ই হয়ে গেল চটি বই। আর তাতে থাকা গল্পের জঁরটি হল ‘চটি গল্প’– অর্থাৎ, অশ্লীল ও যৌনতা। একসময় তো এই সব বইয়ের জনপ্রিয়তা দেখে মধ্য কলকাতার কয়েকটা প্রেস মাসিক ম্যগাজিন প্রকাশ শুরু করে দিয়েছিল। সেখানে অবশ্য ভাষায় একটু রাখঢাক থাকতো।
স্কুলের অষ্টম-নবম-দশম শ্রেণির ছাত্রদের স্কুলব্যাগে ঢুকে পড়েছিল হলুদ বই। ক্লাসের ব্ল্যাকবোর্ডের পিছনে কিংবা মাস্টারমশাইয়ের ডেস্কের প্ল্যাটফর্মের নীচে লুকানো থাকতো সযত্নে। পর্যায়ক্রমে হাত বদল হতে থাকতো একটি বই। কে এনেছে কার কাছে গিয়ে সে বই থামবে, তা নিয়ে কারও মাথাব্যাথা থাকতে না। এখন চটিবই নামটিই শুধুমাত্র থেকে গিয়েছে, তার অস্তিত্ব আর নেই।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন