মিঠুনদার দাদাসাহেব ফালকে জয়

৮ অক্টোবর ৭০তম জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অনুষ্ঠানে মিঠুন চক্রবর্তীর হাতে পুরস্কার তুলে দেওয়া হবে।

মিঠুনদার দাদাসাহেব ফালকে জয়
সোমবার কলকাতায় অভিনেতা-রাজনীতিক মিঠুন চক্রবর্তী।

ভারতীয় চলচ্চিত্র জগতে সবচেয়ে বড় সম্মান দাদাসাহেব ফালকে পুরস্কার পাচ্ছেন প্রবীণ অভিনেতা মিঠুন চক্রবর্তী। ভারতীয় সিনেমায় বিপুল অবদানের জন্য তাঁকে এই সম্মান জানানো হচ্ছে। সোমবার সকালে ‘এক্স’ হ‌্যান্ডলে পোস্টে কেন্দ্রীয় তথ‌্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণো জানান, ‘মিঠুনদার অসাধারণ সিনেমাটিক জার্নি প্রতিটি প্রজন্মকে অনুপ্রাণিত করেছে। দাদাসাহেব ফালকে সিলেকশন জুরি কিংবদন্তি অভিনেতাকে পুরস্কার দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ভারতীয় সিনেমায় অবিস্মণীয় অবদান রয়েছে মিঠুন চক্রবর্তীর।’ ৮ অক্টোবর ৭০তম জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অনুষ্ঠানে মিঠুন চক্রবর্তীর হাতে পুরস্কার তুলে দেওয়া হবে। ২০১১ সালে অভিনেতা সৌমিত্র চট্টোপাধ‌্যায়ের পর আবার কোনও বাঙালি অভিনেতার হাতে উঠছে দাদা সাহেব ফালকে পুরস্কার।

১৯৭৬ সালে মৃণাল সেন পরিচালিত ‘মৃগয়া’ ছবি দিয়ে চলচ্চিত্র জগতে অভিষেক ঘটে মিঠুনের। তারপর প্রায় পাঁচ দশক ধরে হিন্দি ও বাংলায় অজস্র ছবিতে অভিনয় করেছেন তিনি। ওডিয়া, ভোজপুরি, তামিল, তেলুগু, কন্নড় এবং পাঞ্জাবি চলচ্চিত্র-সহ বিভিন্ন ভাষার অনেক চলচ্চিত্রে কাজ করেছেন। এখনও সিনেমা জগতের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে যুক্ত। পুরস্কার প্রাপ্তিতে প্রথম প্রতিক্রিয়ায় মিঠুন বলেন, “'আমার কাছে কোনও ভাষা নেই। আমি হাসতেও পারছি না, কাঁদতেও পারছি না। এটা অনেক বড় ব্যাপার আমার জন্য। আমি কল্পনাও করতে পারিনি। খুবই খুশি। কলকাতার একটা ছেলেকে যে ভালোবাসা মানুষ দিয়েছেন, সেটা অনেক বড় ব্যাপার আমার জন্য। আমি আমার পরিবার ও বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে থাকা আমার সমস্ত ভক্তদের উৎসর্গ করতে চাই।”


মিঠুনের দাদা সাহেব ফালকে পুরস্কার প্রাপ্তিতে খুশি তাঁর ভক্তকুল। চলচ্চিত্র জগত থেকে রাজনৈতিক মহলের বিশিষ্টরাও তাঁকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ‘এক্স’ হ‌্যান্ডলে শুভেচ্ছাবার্তায় লিখেছেন, ‘আনন্দিত যে শ্রী মিঠুন চক্রবর্তী ভারতীয় চলচ্চিত্রে তাঁর অতুলনীয় অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ মর্যাদাপূর্ণ দাদাসাহেব ফালকে পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন। তিনি একজন সাংস্কৃতিক আইকন, তার বহুমুখী অভিনয়ের জন্য তিনি বিশ্বজুড়ে প্রশংসিত। তাকে অনেক অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা।’ প্রসঙ্গত, ২০২১ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে বিজেপিতে যোগ দেন মিঠুন। তার আগে অবশ‌্য ২০১৪ সালে তাঁকে রাজ‌্যসভার সদস‌্য করে পাঠান তৃণমূল কংগ্রেস নেত্রী তথা বাংলার মুখ‌্যমন্ত্রী মমতা বন্দে‌্যাপাধ‌্যায়। এদিন কলকাতায় এক সাংবাদিক সম্মেলনে তাঁকে প্রশ্ন করা হয়, একদিকে নরেন্দ্র মোদির সরকার অন্যদিকে মিঠুন স্বয়ং বিজেপিতে রয়েছেন। এক্ষেত্রে কিছু সুবিধা পেলেন কি? তাতে মিঠুন হেসে জবাব দেন, “আমি সুবিধা কারও কাছ থেকে নিই না। আমার লড়াই একার। আমাকে কেউ প্লেটে সাজিয়ে কোনও দিন কিছু দেয়নি। আমাদের প্রতিদিন লড়াই করতে হয়েছে।”

অভিনেতা মিঠুন চক্রবর্তীকে শুভেচ্ছে জানিয়ে তৃণমূল কংগ্রেসের প্রাক্তন সাংসদ কুণাল ঘোষ সোশাল মিডিয়া পোস্টে লেখেন, ‘শিল্পী মিঠুনদাকে অভিনন্দন। শুধু অনুরোধ, দীর্ঘ উপেক্ষার পর আপনাকে ‘পদ্মশ্রী’ দিতে প্রণব মুখোপাধ্যায়ের চিঠি ও চেষ্টার দিনগুলো এবং সেই সঙ্গে মমতা বন্দে‌্যাপাধ‌্যায়ের আপনাকে স্বীকৃতি দিয়ে রাজ্যসভায় পাঠানোটা ভুলে যাবেন না।’ প্রসঙ্গত, উত্তর কলকাতায় বসন্ত কুমার চক্রবর্তী ও শান্তিরানি চক্রবর্তীর পুত্র গৌরাঙ্গ পুনে ফিল্ম অ্যান্ড টেলিভিশন ইনস্টিটিউট থেকে স্নাতক হন। ছাত্রজীবনে জড়িয়ে পড়েছন নকশাল আন্দোলনে। তবে সিনেমায় তিনি মিঠুন নামে খ‌্যাত হন। এদিন মিঠুন এক সংবাদ সংস্থাকে বলেন, “ফুটপাথ থেকে উঠে আসা একটা ছেলেকে আজ এত বড় সম্মান। আমার বলার কোনও ভাষা নেই। আমি না খুশিতে কাঁদতে পারছি, না হাসি পাচ্ছে। আমি বাকরূদ্ধ। কলকাতার যে সরু গলি থেকে আমি উঠে এসেছি, ফুটপাথে লড়াই করে, আমি ভাবতেও পারছি না। আমি এই পুরস্কার উৎসর্গ করছি আমার পরিবার ও গোটা বিশ্বে ছড়িয়ে থাকা আমার ভক্তদের।”

মিঠুনের পুরস্কার প্রাপ্তিতে অভিনেত্রী-পরিচালক অপর্ণা সেন বলেন, “আমাদের মিঠুন দাদাসাহেব ফালকে পাচ্ছে জেনে খুব আনন্দ হচ্ছে। ও খুবই দক্ষ অভিনেতা। আমরা একটাই ছবি করেছি। আমার প্রাক্তন প্রেমিকের চরিত্রে অভিনয় করেছিল মিঠুন। এমন অমাইক মানুষ। মিঠুনের এই সাফল্যে অনেক শুভেচ্ছা। একটাই কথা বলতে পারি মিঠুন তুমি চালিয়ে যাও।” তাঁর প্রথম ছবির নায়িকা অভিনেত্রী মমতা শঙ্কর বলেন, “মনে হচ্ছে আমিই পেলাম পুরস্কারটা। আমি দারুণ খুশি। সবথেকে বড় কথা হল যোগ্য মানুষের হাতে গিয়েছে পুরস্কারটা। পুরস্কার পেলেই এমন খুশি হয়। আমাদের অভিনয়জীবন শুরু একসঙ্গে ‘মৃগয়া’র মাধ্যমে। ২০২৫-এ আমাদের অভিনয় জীবনের ৫০ বছর পূর্ণ হবে। এতদিনের বন্ধু আমরা। আনন্দ প্রকাশের ভাষা হারিয়ে ফেলছি।”

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন