Judy Blume : হঠাৎ কেন আলোচনায় ফিরে এলেন মার্কিন লেখিকা

আলোচনায় বইটি নয়, আলোচনায় তার লেখিকা জুডি ব্লুম। এর কারণ 'জুডি ব্লুম ফরএভার' শিরোনামে তার জীবনী নিয়ে একটি তথ্যচিত্র এই মুহূর্তে অ্যামাজন প্রাইম ভিডিওতে স্ট্রিম হচ্ছে। তাঁকে বলা হয়, শিশু-কিশোরদের অন্তরের লেখিকা।

Judy Blume : হঠাৎ কেন আলোচনায় ফিরে এলেন মার্কিন লেখিকা

মার্গারে চিন্তিত, তার অন্য বান্ধবীদের ইতিমধ্যেই পিরিয়ড হয়েছে কিন্তু তার এখনও হচ্ছে না, অন্য বান্ধবীদের স্তন উঠছে, অনেকেই ব্রা পরতে শুরু করেছে — কিন্তু তার এখনও কিছু হয়নি। ১৯৭০ সালে মার্কিন লেখিকা জুডি ব্লুম-এর বই, ‘Are You There God? It's Me, Margaret’ উপন্যাসটি প্রকাশের পরেই তুমুল হইচই বেধে গিয়েছিল। বইটিও বিভিন্ন স্থানে নিষিদ্ধ করা হয়, যার মধ্যে ১৯৭০ সালে, তার নিজের সন্তানেরা যে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়ছিল সেখানেও বইটি নিষিদ্ধ হয়েছিল।  

কেন হঠাৎ ৫৩ বছর আগের ঘটনা নিয়ে আলোচনা? আসলে, আলোচনায় বইটি নয়, আলোচনায় তার লেখিকা জুডি ব্লুম। এর কারণ 'জুডি ব্লুম ফরএভার' শিরোনামে তার জীবনী নিয়ে একটি তথ্যচিত্র এই মুহূর্তে অ্যামাজন প্রাইম ভিডিওতে স্ট্রিম হচ্ছে। ৫২ বছর বয়সে লেখা উপন্যাস “Are You There God? It's Me, Margaret”-এর গল্প নিয়ে সিনেমাও হয়েছিল। সেটিও জনপ্রিয় হয়েছিল। ব্লুম আমেরিকার তরুণ-তরুণীদের মধ্যে জনপ্রিয়তম লেখিকা। তবে সেই সঙ্গে সবচেয়ে বেশি সমালোচনাও কুড়িয়েছেন তিনি। তাঁর বইগুলি প্রিটিন, টিন এবং তরুণদের কাছে অত্যন্ত জনপ্রিয়। কারণ তিনি তরুণ বয়সীদের শারীরিক এবং মানসিক বিকাশ সম্পর্কে স্পষ্টভাবে তুলে ধরতে সফল হয়েছেন তাঁর লেখনিতে। এগুলির সঙ্গে তাঁরাই সম্পর্কযুক্ত।  তাঁর বিপুল জনপ্রিয়তার আরও একটি প্রধান কারণ হল তিনি যা লেখেন এবং যেভাবে লেখেন, তাতে চরিত্রগুলির ক্রিয়াকলাপ অন্য যে কোনও লেখকের চেয়ে বেশি প্রাণবন্ত করে তোলে।

ব্লুম ১৯৫৯ সালে লেখা শুরু করেন এবং ২৫টিরও বেশি উপন্যাস প্রকাশ করেছেন। নিউ জার্সিতে জন্ম ব্লুমের। সেখানেই বড় হন। ১৯৬১ সালে নিউ ইয়র্ক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক। তাঁর সমস্ত উপন্যাস ৮২ মিলিয়ন কপি বিক্রি হয়েছে অনূদিত হয়েছে ৩২টি ভাষায়। গত মার্চে ফ্লোরিডার মার্টিন কাউন্টি স্কুল ডিসট্রিক্ট তাঁর ১৯৭৫ সালে লেখা উপন্যাস ‘ফরএভার’ জুনিয়র হাই এবং হাইস্কুল থেকে সরিয়ে নিয়েছে। তা নিয়েও কম বিতর্ক হয়নি। কারণ, আমেরিকায় স্কুলে গেছে এমন কোনও টিন বা প্রিটিন খুব কমই মিলবে যারা জুডি ব্লুমের বই পড়ে বড় হয়নি। ৭০ এবং ৮০ এর দশকে ব্লুম যখন কিশোর এবং কিশোরীদের জন্য লেখা শুরু করেন, তখন তারা তাঁর উপন্যাসগুলো গোগ্রাসে পড়ছিল। সেই বইগুলিতে লেখিকা সদ‌্য কৈশোরে পা দেওয়া ছেলেমেয়েদের সেইসব সমস‌্যা, আশা ও উদ্বেগের বিষয় নিয়ে কথা বলেছিলেন, সামনে এনেছিলেন যা নিয়ে তারা অভিভাবকদের সঙ্গে খোলামেলা আলোচনা করতে পারত না।

‘Are You There God? It's Me, Margaret’ -এর গল্পটি এ রকম। গল্পের মূল চরিত্র মার্গারেট সাইমন তার দ্বাদশ জন্মদিনের কাছাকাছি, বেড়ে ওঠার যন্ত্রণা ভোগ করছে এবং একই সঙ্গে ধর্ম নিয়ে সংকটের মুখোমুখি। তার বাবা হারবার্ট ইহুদি এবং তার মা বারবারা খ্রিস্টান। পরিবারটি সবেমাত্র নিউইয়র্ক সিটি থেকে নিউ জার্সির শহরতলিতে এসেছে এবং মার্গারেট তার জীবনের একটি কঠিন সময়ে একটি নতুন স্কুলে ভর্তি হয়ে নতু্‌ন  পরিবেশের সঙ্গে খাপ খয়ানোর জন্য লড়াই করছে। মার্গারেটের খ্রিস্টান দাদি তাকে খ্রিস্টান ধর্ম গ্রহণের জন্য চাপ দিচ্ছেন, কিন্তু তার ইহুদি দাদি চাইছেন মার্গারেট যাতে ইহুদি ধর্ম পালন করে। 

মার্গারেট ক্লাসের একটি প্রজেক্ট থেকে তার নিজের বিশ্বাস আবিষ্কার করে। সে কিশোরীদের একটি গোপন ক্লাবে যোগ দেয়, সেখানে বালিশে চুম্বন কৌশল অনুশীলন করা শেখে। শেখে স্তন বড় করার ব্যায়াম। সে কামনা করে তার পিরিয়ড শুরু হবে–সে অধীর আগ্রহে অপেক্ষায় থাকে। নিরাশ হয়। পুরো উপন্যাসে মার্গারেট মাঝে মাঝে প্রার্থনা করে, "ঈশ্বর তুমি কি আছ? আমি, মার্গারেট"। কিন্তু ঈশ্বর তার প্রার্থনা শুনছেন না, তাই সে ক্রুদ্ধ হয় ঈশ্বরের সঙ্গে তার কথা বলা (প্রার্থনা) বন্ধ করে দেয়। উপন্যাসের শেষে, তার দীর্ঘ-প্রত্যাশিত পিরিয়ড হয় এবং মার্গারেট ঈশ্বরকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলে, "আমি জানি ঈশ্বর তুমি আছ। আমি জানি তুমি আমাকে ভুলবে না!"

নতুন ডকুমেন্টারি জুডি ব্লুম ফরএভারে, তিনি বর্ণনা করেছেন- কিভাবে তিনি সাধারণ একজন শহরতলির স্ত্রী, গৃহকর্মী এবং মায়ের ভূমিকায় নিজেকে মানিয়ে নিয়ে একজন সাহিত্যিক সুপারস্টারে পরিণত হয়েছেন। এক পর্যায়ে, ব্লুম প্রতি মাসে তরুণ পাঠকদের কাছ থেকে ২০০০ চিঠি পেতেন - যাদের মধ্যে অনেকেই তাঁর কাছে তাদের হৃদয় ঢেলে কথা বলতো।

ব্লুম বয়ঃসন্ধিকাল এবং বয়ঃসন্ধি নিয়ে মার্গারেটকে অনুসরণ করে, এবার একটি ছেলের দৃষ্টিকোণ থেকে আরেকটি বই লেখেন ‘Again, Maybe I Won't’।

ব্লুম তার লেখার জন্য অনেক পুরস্কার জিতেছেন, যার মধ্যে অন‌্যতম ১৯৯৬ সালে আমেরিকান লাইব্রেরি অ্যাসোসিয়েশন-এর মার্গারেট এ. এডওয়ার্ডস পুরস্কার। তরুণ ও প্রাপ্তবয়স্কদের সাহিত্যে অবদানের জন্য লাইব্রেরি অফ কংগ্রেসে ‘লিভিং লেজেন্ড’ লেখক হিসাবে স্বীকৃত হন। ন্যাশনাল বুক ফাউন্ডেশন পদক পান ২০০৪ সালে।

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন