প্রাক্তন মার্কিন প্রেসিডেন্ট রোনাল্ড রেগান ছিলেন পরিস্থিতির রকমসকম অনুযায়ী স্বভাবমতো মশকরা করতে বিশেষ পারদর্শী। সেই রসিকতা একবার চরমে পৌঁছোয়। লিখছেন দেবলীনা
![]() |
প্রাক্তন মার্কিন প্রেসিডেন্ট রোনাল্ড রেগন এবং সোভিয়েত ইউনিয়নের প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট মিখাইল গার্ভাচ্ভ |
আসলে, জাতির উদ্দেশে সাপ্তাহিক ভাষণ দেওয়ার আগে তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট রোনাল্ড রেগান মাইক্রোফোন পরীক্ষা করে নিচ্ছিলেন। পরীক্ষার সময় তিনি বলেন, “প্রিয় দেশবাসী-আমি আনন্দের সঙ্গে জানাচ্ছি আমি একটা আইন সই করেছি যাতে রাশিয়া চিরকালের জন্য নিষিদ্ধ দেশ হয়ে যাবে।” তখনই প্রেসিডেন্টের উপদেষ্টা মর্টন ব্ল্যাকওয়েল জানিয়ে দিয়েছিলেন যে তাঁর এই মন্তব্য নিছকই ‘ঠাট্টা’। তবে বিষয়টিকে তিনি কিন্তু হালকা করতে পারেননি।
বস্তুত, এর দু’বছর আগেই রেগান অঙ্গীকার করেছিলেন যে কম্যুনিজমকে তিনি ইতিহাসের আবর্জনা স্তূপে ছুঁড়ে ফেলে দেবেন। ঠান্ডা যুদ্ধের সময়টিতে রাশিয়ার বিরুদ্ধে আমেরিকা তখন এমনই সব একের পর এক হুমকি দিচ্ছিল। সে কারণে, প্রেসিডেন্ট রেগানের এই মশকরাকে রাশিয়া তারই অংশ হিসাবে দেখেছিল। ব্ল্যাকওয়েলের মত, মার্কিন রক্ষণশীলদের কাছে কম্যুনিজম ছিল ‘মানবতার চরম শত্রু’। আর রেগানের প্রতিশ্রুতি আমেরিকার রক্ষণশীলরা খুবই পছন্দ করতেন বলে দাবিও করেন তিনি।
পরিস্থিতির রকমসকম অনুযায়ী স্বভাবমতো মশকরা করতে বিশেষ পারদর্শী ছিলেন প্রাক্তন হলিউড চিত্রতারকা রেগান। আর ব্ল্যাকওয়েল তাঁকে এই ধরনের মশকরায় উপকরণ জোগাতেন। ইজরায়েলে সোভিয়েত শরণার্থীদের কাছ থেকে তিনি এধরনের নানা উপকরণ সংগ্রহ করতেন আর ইংরেজিতে অনুবাদ করে তা রেগানের হাতে তুলে দিতেন।
তবে বেশিরভাগ মানুষের কাছেই ঠান্ডা যুদ্ধ কোনও ঠাট্টা—তামাশার বিষয় ছিল না। রেগানের প্রথম মেয়াদে আমেরিকা আর সোভিয়েত ইউনিয়নের মধ্যে উত্তেজনা বাড়তে থাকে। দুই পরাশক্তির মধ্যে পরস্পরের বিরুদ্ধে তিক্ত অভিযোগ ও পাল্টা অভিযোগ ক্রমশ বাড়তে থাকে। সোভিয়েত শিশুদের মনে সবসময় একটা ভয় কাজ করত– আমেরিকা যদি তাদের ওপর পারমাণবিক হামলা চালায়! স্কুলে তাদের শেখানো হতো এধরনের বিপর্যয় ঘটলে কী করতে হবে।
আসলে সোভিয়েত নাগরিকদের বেশিরভাগেরই ওয়াশিংটনের হাবভাব সম্পর্কে কোনও ধারণা ছিল না–কোনটা নিয়ে তারা মজা করছে–কোনটা সিরিয়াসলি বলছে, সেটা বোঝা সত্যিই তাদের কাছে কঠিন ছিল। তাছাড়া সোভিয়েত নেতৃত্বের উপরেও দেশের মানুষ সেসময় তেমন ভরসা করতে পারছিলেন না। সে সময় তিন বছরে তিনজন সোভিয়েত নেতা প্রয়াত হয়েছেন। প্রেসিডেন্ট রেগানকে ঠাট্ট করে বলতে শোনা যেত “জানি না মস্কোর কোন নেতা এখন বেঁচে আছেন?–কার সঙ্গে আলোচনা করব?”
১৯৮৫র গোড়ার দিকে যখন ক্ষমতায় আসেন মিখাইল গরবাচভ, তখন দেশের মানুষ হাঁফ ছেড়ে বাঁচেন। কারণ তিনি ছিলেন অপেক্ষাকৃত কমবয়সি, সুস্থ। পরবর্তীকালে কম্যুনিজমের পতন ঘটে। তবে মর্টন ব্ল্যাকওয়েলের বিশ্বাস, এর জন্য কৃতিত্ব প্রাপ্য রোনাল্ড রেগানেরই। তবে সেবার রেগানের মস্করার প্রসঙ্গ ক্রমে হালকা হয়ে আসে। আমেরিকা সোভিয়েতে পারমানবিক হামলা চালায়নি।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন