মানস ভাণ্ডারী
সম্প্রতি প্রকাশিত হয়েছে স্মৃতিকণা রায়ের ‘নীল চোখ রহস্য’ গ্রন্থটি। চারটি অতিপ্রাকৃত বিষয়ভিত্তিক উপন্যাস নিয়ে এই গ্রন্থকায়া নির্মিত। উল্লেখ্য, ‘নাপৃথিবী’ নামাঙ্কিত গ্রন্থ–সিরিজের অন্তর্ভুক্ত ছিল এই সংকলনের উপন্যাসগুলি।
অপ্রাকৃত, অলৌকিক বিষয় সম্পর্কে মানুষের প্রশ্ন ও কৌতূহল চিরকালীন। এখনও পৃথিবীতে আপাত ব্যাখ্যাহীন নানা বিষয় ও ঘটনার সন্ধান পাওয়া যায়, যেগুলি আমাদের বিস্ময় ছাড়াও কখনও আতঙ্কিত অথবা অসহায়ও করে তোলে। বিজ্ঞান ও যুক্তিবাদী মন সেগুলির অনুসন্ধান এবং ব্যাখ্যাপ্রাপ্তিতে তৎপর হয়। কখনও ব্যাখ্যা মেলে, আবার কখনও রহস্যই থেকে যায় অজ্ঞাত অন্ধকার–কুয়াশায়।
বইটির চারটি উপন্যাসেই এই রহস্যময় অতিপ্রাকৃত ঘটনা ও চরিত্রের সন্ধান পাওয়া যায়। প্রধান চরিত্রগুলির কার্যাবলী আমাদের বিস্মিত করে, তাদের কেউ কেউ এই পৃথিবীর রক্তমাংসময় মানুষ নয়। সুচিত্রিত এইসব চরিত্র কিন্তু যথেষ্টই আকর্ষণীয় ও কৌতূহলকারী। উপন্যাসের ঘটনা ও চরিত্রগুলির প্রবাহ এবং অগ্রগতিতে স্বাভাবিক ভাবে অবশ্যই এগুলি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা গ্রহণ করেছে।
আধুনিক জীবন, সমাজ ও প্রেম প্রভৃতি এসেছে রচনাগুলির শরীরে। তবে মনোবিকলন কিন্তু এখানে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কখনও আশ্চর্য বা অলৌকিকত্বও যেন ছাপিয়ে গেছে মানসিক জটিলতাজনিত অনুভব–জগৎ।
রচনাগুলিতে বর্ণিত অস্বাভাবিক ঘটনাসমূহকে সবসময়ই অলৌকিকা বা রহস্যময় বলা যাবে না। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যাচ্ছে মানসিক সমস্যা থেকে উদ্ভূত আশ্চর্য দর্শন বা অনুভব। অতিকল্পনা প্রবণতার প্রভাবও বলা যায় ইত্যাকার ব্যাপারগুলিকে। তবে এই পৃথিবীতে যাদের বসবাস বা অস্তিত্ব নেই এমন কিছুর অনুভব এবং উপস্থিতি ঘটেছে উপন্যাস মধ্যস্থিত প্রধান চরিত্রের ক্ষেত্রে। কল্পজগতের মতো ঘটনা, দৃশ্য ও কার্যাবলীর মুখোমুখি হয়েছে তারা, সে সবের সঙ্গে যুক্ত হয়ে কখনও প্রায় সম্পৃক্তির অনুভবে পৌঁছে গেছে। পাশাপাশি অন্য চরিত্রগুলি তাতে প্রভাবিত না হয়ে যুক্তি, সহানুভূতি, সমাধান কিংবা ব্যাখ্যায় সচেষ্ট হয়েছে।
মোট চারটি উপন্যাস সংকলিত হয়েছে এই গ্রন্থে। সেগুলির নামকরণ যেমন সুন্দর, তেমনই কাহিনির বিষয়ানুগ— (১) স্বপ্নভঙ্গুরতা ও নিশাচরী, (২) তারাদের দেশে, (৩) নীল চোখ রহস্য, (৪) স্বপ্ন রোদ্দুর জংশন।
সবগুলি রচনাতেই পাঠক পেয়ে যান আশ্চর্য ও অনুপম নানান চরিত্রনাম। এই নামকরণগুলিতে যেন তাদের সমস্ত চরিত্রবৈশিষ্ট্যও নিহিত রয়েছে, ফলত অন্য কোনও নামে তাদের চিহ্নিত করা কখনওই যায় না। মেঘ, বৃষ্টি, সবুজ, ভূমি, রোদ্দুর, বিপাশা, বিয়াস প্রভৃতি নাম সুপরিকল্পিত, সফল এবং যথার্থ।
লেখক বিশ্বাস করেন, পালকে চড়ে অন্য পৃথিবীতে পাড়ি দেওয়া যায়। তাঁর ভালবাসা সেই পালক–বাহনের সাহায্যে পৌঁছে যায় অন্য গ্রহে। আমাদের আকাশের পরেও কি অন্য আরও দেশ আছে— এই জিজ্ঞাসায় আগ্রহী লেখক তাঁর গ্রন্থটি প্রসঙ্গে জানিয়েছেন, ‘প্রেম–ভালবাসা, নিষ্ঠুর বাস্তবতার পাশাপাশি অতিপ্রাকৃত, ভিনগ্রহী, অলৌকিক, অতিলৌকিক, ব্যাখ্যাতীত প্রভৃতি নানা ক্ষেত্র নিয়ে আমার চর্চা এবং অভিজ্ঞতা আমাকে অন্য ধরনের লেখালেখিতে উৎসাহ দিয়েছে। বলা যায়, সেই সূত্রেই আজ আমি লিখে চলেছি নানা ধরনের কাহিনি।’
গ্রন্থটিতে লেখকের এই আগ্রহ ও চর্চাজনিত প্রয়াস সফল হয়েছে সন্দেহ নেই।
নীল চোখ রহস্য / স্মৃতিকণা রায় / পারুল প্রকাশনী / মূল্য ২৫০ টাকা
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন