বইতন্ত্র ডেস্ক
অ্যানি অ্যারনোর সাহিত্যকর্ম মূলত আত্মজীবনীমূলক এবং এর সঙ্গে সমাজবিজ্ঞানের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক আছে। ২০২২ সালে তিনি সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার লাভ করেন। “ব্যক্তিগত স্মৃতির শেকড়, বিচ্ছেদ ও সামষ্টিক বাধাগুলি উন্মোচিত করার সাহস ও চিকিৎসকসম সূক্ষ্ণতা প্রদর্শনের জন্য” তাঁকে এই পুরস্কার প্রদান করা হয়ছে। বলেছে সুইডিশ কমিটি। জন্মনাম আনি দ্যুশেন। জন্ম ১লা সেপ্টেম্বর ১৯৪০। একজন ফরাসি লেখিকা ও সাহিত্যের অধ্যাপিকা। বিশ্ব সাহিত্যে খুব অল্প পরিচিত সেই লেখিকার সাহিত্যকর্ম কিন্তু অসীমতায় ভরপুর।
১৯৭৪ সালে ‘লে
জার্মোয়ার ভিদ’ (Les armoires vides) গ্রন্থটি প্রকাশের মাধ্যমে
সাহিত্যজগতে অ্যানি অ্যারনোর যাত্রা শুরু হয়। তবে তারকা হিসেবে তাঁর প্রকৃত উদয়
ঘটে ১৯৮৩ সালে। যে বছর তিনি তাঁর চতুর্থ গ্রন্থ ‘লা প্লাস’ (La place) বইটি প্রকাশ করেন। এই আত্মজীবনীভিত্তিক উপন্যাসটিতে
মাত্র ১০০ পৃষ্ঠায় অ্যানি তাঁর প্রয়াত বাবার জীবন ও যে সামাজিক পরিবেশে তাঁর
বাবার চরিত্র গঠন লাভ করেছিল, তার এক নিরাবেগ ছবি তুলে ধরেন।
অ্যানি এরপর ধারাবাহিকভাবে আরও অনেকগুলি আত্মজীবনীমূলক উপন্যাস লেখেন। তাঁর
রচনাশৈলী সরলতা, স্বচ্ছতা, সংযম ও
নৈতিকতা দ্বারা উদ্বুদ্ধ নান্দনিকতা দ্বারা চরিত্রায়িত করা হয়েছে। তাঁর লেখনী
নিরপেক্ষ ও নামহীন। এর কয়েক বছর পরে অ্যানি তাঁর মাকে উপজীব্য করে একই রকম,
আরও ছোট একটি গ্রন্থ লেখেন, যার নাম ‘উ্যন ফাম’ (Une femme)। যেখানে কল্পকাহিনী, সমাজবিদ্যা ও ইতিহাসের মেলবন্ধন ঘটিয়েছেন তিনি। এই দুটি বইয়ে অ্যানি সামাজিক
পরিবর্তন ও সামাজিক শ্রেণী আনুগত্যের পরিবর্তনের কারণে তাঁর প্রজন্ম ও তাঁর
বাবা-মায়ের প্রজন্মের সম্পর্কের টানাপড়েনের ব্যাপারটি তুলে ধরেন এবং এভাবে ফরাসি
সমাজে শ্রেণীবৈষম্যের ক্ষতটি পরোক্ষভাবে ফুটিয়ে তোলেন। ২০০০ সালে অ্যানির সাহিত্যিক জীবনের অন্যতম শ্রেষ্ঠ কর্মটি হল ‘লেভেনমঁ’ (L’événement)। এটিতে তিনি ডাক্তারি সংযমের সঙ্গে একটি ২৩ বছর বয়সী যুবতীর নিজ
দৃষ্টিকোণ থেকে একটি অবৈধ গর্ভপাতের কাহিনী বর্ণনা করেন। ২০২১ সালে এই উপন্যাসটিকে
ভিত্তি করে একই নামে একটি ফরাসি চলচ্চিত্র মুক্তি পায়।
২০০৮ সালে এরনো তাঁর সাহিত্যিক জীবনের সবচেয়ে উচ্চাভিলাষী কর্মটি
প্রকাশ করেন। সেটি ‘লেজানে’ (Les
années)। এই সাহিত্যকর্মটি তাঁর জন্য আন্তর্জাতিক
সুখ্যাতি ও বহু ভক্ত-অনুরাগী ও সাহিত্যিক শিষ্যের জন্ম দেয়। লেজানে-কে ‘প্রথম সামগ্রিক আত্মজীবনী’
নামে অভিহিত করা হয়েছে। জার্মান কবি ডুর্স গ্র্যুনবাইন এটিকে সমসাময়িক পশ্চিমী
বিশ্বের একটি নতুন পথ সৃষ্টিকারী ‘সমাজবৈজ্ঞানিক মহাকাহিনী’ হিসাবে প্রশংসা করেছেন।
অ্যানির সাহিত্যে ঐতিহাসিক ও ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার মিলন ঘটেছে। ‘লা প্লাস’ ও ‘লা ওঁত’ তাঁর বাবা-মার সামাজিক আরোহণ, ‘লা ফাম জ্যলে’ উপন্যাসে তাঁর বিয়ে, ‘পাসিওঁ সাঁপল’, ‘স্য পের্দ্র’ ও ‘লোক্যুপাসিওঁ’ উপন্যাসে তাঁর যৌনচেতনা ও প্রেম, ‘জুর্নাল দ্য দ্যঅর’, ‘লা ভি এক্সতেরিয়র’ উপন্যাসে তাঁর
চারপাশের পরিবেশ, ‘লেভেনমঁ’ গ্রন্থে
তাঁর গর্ভপাত, ‘জ্য ন্য সুই পা সর্তি দ্য মা নুই’ উপন্যাসে
তাঁর মায়ের অ্যালঝাইমার্স রোগ, ‘উ্যন ফাম’ উপন্যাসে
তাঁর মায়ের মৃত্যু, ‘ল্যুজাজ দ্য লা ফোতো’ গ্রন্থে
তাঁর নিজের স্তন ক্যানসার, ইত্যাদি ঘটনাগুলি সরাসরি বা পরোক্ষভাবে ফুটে উঠেছে।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন