সাহিত‌্যের নোবেল ফরাসী লেখিকা অ্যানি অ‌্যারনোর

বইতন্ত্র ডেস্ক

সাহিত‌্যে নোবেল পুরস্কারের জন‌্য একাধিকবার তাঁর নাম আলোচনায় উঠে এসেছে। প্রতিবারই হতাশ হতে হয়েছে তাঁর গুনমুগ্ধদের। শেষমেষ এবার তাঁরা উল্লসিত। সাহিত্যে এবছর নোবেল পুরস্কার পাচ্ছেন ফরাসি সাহিত্যিক অ্যানি অ‌্যারনো। বৃহস্পতিবার আনুষ্ঠানিক ভাবে তাঁর নাম ঘোষণা করা হয়েছে। ব্যক্তিগত স্মৃতি হাতড়ে যে সাহসিকতা এবং তীক্ষ্ণ দৃষ্টিভঙ্গির মাধ্যমে নিজের লেখায় শিকড়ের সংযোগ, বিচ্ছিন্নতা এবং সংযম উন্মোচন করেন তিনি, তার জন্যই এই সম্মান বলে জানানো হয়েছে। অতীতে একাধিকবার এই পুরস্কারের জন‌্য তাঁর নাম সুপারিশ করা হয়েছিল। ৮২ বছর বয়সী অ্যানিকে নিয়ে এখনও পর্যন্ত ১৭ জন মহিলা সাহিত‌্যে নোবেল পুরস্কার পেলেন। ১৯০১ সাল থেকে এখনও পর্যন্ত ১১৯ জন নোবেল সাহিত্য পুরস্কার পেয়েছেন। অ‌্যানি মেডেলের পাশাপাশি অর্থও পাবেন, ভারতীয় মুদ্রায় যার পরিমাণ প্রায় ৭.৫ কোটি টাকা। গত বছর সাহিত্যে নোবেল পান তানজানিয়ায় জন্মগ্রহণকারী আবদুলরজাক গুরনাহ। তিনি মূলত শরণার্থী সঙ্কট, নির্বাসন, ঔপনিবেশিকতা এবং বর্ণ-বিদ্বেষ নিয়ে লেখালেখি করেন।

সুইডিশ অ‌্যাকাডেমির পক্ষে প্রকাশিত বিবৃতিতে বলা হয়েছে,  ‘নিজের লেখায় বরাবর পৃথক দৃষ্টিকোণ তুলে ধরেছেন অ্যানি অ‌্যারনো। লিঙ্গ বৈষম্য, ভাষা, শ্রেণি সম্পর্কে গভীর পর্যবেক্ষণ ফুটে উঠেছে তাঁর লেখায়। সাহিত্যিক হিসাবে দীর্ঘ এবং কঠিন যাত্রাপথ পেরোতে হয়েছে তাঁকে।’ সেখানে আরও বলা হয়েছে যে, তাঁর লেখার ভাষা সহজ ও সরল, তবু লেখার সঙ্গে কখনও আপোষ করেননি অ‌্যানি। 

নোবেল প্রাপ্তির খবরে আপ্লুত অ‌্যানি ফ্রান্সের সাংবাদমাধ‌্যমে বলেছেন, ‘এই সম্মান পেয়ে অভিভূত আমি। এতে দায়িত্ব আরও বাড়ল।’ সুদীর্ঘ সাহিত্যজীবনে কুড়িটিরও বেশি বই লিখেছেন অ্যানি। গত কয়েক দশক ধরে ফ্রান্সের স্কুলেও পাঠ্যবই হিসেবে জায়গা পেয়েছে তাঁর সাহিত্যসৃষ্টি। অনেকে তাঁর সাহিত্যকর্মকে আধুনিক ফ্রান্সের সমাজজীবনের দর্পণ বলেও উল্লেখ করেন।

অ‌্যানির নোবেল পুরস্কার ঘোষণার পর নোবেল কমিটির ওয়েবসাইটে একটি পোল হয়। সেখানে জানতে চাওয়া হয়েছে, আপনি কি অ‌্যানি অ‌্যারনোর কোনও লেখা পড়ছেন? ভারতীয় সময় ১২টা ৩৭ মিনিট পর্যন্ত উত্তর এসেছে ৭,২১৮টি। সেখানে ‘হ‌্যাঁ’ জানিয়েছেন ৯৮২ জন (১৪ শতাংশ) আর ‘না’ বলেছেন ৬,২৩৬ জন (৮৬ শতাংশ)। অর্থাৎ, সাহিত‌্য কতটা জনপ্রিয় বা লেখক কতটা পরিচিত তা দিয়ে তার গুন বিচার হয় না। সেটাই আবার প্রমাণ করলেন অ‌্যানি। সৃষ্টির আনন্দেই যে সৃষ্টি তা অমূল‌্য। 

অ্যানির উপন্যাসগুলি মূলত আত্মজীবনীমূলক। তবে সাহিত‌্যের ‘আত্মকথন’ সংকীর্ণতাকে ছাড়িয়ে অনেক দূর পর্যন্ত পৌঁছে গিয়েছে তাঁর লেখনি। যৌনতা থেকে গর্ভপাত, অসুস্থতা থেকে বাবা-মায়ের মৃত্যু, কিছুই বাদ দেননি তিনি। তাঁর লেখার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল, ‘লা প্লেস’ (আ ম্যান’স প্লেস), তাতে বাবার সঙ্গে নিজের সম্পর্ক তুলে ধরেছেন তিনি। ‘লে আনিস’ (দ্য ইয়ার্স) বইয়ে আবার দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ থেকে বর্তমান সময়ে নিজের জীবনকেই তুলে ধরেছেন। এই ‘দ‌্য ইয়ার্স’ বইটিকেই তাঁর শ্রেষ্ঠ সাহিত‌্যসৃষ্টি হিসাবে মনে করা হয়। 

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন