![]() |
মা দশভূজা |
গার্গী বসাক
বাঙালির প্রাণের উৎসব শারদীয় দুর্গাপুজো ঘিরে রয়েছে বহু পৌরানিক কাহিনি। যেমন দেবীর দশভূজা হয়ে ওঠার কাহিনিও। ভারতের পূর্ব প্রান্ত আশ্বিনে যেমন আশ্বিনে মেতে থাকে দুর্গা পুজোয়, তেমনই পশ্চিম প্রান্তে গুজরাতে এই সময় মহা ধুমধাম পালিত হয় নবদুর্গা পুজো নবরাত্রি উৎসব। সেখানে মা দুর্গার দশভূজা নন। নয়টি দিনে পর পর নয় ধরনের বিভিন্ন সাজে ধরা দেন মা দুর্গা। নবদুর্গার এই নয়টি রূপ হল- শৈলপুত্রী, ব্রহ্মচারিণী, চন্দ্রঘণ্টা, কুষ্মাণ্ডা, স্কন্দমাতা, কাত্যায়নী, কালরাত্রি, মহাগৌরী, সিদ্ধদাত্রী। পুরাণ অনুযায়ী দেবীর এই নয় রূপের পুজো হয়ে থাকে।
মার্কণ্ডেয় পুরাণ অনুযায়ী, অসুরের তাণ্ডবে যখন সৃষ্টি ত্রস্ত, তখন তাঁকে দমনে কোনও পথ খুঁজে পাচ্ছিলেন না দেবতারা। কারণ মহিষাসুরের কাছে ছিল এক বিশেষ রক্ষা কবচ। যা খণ্ডন করতে পারতেন একমাত্র কোনও নারী, যিনি মনুষ্যশরীর থেকে তৈরি না হয়ে দেবতার তেজ থেকে জন্ম নিয়েছেন। সেই মতো প্রজাপতি ব্রহ্মার পরামর্শ মেনে বিভিন্ন দেবতার তেজ থেকে জন্ম নিল এক নারীমূর্তি। তাঁর মুখমণ্ডলে এল মহাদেবের তেজ, বাহুতে এল বিষ্ণুর তেজ, ব্রহ্মাহর তেজ এল পদযুগলে, রবির তেজ পায়ের আঙুলে, অগ্নির তেজ ত্রিনয়নে, বায়ুর তেজ এল কানে।
দেবী দুর্গার বাম দিকের হাতে পাঁচটি অস্ত্র রয়েছে। এগুলি হল ত্রিশূল, খড়গ, চক্র, বাণ, ধনুক। এই ধনুকে শক্তি অস্ত্র হিসাবে ধরা হয়। আর ডান দিকের পাঁচ হাতে থাকে, শঙ্খ, ঢাল, ঘণ্টা, অঙ্কুশ, নাগ পাশ। এই দশ হাতের দশ অস্ত্র দিয়ে অসুর দমনে একাই মহিয়সী হয়ে ওঠেন দেবী। কিন্তু যে দশ হাত এই দশ অস্ত্র ধারণ করে তা কীসের প্রতীক তা নিয়ে রয়েছে বহু জল্পনা।
শাস্ত্রজ্ঞরা বলছেন, 'দশপ্রহরণধারিনী' দেবীর দশ হাতের নেপথ্যে লুকিয়ে আছে এক প্রতীক। বলা হয়, একজন নারী যেমন বিবিধ শক্তির অধিকারী, তেমনই সেই আঙ্গিক মাথায় রেখেই দেবীর দশ হাত। শাস্ত্র মতে, দশ দিক সমানভাবে সামলানোর প্রতীক হলেন মহামায়া, মা দুর্গা। আর সেই থেকেই মায়ের দশ হাতের উদ্ভাবন। এই দশ দিক হল, উত্তর , দক্ষিণ, পূর্ব, পশ্চিম, ঈশান, বায়ু, অগ্নি, নৈঋত, ঊর্ধ্বঃ ও অধঃ। একজন নারী যেমন দশ দিক সামলাতে পুরুষের চেয়ে পটু, তেমনই সেই মহিলা রূপকে মাথায় রেখেই দুর্গার রূপ কল্পিত বলে বহু শাস্ত্রজ্ঞ ব্যাখ্যা দিয়ে থাকেন। একজন নারী যেমন একাধারে কন্যা, একদিকে স্ত্রী আবার একদিকে প্রেয়সী আর অন্যদিকে জননী। এই রুপের সঙ্গেই সংসারে সংহার মূর্তি ধারণ করে দুষ্টের দমনও করে নারী। সেই জায়গা থেকে দুর্গার দশ হাত দশদিকের প্রতীক।
x
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন