লন্ডনে মায়ের পুজোয় মমতার ভাবনা

লন্ডনের ক্রয়ডনে স্পন্দনের দুর্গাপুজো

এই আশ্বিনে বাংলা যেমন দুর্গাপুজোয় মেতে ওঠে, তেমনই বাংলার মাটি থেকে দূরে প্রবাসে থাকা আপামর বাঙালিও এই শারদীয় উৎসবে মেতে ওঠে। লন্ডনে বসবাসকারী বাঙালিরা বহুবছর ধরেই নিরবিচ্ছিনভাবে দুর্গাপুজোর আয়োজন করে থাকেন। ক্রমে সংখ্যাটা বাড়ল। তেমনই দক্ষিন-পূর্ব লন্ডনের ক্রয়ডনে পুজোর আয়োজন করে থাকে ‘স্পন্দন ক্রয়ডন বেঙ্গলি অ্যাসোসিয়েশন’। এই বছর স্পন্দনের পুজো সাত বছরে পড়ল। আয়োজকদের কথায়, "স্পন্দন-এর যেমন আক্ষরিক অর্থ হার্টবিট, তেমনই এই পুজোও আমাদের হৃদস্পন্দন।"

যখন শরতের পূর্ব আকাশে সূর্যালোকের ঘনঘটায় ও তৃণে-তৃণে শিশির বিন্দুর ছোঁয়া, সেই সময় প্রবাসেও সেই চিরচেনা এক স্নিগ্ধতা ছড়িয়ে পড়েছে। দেশে ঠিক যেমনটা কাশফুল আর শিউলির গন্ধ, নীল আকাশে পেঁজা তুলোর মতো মেঘ ভাসে, প্রবাসেও প্রতিটি বাঙালির মননে সেই তৃপ্তি অনুভূত হয়। এই আবেগে ভেসেই যখন আগমণীর সুরে দেবীপক্ষে মা দুর্গার মর্ত্যে আগমন, তখন দেশ-প্রবাস যেন একসুরে মাতৃবন্দনায় মেতে ওঠে। 


স্পন্দনের দুর্গাপুজোয় নারী শক্তি


করোনা অতিমারী আমাদের জীবন থেকে দুটো বছর কেড়ে নিয়েছে। বহু মানুষ তাদের প্রিয়জনকে হারিয়েছে। স্পন্দন-এর প্রার্থনা, আমরা যেন আর কোনও মহামারীর কবলে না পড়ি। পুজো উদ্যোক্তারা জানিয়েছেন,  এবছর ভারতের স্বাধীনতার ৭৫ বর্ষ উদযাপন। তাই ভারতমাতার সব বীর সন্তানদের শ্রদ্ধা জানানোর জন্য স্পন্দন এ বারের দুর্গাপুজোকেই বেছে নিয়েছে। তাই তাঁদের এ বারের পুজোর থিম স্বাধীনতার ৭৫ বছর পূর্তি। উদ্যোক্তাদের কথায়, স্পন্দন মনে-প্রাণে বিশ্বাস করে ‘ধর্ম যার যার, উৎসব সবার’। তাই সব মানুষের জন্য মায়ের সকল সন্তানের জন্য দ্বার অবারিত করেছে স্পন্দন। সন্তান না খেলে মা যেমন খেতে পারে না, তেমনই স্পন্দনে এসে কোনও দর্শনার্থী ভোগপ্রসাদ গ্রহণ না করে ফিরে যান না। উল্লেখ্য, গতবছর পুজোয় পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় স্লোগান দিয়েছিলেন- ‘ধর্ম যার যার, উৎসব সবার’। বাংলা ও দেশের সীমানা পার করে সেই স্লোগান ছড়িয়ে পড়েছে বিশ্বজুড়ে। যাতে বাঙলা ও বাঙালির সহিষ্ণুতার গর্ব রয়েছে।

কমিটির এক কর্মকর্তা বললেন, যখন প্রথম প্রবাসে পা রেখেছিলাম, এক অদ্ভুত দোলাচল ছিল মনের গভীরে। মনে হয়েছিল, পুজোকে মিস করবো। হয়তো শিশির ভেজা মাটির সুবাসে কাঙ্খিত পুজোর আমেজ কিংবা ঢাকের বাদ্যিতে কানে আর আগমনীর সুর বাজবে না। কিন্তু স্পন্দন মনে মধ্যে সেই মনখারাপ আসতেই দেয়নি। এক পরিবার হয়ে সবাইকে এক সুতোয় বেঁধে রেখেছে। অষ্টমীর দিন সন্ধিপুজোর অঞ্জলি দেওয়ার সময় মায়ের মুখের দিকে তাকালে ঠিক একইভাবে গায়ে কাঁটা দেয়। অন্তরাত্মা বলে ওঠে- এই তো আমাদের সেই মা, যাঁর বন্দনা হয় নিজের বাড়িতে বা পাড়ার প্যান্ডেলে আমরা ছোট থেকে করেছি নিজের দেশে। উৎসবে মেতেছি। প্রবাসেও উৎসবের গন্ধ এই শরতে। 

লন্ডন প্রতিনিধি

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন