মুখ্যমন্ত্রী তরুণ প্রজন্মের উদ্দেশ্যে বলেন, “কম্পিউটারে অনেক কিছু শেখা যায়, কিন্তু বইমেলায় আসুন। ঘুরে দেখুন।
এবারই প্রথম স্থায়ী মেলাপ্রাঙ্গন পেল কলকাতা বইমেলা। গতবছর এই ‘বইমেলা মেলাপ্রাঙ্গন’ নামকরণও করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। এদিন তিনি বলেন, “আয়োজকরা বইমেলার জন্য সকলের কাছে ঘুরেছেন। আজকের এই স্থায়ী ঠিকানার জন্য আমি তাঁদের অভিনন্দন জানাই। এখানে আয়োজনের জন্য মেলার আকর্ষণ এবং জায়গাও বেড়েছে। এটা একটা বড় প্রাপ্তি।” এদিন বইমেলার উদ্বোধনী মঞ্চে মুখ্যমন্ত্রীর ছটি নতুন বই প্রকাশিত হয়। এর মধ্যে রয়েছে তাঁর আগে লেখা ‘কবিতাবিতান’-এর ইংরেজি অনুবাদও। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “কাজের ফাঁকে লেখালেখি করি। ১২৮টি বই ইতিমধ্যেই বেরিয়ে গেছে।” মুখ্যমন্ত্রীর বইয়ের পাঠক রয়েছে। বিভিন্ন মহল থেকে প্রশংসার পাশাপাশি সমালোচনাও হয়েছে। কার্যত, সেই সমালোচনার জবাব দিয়ে এদিন মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “একটা উইপোকা কামড়ালে, সেটা দেখানো হয়। কিন্তু কেউ একজন ভাল বই লিখলে, সেটা দেখানো হয় না। এক জন ভাল গান গাইলে, সেটা নিয়ে পর্যালোচনা হয় না। কেন রাজনীতির লোক বই লিখতে পারে না? রাজনীতির লোক তখনই রাজনীতি করতে পারেন, যখন তিনি সামাজিক জীব হিসাবে নিজেকে আগে রক্ষিত করেন। সংস্কারে মন দেন।”
এরপরেই তিনি বলেন, “আমি অত্যন্ত ক্ষুদ্র মানুষ। আমার সবটাই কুৎসার আঙিনায়, অপপ্রচারের আলিঙ্গনে কোথাও কোথাও…কারোর কারোও পছন্দ নাও হতে পারে, না-ই হতে পারে। আমি তো সমালোচনার ঊর্ধ্বে নই। আমার সমালোচনা করলে আমি খুশি হই। কারণ তার থেকে আমি অনেক কিছু শিখতে পারি। সমালোচনার থেকে বড় জিনিস আর কী হতে পারে! যে তোমায় খারাপ বলে বলুক, তুমি খারাপ বলো না। তার মধ্যেও কাজের ফাঁকে বা কখনও কাজে ফাঁকি দিয়ে ১২৮টা বই আমার বেরিয়েছে। সেখানে ইংরাজি বইও আছে। এবার আমার কেবল ছ’টা বই বেরিয়েছে। আমার আরও ৪-৫টা বই লেখার কাজ চলছে।”
এদিন মুখ্যমন্ত্রী তরুণ প্রজন্মের উদ্দেশ্যে বলেন, “কম্পিউটারে অনেক কিছু শেখা যায়, কিন্তু বইমেলায় আসুন। ঘুরে দেখুন। আগে অন্য রাজ্যের লোক ভাবতেন, এটা আর কী, আমাদেরও তো মেলা হয়। কিন্তু আমি আজ অভিনন্দন জানাচ্ছি, অনেক রাজ্যের বইপ্রেমিক মানুষ এখানে এসেছেন। দিল্লি, উত্তরপ্রদেশ, অন্ধ্রপ্রদেশের বইপ্রেমিকরা এসেছেন। বিভিন্ন দেশ- স্পেন, ব্রিটেন, আমেরিকা, ফ্রান্স, ইটালি, রাশিয়া, অস্ট্রেলিয়া, জাপান, বাংলাদেশ, জাপান, আর্জেন্টিনা, কিউবা, কানাডা, ম্যাক্সিকো-সারা পৃথিবী আজ বিশ্ব বাংলায় এসে মিলিত হয়েছে।” তিনি মেলার সাফল্য কামনা করে বলেন, গত দুবছর কোভিড ছিল, তা সত্ত্বেও গত বছর ২৪ কোটি টাকার ব্যবসা হয়েছিল। প্রায় ২৩ লক্ষ মানুষ এসেছিলেন। এবার তো আর তাহলে কথাই নেই। উন্মুক্ত ময়দানে মুক্ত মানুষ আসবেন।
এদিন প্রখ্যাত সাহিত্যিক শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়কে সিইএসসি আরপিজি ‘সৃষ্টি সম্মান’-এ ভূষিত করা হয়। তাঁর হাতে এই সম্মান তুলে দেন মুখ্যমন্ত্রী। মুখ্যমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানিয়ে শীর্ষেন্দু বলেন, ‘ক্ষণিকের জন্য আলোকিত হওয়ার পেছনে থাকে হাড়ভাঙা পরিশ্রম।’
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আরও ছিলেন বিধানসভার স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়, মন্ত্রী শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়, বাবুল সুপ্রিয়, কবি সুবোধ সরকার, কলকাতা ও বিধাননগরের পুলিশ কমিশনাররা।
নিজস্ব প্রতিনিধি
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন