করুনাময়ী বাস টার্মিনাসের গায়েই ৮ নম্বর গেট। সেখান দিয়ে ঢোকা ও বেরনো, দুই-ই যাচ্ছে। গেটে বসানো দুটি মেটাল ডিটেক্টর গেট, এরপর আগতদের ব্যাগ ও সঙ্গে থাকা জিনিসপত্র হ্যান্ড মেটাল ডিটেক্টর দিয়ে আবার ভালভাবে পরীক্ষা করছেন দায়িত্বে থাকা পুলিশ কর্মীরা। মেলায় ঢোকামাত্র এই প্রান্তটা একটু বেশিই অন্ধকার। সেভাবে পর্যাপ্ত আলোর ব্যবস্থা করা যায়নি। হয়তো সময়মতো আলোর ব্যবস্থা হবে। উদ্বোধনের পর মঙ্গলবার ছিল ৪৬তম কলকাতা আন্তর্জাতিক বইমেলার প্রথম দিন।
এরমধ্যেই বইপ্রেমী, পাঠক ভীড় জমাতে শুরু করেছে মেলায়। কিন্তু এখনও সব প্রকাশনী ও বিক্রেতা স্টলে বই সাজানোর কাজ শেষ করতে পারেনি। অনেক স্টলে বই সাজানো হয়ে গেলেও ভিতরে ও বাইরে সাজসজ্জায় শেষ তুলির টান চলেছে। সোমবার বিধাননগরের ‘বইমেলা প্রাঙ্গনে’ ৪৬তম কলকাতা আন্তর্জাতিক বইমেলার উদ্বোধন করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দে্যাপাধ্যায়। চলবে ১২ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। গত কয়েক বছরের মতো এবারও বইমেলায় কোনও প্রবেশমূল্য নেই।
মেলার উদ্যোক্তা পাবলিশার্স অ্যান্ড বুকসেলার্স গিল্ডের তরফে জানানো হয়েছে, প্রায় ৭০০ ছোট বড় বইয়ের স্টল এবং ২০০ লিটল ম্যাগাজিন টেবিল এ বছর মেলায় রয়েছে। বহু নতুন ও ছোট ও মাঝারি প্রকাশকরা জায়গা পেয়েছেন বইমেলায়। মেলায় ঢোকা ও বেরনোর জন্য মোট ন’টি গেট দিয়ে। একটি তোরণ হচ্ছে স্পেনের তোলেদো গেটের আদলে। বাকি তোরণের মধ্যে আছে বিশ্ববাংলা গেট এবং শতবর্ষ উপলক্ষ্যে অগ্নিবীণা গেট। দ্বিশত জন্মবর্ষ উদযাপনে বইমেলায় দুটি হল হয়েছে মাইকেল মধুসূদন দত্ত এবং প্যারীচরণ সরকারের নামে। লিটল ম্যাগাজিন প্যাভিলিয়ন হয়েছে লেখক-সম্পাদক রমাপদ চৌধুরীর নামে। এবছর তাঁর জন্মশতবর্ষ। রয়েছে প্রেস কর্নার, মৃণাল সেন ও তরুণ মজুমদারের নামে দু’টি মুক্তমঞ্চ।
এবার বইমেলার থিম– ‘বিশ্ব বাংলা মিলিত হোক বিশ্ব বইমেলায়’। বাস্তবিকই গত কয়েকবছরে আন্তর্জাতিক কলকাতা বইমেলা ‘বিশ্ব-মিলন’ রূপ নিয়েছে। এবার বইমেলার ফোকাল থিম দেশ হিসাবে স্পেন তো রয়েইছে, তাছাড়াও আমেরিকা, রাশিয়া, কানাডা, ব্রিটেন, ফ্রান্স, ইটালি, আর্জেন্টিনা, কিউবা, মেক্সিকো,বাংলাদেশ, জাপান– সারা পৃথিবী আজ বিশ্ব বাংলায় এসে মিলিত হয়েছে।
মেলাপ্রাঙ্গনে বালি, প্যাচপ্যাচে মাটি নেই। পুরোটাই পাকা হয়ে গিয়েছে। জায়গাটা বড় বলে স্টলগুলো সাজানো গিয়েছে বেশ জায়গা ছেড়ে। প্রচুর লোক হলেও, সেভাবে ভীড়ের কষ্ট ভোগ করতে হবে না। আট নম্বর গেটের কথা বাদ দিলে মেলায় প্রচুর আলো। তবে কেউ কেউ ইন্টারনেট সমস্যার অভিযোগ করেছে। মেলায় সঙ্গতভাবেই জুটের সুন্দর সুন্দর ব্যাগের বেশকয়েকটা স্টল বসেছে। মানুষ বই কিনে বাড়ি নিয়ে যাওয়ার জন্য ব্যাগের খোঁজ তো করতেই পারে। তবে মেলার একটি অংশে শান্তিনেকতেন খোয়াই হাটের মতো গয়নাগাটি, পোড়াল মাটির ল্যাম্পশেড, ফ্রেমে বাঁধানো ছবি ইত্যাদি সাজিয়ে বসেছে অল্পবয়সী ছেলেমেয়েরা।
বইমেলায় পাশাপাশি রয়েছে ‘পশ্চিমবঙ্গ বাংলা অাকাদেমি’ আর ‘জাগোবাংলার’ বিশাল প্যাভেলিয়ন। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় দেখা গেল দুই জায়গাতেই ছোট-বড় মঞ্চে বাউলগান চলছে। তবে বইমেলার মাইকে আসলে কী গান বাজছে বা ঘোষণা চলছে, তা হারিয়ে যাচ্ছে এর মধ্যে। লিটিল ম্যাগের প্যাভেলিয়নে স্পিকারে কবিদের কবিতা পাঠও যেমন চলছে, তেমনই লতা মঙ্গেশকরের কণ্ঠে কোথা থেকে যেন পুুরানো আধুনিক গানও ভেসে আসছে।
হয়তো প্রথম দিন বলেই মেলার ভিতরের খাবার-দাবারের ব্যবস্থা সেভাবে হয়ে ওঠেনি। তাছাড়া বিধাননগর পুরসভা মেলার ভিতরে কোনও রান্নাবান্নার কাজ বন্ধ করে দিয়েছে। এরফলে যারা রান্না করা খাবারের স্টল দেওয়ার কথা ভেবেছিলেন, তাদের পরিকল্পনা এখন পাল্টাতে হচ্ছে। ফলে মেলার বাইরে করুনাময়ী বাস টার্মিনাসে স্থায়ী-অস্থায়ী চা-স্নাক্স-মুড়ি-ফুচকার দোকানের পোয়া-বারো। আকাশছোঁয়া দাম শুনে অবশ্য অনেকেই এড়িয়ে গিয়ে চা-বিস্কুট খেয়েই বাস ধরছেন।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন