জেল জীবন আমাকে যা সমৃদ্ধ করেছে, অভিজ্ঞ করেছে তা দুই মলাটে বন্দি করে ‘বন্দির ডায়েরি’ করেছি, বলছেন কুণাল ঘোষ।
'জীবনপথ বড়ই বিচিত্র'। মন্তব্য কুণাল ঘোষের।
বাস্তবিকই। তবে সাংবাদিক কুনাল ঘোষ (Kunal Ghosh) কেন একথা বললেন?
শনিবাসরীয় বইমেলা এক বিরল দৃশ্যের সাক্ষী থাকল।
তাঁরই অধীনে একসময় প্রেসিডেন্সি জেলে বন্দি থাকা কুনাল সে সময়ে তাঁর লেখা 'বন্দির ডায়েরি' বইটি তুলে দিলেন জেল সুপার দেবাশিস চক্রবর্তীর হাতে। সাহিত্য জগতে এমন ঘটনা শুধু বিরল নয়, নজিরবিহীনও বোধহয়।
আশ্চর্য সমাপতন! দেবাশিস চক্রবর্তী শনিবার এসেছিলেন কলকাতা বইমেলায়। পরিকল্পনা ছিল কিছু বই কেনার। তারমধ্যে কুনাল ঘোষের এই বইটিও ছিল। এদিন ওই সময়ে লেখক-পাঠক হিসাবে মেলায় ছিলেন কুণালও। হঠাৎ, তাঁদের দেখা হয়ে যায়। কুনাল জানতে পেরেই তাঁকে সঙ্গে নিয়ে প্রকাশনীর স্টলে নিয়ে গিয়ে বইটি তুলে দেন জেল সুপারের হাতে। তাঁর অনুরোধে বইতে সইও করে দেন। উল্লেখ্য, কুণালের বন্দিদশায় প্রেসিডেন্সির জেল সুপারের দায়িত্বে ছিলেন দেবাশিস চক্রবর্তী। পরে নানা জেলে বদলি হয়ে ঘুরে বর্তমানে ফের ওই প্রেসিডেন্সিরই দায়িত্বে তিনি।
দেবাশিসবাবু বলেন,‘‘আমি চিরকালই কুণাল ঘোষের লেখার ভক্ত। বন্দি হিসাবে আসার আগে থেকেই তাঁর লেখার সঙ্গে পরিচিত ছিলাম। পরে ব্যক্তি কুণালের সঙ্গে আলাপ হয়। এবং লেখালিখি চালিয়ে যেতে বলি।’’ বইটি সম্পর্কে কুণালকে প্রশ্ন করা হয়, অধিকাংশই তাঁদের জেলজীবন, অন্ধকার জীবনকে আড়াল করেন। গোপন রাখেন। আপনি কেন তা প্রকাশে্য লিখে বই করলেন?’’ উত্তরে কুণাল বলেন, ‘‘আমি কোনও অপরাধ না করেই জেলে গিয়েছিলাম, তাই কিছু গোপন করিনি। ওই জীবন আমাকে যা সমৃদ্ধ করেছে, অভিজ্ঞ করেছে তা দুই মলাটে বন্দি করে ‘বন্দির ডায়েরি’ করেছি। বাকিটা অবশ্যই পাঠকরা বিচার করবেন।’’
পরে ফেসবুকে কুনাল লেখেন, 'বিরল মুহূর্ত, বিচিত্র অভিজ্ঞতা। আমার 'বন্দির ডায়েরি' যাঁর হাতে দিলাম, ডায়েরি লেখার সময়ে সেই দেবাশিস চক্রবর্তীই ছিলেন প্রেসিডেন্সি জেলের সুপার। সেই বন্দিজীবনে ঘটনার ঘনঘটা, কিছু সংঘাতও। আজ তাঁর হাতেই তার সংকলন। বিচিত্র মুহূর্ত। সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে দেবাশিসবাবু বললেন, "আমি কিন্তু বন্দিজীবনের অনেক আগে থেকে কুণালবাবুর লেখার অনুরাগী। আমি চাই ওটাই ওঁনার অগ্রাধিকার হোক।"
এক দশক আগে ফিরে যান কুনাল। বলেন, এই এক মজার যাত্রাপথ। ২০১২ সালে আমি দিল্লিতে সাংসদ পদে শপথের পর রাতে বঙ্গভবনে ঘুমোচ্ছি। বেল বাজল। আগন্তুক বললেন, "রাজ্য সরকারি অফিসার। আপনার লেখার পাঠক। শুভেচ্ছা জানাতে আলাপ করলাম। আমি দেবাশিস চক্রবর্তী।" কী আশ্চর্য, পরে ২০১৫ সালে আমি যখন প্রেসিডেন্সি জেলে, তিনিই এলেন সুপার হয়ে। আজ ২০২৩ সালে বইমেলায় তাঁর হাতে দিলাম 'বন্দির ডায়েরি', যেখানে তিনিও একটি চরিত্র।
জীবনপথ বড়ই বিচিত্র।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন