এবার ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রোর সুবাদে ফের পুনর্মিলন। উত্তর ও দক্ষিণ শহরতলীর বইপ্রেমীরা শিয়ালদহ নেমে মেট্রো ধরে অল্প সময়ে ও অল্প খরচে করুণাময়ী মেট্রো স্টেশনে চলে আসতে পারবেন।
দীর্ঘ ১৭ বছর পর ফের কলকাতা আন্তর্জাতিক বইমেলার (International Kolkata Book Fair 2023) সঙ্গে জুড়ছে মেট্রোরেল। আবার বইপ্রেমিদের কোলাহলে মুখরিত হবে শহরের ভূগর্ভ রেলপথ। আর মাত্র কয়েকটা দিনের অপেক্ষা। তারপরই শুরু হয়ে যাবে ৪৬ তম কলকাতা আন্তর্জাতিক বইমেলা। এই বছরও বিধাননগরের ‘বইমেলা প্রাঙ্গনে (সেন্ট্রাল পার্ক) হবে বইমেলা। আন্তর্জাতিক বইমেলার ক্যালেন্ডার অনুযায়ী ৩০ জানুয়ারি উদ্বোধন হবে কলকাতা বইমেলার। এবারের থিম কান্ট্রি স্পেন। তবে বহুবছর পর ময়দানে থেকে কলকাতা বইমেলা বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর, এবারই বইপ্রেমীরা সরাসরি মেট্রোয় চড়ে বইমেলায় আসতে পারবেন। যোগাযোগের এই সুবিধার জন্য এ বার আরও বেশি মানুষ মেলার আসতে পারবেন বলে মনে করা হচ্ছে। এবার প্রথম ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রোর সুবিধা পাওয়া যাবে। গিল্ডের পক্ষ থেকে রবিবারও মেট্রো চালানোর জন্য আবেদন করা হয়েছে।
১৯৭৬ সালের ৫ মার্চ প্রথম কলিকাতা পুস্তকমেলা আয়োজিত হয়েছিল। সে বার মেলা চলেছিল ১৪ মার্চ অবধি। সেন্ট পলস ক্যাথিড্রাল-বিড়লা তারামণ্ডলের উল্টোদিকের মাঠে (বর্তমানে মোহরকুঞ্জ উদ্যান) এই মেলা আয়োজিত হয়েছিল। পরে প্রকাশকের অংশগ্রহণ ও বইপ্রেমীদের সংখ্যা ক্রমাগত বাড়তে থাকলে মেলা চলে আসে ময়দানে। ২০০৭ সালে পরিবেশ রক্ষা সংক্রান্ত একটি মামলার পরিপ্রেক্ষিতে ময়দানের পরিবর্তে বিধাননগরের যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গণ-সংলগ্ন একটি অপেক্ষাকৃত ছোটো মেলাপ্রাঙ্গণে বইমেলার আয়োজন করা হয়। ২০০৮ সালে একই ধরনের একটি মামলার পরিপ্রেক্ষিতে উদ্বোধনের আগের দিন মেলা বন্ধ হয়ে যায়। মেলার প্রাথমিক আয়োজন সেবার করা হয়েছিল পার্কসার্কাস ময়দানে। আনুষ্ঠানিকভাবে মেলার উদ্বোধন করা হলেও, সেবার প্রাতিষ্ঠানিকভাবে ‘কলকাতা পুস্তকমেলা’র আয়োজন করা হয়নি। বরং মার্চ মাসে ‘বইমেলা ২০০৮’ নাম দিয়ে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের ক্রীড়া ও যুবকল্যাণ বিভাগের উদ্যোগে ও গিল্ডের সহযোগিতায় একটি মেলার আয়োজন করা হয়। কলকাতা পুস্তকমেলার ইতিহাসে এটি ছিল এক নজিরবিহীন ঘটনা। ২০০৯ সালে কলকাতা পুস্তকমেলা স্থানান্তরিত হয় সায়েন্স সিটির বিপরীতে সেই বহুপ্রস্তাবিত মিলন মেলায়।
ময়দান বা মিলনমেলার পর ২০১৮ সালে সল্টলেকের সেন্ট্রাল পার্কে কলকাতা বইমেলা শুরু হয়। তবে শহরতলী থেকে সরাসরি ট্রেন যোগাযোগ না থাকায় ভীষণ অসুবিধায় পড়তে হত মেলায় আসা মানুষজনকে। নিকটবর্তী রেলওয়ে স্টেশন উল্টোডাঙ্গ বা বিধাননগর স্টেশনের উপর চাপ পড়ত যেমন, তেমনই সেখান থেকে সেন্ট্রাল পার্কে আসতে বা ফিরতে যানবাহনের সমস্য হত। অটোগুলো যে যার মতো আকাশছোঁয়া ভাড়া হাঁকতো। এবার সেই সমস্যার অনেকটাই সুরাহা হবে বলে মনে করা হয়।
ময়দানে বইমেলা থাকার সময় দক্ষিণ শহরতলী থেকে আসা বইপ্রেমীরা টালিগঞ্জ থেকে মেট্রো চেপে বইমেলায় আসতে পারতো। উত্তরের লোকজন দমদম থেকে মেট্রো চেপে ময়দানে আসতো। সে সময় বইমেলার সুবাদে মেট্রোরেলেরও রেকর্ড সংখ্যক যাত্রী হত। তারপর সতেরো বছর বইমেলার সঙ্গে মেট্রোর, কলকাতাক লাইফলাইনের বিচ্ছেদ ঘটে।
এবার ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রোর সুবাদে ফের পুনর্মিলন। উত্তর ও দক্ষিণ শহরতলীর বইপ্রেমীরা শিয়ালদহ নেমে মেট্রো ধরে অল্প সময়ে ও অল্প খরচে করুণাময়ী মেট্রো স্টেশনে চলে আসতে পারবেন। তবে ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রোর শনি ও রবিবার পরিষেবা নেই। অথচ, ওই দুই দিনই মেলায় সর্বাধিক জনসমাগমের আশা করা হয়। কলকাতা অান্তর্জাতিক বইমেলার আয়োজক বুকসেলার্স অ্যান্ড পাবলিশার্স গিল্ডের পক্ষে শনি ও রবিবার মেট্রো সার্ভিস চালু রাখার জন্য মেট্রো কর্তৃপক্ষের কাছে অনুরোধ জানানো হয়েছে।
দেবলীনা
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন