যখন এই দশকের সবচেয়ে বিস্ফোরক আত্মজীবনীটি লেখার কথা ওঠে, প্রিন্স হ্যারি ৫৮ বছর বয়সী এই প্রখ্যাত সাংবাদিক এবং পুলিৎজার বিজয়ী লেখকের স্মরণাপন্ন হন।
দ্বৈপায়ন কর
প্রিন্স হ্যারির বহু আলোচিত বই 'স্পেয়ার' অবশেষে বুকসেলফে এল। বইটি প্রকাশের আগে এর
কিছু অংশ স্পেনের সংবাদমাধ্যমে ফাঁস হয়ে যায়। তাতেই ব্রিটিশ রাজপরিবারে সদস্যের
আত্মজীবনীমূলক বইটি বিতর্ক উস্কে দেয়। খুব স্বাভাবিকভাবেই বইটি আনুষ্ঠানিক প্রকাশে
তা আরও তীব্র হয়েছে। কিন্তু এই বইয়ের অন্তরালে
একজনের ভূমিকা কোনও আলোচনায় সেভাবে নেই। অবাক লাগছে? নামটির সঙ্গে বিশ্ব
পাঠক কূল অতি পরিচিত। তিনি আর কেউ নন, জে আর মোহোরিঙ্গার।
যখন এই দশকের সবচেয়ে বিস্ফোরক আত্মজীবনীটি লেখার
কথা ওঠে, প্রিন্স হ্যারি ৫৮ বছর বয়সী এই প্রখ্যাত
সাংবাদিক এবং পুলিৎজার বিজয়ী লেখকের স্মরণাপন্ন হন। হ্যারির আস্থা ছিল তিনি
ব্রিটিশ রাজপরিবারে বেড়ে ওঠার বিষয়ে তার অনুভূতিগুলি যথাযথভাবে প্রকাশ করবেন।
কে এই জে আর মোহোরিঙ্গার?
মার্কিন লেখক তথা 'ঘোস্ট রাইটার' জন জোসেফ মোহরিঙ্গার, যিনি জে আর মোহরিঙ্গার নামে তার কলম নামে
লেখেন, তাকে হ্যারির ৪১৬-পৃষ্ঠার স্মৃতিকথা 'স্পেয়ার' লেখার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। জানা
গিয়েছে যে বইটিতে দুজন ‘সহযোগীতা করেছেন’ এবং বইটি হ্যারির দৃষ্টিকোণ থেকে 'ফার্স্ট পার্সন' হিসাবে লেখা হলেও, সম্ভবত মোহরিঙ্গার হ্যারির সঙ্গে জীবনের বিভিন্ন ঘটনা ও অভিজ্ঞতা নিয়ে বিশদে
বারবার আলোচনার পরে বইটি লিখেছেন।
মোহোরিঙ্গার দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমস ও লস আঞ্জেলেস
টাইমস ছাড়াও আরও কতগুলি সংবাদপত্রে কাজ করেছেন। লস এঞ্জেলেস টাইমসে থাকার সময় তিনি
১৯৪৫ থেকে ১৯৫৭ আমেরিকায় সাড়া ফেলে দেওয়া বব 'বম্বারডিয়ার' স্যাটারফিল্ড-এর উপর একটি আর্টিকেল লেখেন। এই কাজটির জন্য তিনি ফিচার রাইটিং
বিভাগে পুলিৎজার পুস্কারের জন্য চূড়ান্ত পর্বে মনোনীত হন। তবে এই পুরস্কার পেতে
তাঁকে আরও দু'বছর অপেক্ষা করতে হয়। আলবেনিয়ার বিভাজন
নিয়ে লেখা আর্টিকেল 'ক্রসিং ওভার-এর জন্য ২০০০ সালে তিনি পুলিৎজার
পুরস্কার পান। মোহোরিঙ্গার ২০১২ সালে লেখেন উপন্যাস 'সাটোন'- কুখ্যাত মার্কিন ব্যাঙ্ক দস্যু উইলি
সাটোনের জীবন অবলম্বনে।
একজন ঘোস্ট রাইটার বই, চিত্রনাট্য, নিবন্ধ, বক্তৃতা, গান এবং আরও অনেক
কিছু লেখেন যা পরে অন্য লেখককের নামে প্রকাশিত হয়। অনেক ঘোস্ট রাইটার গোপনীয়তা
চুক্তিতে স্বাক্ষর করে যে তাঁরা আড়ালেই থাকবেন। যদিও কখনও কখনও স্বীকৃতিতে ‘গবেষক’
হিসাবে কৃতিত্ব লাভ করতে পারেন তাঁরা। বেশিরভাগ সেলিব্রিটি আত্মজীবনী ঘোস্ট
রাইটারদের দ্বারা লেখা হয় এবং বিখ্যাত এবং জনপ্রিয় লেখকদের স্টাইলে লেখার জন্য
লেখকদের নিয়োগ করা সাহিত্য জগতে একটি সাধারণ ব্যাপার। থ্রিলার লেখক টম ক্ল্যান্সি
এবং ০০৭-এর স্রষ্টা ইয়ান ফ্লেমিং উভয়েরই নামে প্রকাশিত বই রয়েছে যা ঘোস্ট
রাইটারদের দ্বারা লিখিত।
এই বিষয়টি শুধুমাত্র সাহিত্য জগতেই সীমাবদ্ধ নয়। সঙ্গীত কিংবা শিল্পের জগতেও এমন ঘোস্ট রাইটার রয়েছে। সৃষ্টির জন্য কৃতিত্ব পায় একজন, আর আড়ালে থেকে যান প্ৰকৃত স্রষ্টা।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন