বইমেলায় বৃষ্টির শব্দ শুনছেন উপমন্যু!

উপমন্যু রায়ের পাঁচটি উপন্যাস নিয়েই দুই মলাটে পারুল প্রকাশনী প্রকাশ করেছে ‘তার পর বৃষ্টির শব্দ’। 

বইমেলায় বৃষ্টির শব্দ শুনছেন উপমন্যু!

এবারের
কলকাতা বইমেলায় এখনও বৃষ্টি হয়নি। বরং ঝলমলে রোদ আছে। মাঝে মাঝে ঠান্ডা হাওয়াও বইছে। আছে ধুলোও। শেষ শীতের আমেজে মেলা বেশ জমে গিয়েছে। অথচ এরই মধ্যে বৃষ্টির কথা বলছেন উপমন্যু। মানে উপমন্যু রায়। শুধু বলছেনই না, তিনি নাকি এরই মধ্যে শুনে ফেলেছেন বৃষ্টির শব্দও। তা রিমঝিমই হোক, বা ঝমঝমিয়ে।

আর সে কথাই তিনি বইমেলায় বলছেন পাঠকদের। বলছেন কোনও রকম ভনিতা না করে বা রাখঢাক না রেখেই।

এবারের বইমেলায় পারুল প্রকাশনীর নিবেদন উপমন্যু রায়ের ‘তার পর বৃষ্টি শব্দ’।

আর এই বইটিতে রয়েছে উপমন্যুর লেখা পাঁচটি উপন্যাস। উপন্যাসগুলি হল তার পর বৃষ্টির শব্দ, স্বপ্ন শূন্যতা এবং, অন্ধকার আরও, রিরংসা এবং আমার হাত ধরে তুমি নিয়ে চলো সখা। উপন্যাসগুলি বিভিন্ন সময় বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছিল। প্রকাশের পর উপন্যাসগুলি পাঠক মহলে সমাদৃত হয়েছিল। অনেক উপন্যাস সমালোচক মহলেরও প্রশংসা আদায় করে নিতে পেরেছিল।

বইয়ের প্রথম উপন্যাস ‘তার পর বৃষ্টির শব্দ’। উপন্যাসটি প্রথম প্রকাশিত হয় নবকল্লোল পত্রিকার ১৪২২ বঙ্গাব্দের শ্রাবণ (‌ইংরেজি ২০১৫ সালের জুলাই)‌ সংখ্যায়। প্রকাশের পর নবকল্লোলের পাঠকদের মধ্যে উপন্যাসটি বেশ জনপ্রিয় হয়। এই মোবাইল–ইন্টারনেটের যুগেও একটি চিঠি কী করে পিতৃমাতৃহীন একটি নিঃসঙ্গ সরকারি চাকুরে ছেলেকে বিভ্রান্ত করে এবং শেষ পর্যন্ত তাকে কোথায় পৌঁছে দেয়, সেই কাহিনিই যথেষ্ট মুন্সিয়ানার সঙ্গে পাঠকদের বলেছেন উপমন্যু। উপন্যাসের শেষে দাবদাহ কাটিয়ে বৃষ্টি নামে, স্নিগ্ধ হয় জীবন। স্বস্তির নিশ্বাস ফেলে পাঠকও।

বইটির দ্বিতীয় উপন্যাস ‘স্বপ্ন শূন্যতা এবং’। ২০১৫ সালে আজকের অন্যতমা পত্রিকার শারদ সংখ্যায় এই উপন্যাসটি প্রকাশিত হয়। এই উপন্যাসটি সেই সময় সমালোচকদেরও প্রশংসা আদায় করে নিয়েছিল। এক বাঙালি তরুণের বেকারত্ব, জীবন সংগ্রাম আর নানা অভিজ্ঞতার কথা যথেষ্ট আন্তরিকতার সঙ্গে উপমন্যু পাঠকদের বলেছেন। সেই সঙ্গে বলেছেন প্রেমহীন বিয়ে, আবার বিয়েহীন প্রেমের কথাও। সব মিলিয়ে উপন্যাসটি অন্য রকম।

বইয়ের তৃতীয় উপন্যাস ‘অন্ধকার আরও’ প্রকাশিত হয় নবকল্লোল পত্রিকার ১৪২৩ বঙ্গাব্দের কার্তিক (‌ইংরেজি ২০১৬ সালের অক্টোবর)‌ সংখ্যায়। এই উপন্যাসে এমন এক বাঙালি তরুণের কথা বলেছেন উপমন্যু, যে বেসরকারি চাকরি করে, কিন্তু সেই চাকরি ধরে রাখতে পারে না। বারবার তার চাকরি চলে যায়। শেষে সে অদ্ভুত একটা কাজ পায়। সেই কাজের সূত্রে নিজের অজান্তেই জড়িয়ে পড়ে অন্ধকার জগতের সঙ্গে। সেই জগতেরই একটি মেয়েকে তার খারাপ লাগে, আবার ভালোও লাগে। পরিণতিটা এখানে না বললেও চলবে।

এই বইয়ের চতুর্থ উপন্যাস ‘রিরংসা’। এই উপন্যাসটি বিভিন্ন রূপে তিনবার প্রকাশিত হয়। ধারাবাহিক হিসেবে প্রথম ছাপা হয় আমেরিকা এবং ভারত থেকে যৌথ ভাবে প্রকাশিত উৎসব পত্রিকায়। ২০১১ সালে মে–জুন, জুলাই–অগস্ট, সেপ্টেম্বর–অক্টোবর এবং নভেম্বর–ডিসেম্বর সংখ্যায়। মানে মাত্র চারটি সংখ্যায়। সেই সময় উপন্যাসটির নাম ছিল ‘‌অন্ধকারের পিছনে’। উপন্যাসটি তখন আকারে ছিল অনেকটাই ছোট। তাই সেটিকে উপন্যাস না বলে উপন্যাসিকা বলা যেতে পারে। এর পর এই কাহিনির পরিবর্তিত রূপ প্রকাশিত হয় রংমিলান্তী পত্রিকার ২০১৬ সালের শারদ সংখ্যায়। শেষ পর্যন্ত উপন্যাসটি বর্তমান আকারে ২০২১ সালে অভিষিক্তা পত্রিকার শারদ সংখ্যায় প্রকাশিত হয়। তখন উপন্যাসটির নতুন নাম হয় ‘রিরংসা’। এই উপন্যাসের প্রধান তিন চরিত্র হল গৌতম, অহল্যা এবং ইন্দ্র। উপন্যাসটিতে উপমন্যু যেন পুরাণকে এই উত্তর–আধুনিক যান্ত্রিক সময়ে মেলাতে চেয়েছেন।

বইটির শেষ উপন্যাস ‘আমার হাত ধরে তুমি নিয়ে চলো সখা’। এই উপন্যাসটি প্রথমে উপন্যাস ছিল না। ছিল একটি গল্প। উৎসব পত্রিকার ২০১১ সালের শারদ সংখ্যায় এটি গল্প হিসেবেই প্রকাশিত হয়। তবে গল্পটি পাঠক মহলে জনপ্রিয় হয়। অনেকে জানান, গল্পটির কাহিনিতে উপন্যাসের ইঙ্গিত রয়েছে। তাই অনেকেই কাহিনির আরও বিস্তার ঘটাতে চেয়ে লেখকের কাছে অনুরোধ করেন। লেখক তা গোপনও করেননি। পাঠকের দাবি মেনে শেষ পর্যন্ত গল্পটিকে উপন্যাসের আকার দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। এর পর উপন্যাস হিসেবে এই গল্প ধারাবাহিক ভাবে প্রকাশিত হয় একটি আন্তর্জাতিক অনলাইন সংবাদ মাধ্যমে। ‌‌২০২০ সালের ২৭ নভেম্বর বেলজিয়াম থেকে প্রকাশিত দৈনিক প্রত্যয় পোর্টালে উপন্যাসটি প্রকাশিত হতে শুরু করে। মোট ১১ পর্বে প্রকাশিত হয়। শেষ পর্বটি প্রকাশিত হয় ২০২১ সালের ১৫ জানুয়ারি। এই উপন্যাসে উপমন্যু অত্যন্ত দরদ দিয়ে মধ্যবিত্ত বাঙালি তরুণের চিরন্তন সংগ্রাম, ক্ষয়ে যাওয়া, হারিয়ে যাওয়া এবং শেষে পথ খুঁজে পাওয়ার কাহিনি বলেছেন। কাহিনির নানা সময়ে পাঠককে নানা ভাবনায় নিয়ে যান তিনি।

এবার এই পাঁচটি উপন্যাস নিয়েই দুই মলাটে পারুল প্রকাশনী প্রকাশ করেছে ‘তার পর বৃষ্টির শব্দ’। বইটির প্রচ্ছদ প্রণব হাজরার। পাঁচটি কাহিনির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে নিঃসন্দেহে এটি তাঁর অসাধারণ কাজ।

তার পর বৃষ্টির শব্দ

লেখক : উপমন্যু রায়

প্রকাশক : পারুল প্রকাশনী (‌স্টল নম্বর ৩৭৮)‌

মূল্য : ৩০০ টাকা

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন