কলকাতা বইমেলায় আপনার প্রথম বইটি প্রকাশ করতে চাইছেন? আপনাকে আগাম অভিনন্দন। শুধু ভালো গল্প-প্রবন্ধ-কবিতা লিখতে পারলেই হল না। আপনাকে বই প্রকাশ সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারণাও রাখতে হবে। এখানে প্রাথমিক কিছু ধারণা দিল বইতন্ত্র টিম।
বেশিরভাগ লেখক তাঁদের বই প্রকাশের জন্য কলকাতা বইমেলাকেই বিশেষভাবে বেছে নেন। প্রথম বই হলে তো কথাই নেই। বলা হয়ে থাকে, প্রথম বই প্রথম সন্তানের মতো। কলকাতা বইমেলার আগে হাতে আর মাত্র মাস ছয়েক বাকি। এখনই বইমেলায় নতুন বই প্রকাশের জন্য প্রকাশকদের ঘরে চূড়ান্ত ব্যস্ততা। পাণ্ডুলিপি নেওয়ার কাজ শুরু হয়ে গিয়েছে। এরপর ঝাড়াই-বাছাই পর্ব। বেশ কয়েক ধাপ পার করে বইমেলার স্টলে পৌঁছবে বই। যে লেখকরা আগামী বইমেলায় প্রথম বই প্রকাশের পরিকল্পনা করেছেন, তাঁদের জন্য কিছু বিষয় নিয়ে এখানে আলোচনা করা হল।
একটি উত্তমমানের বই প্রকাশের জন্য লেখককে প্রথমে একটি পাণ্ডুলিপি লিপি তৈরি করতে হবে। পাণ্ডুলিপি তৈরির সময় যতটা সম্ভব নির্ভুল বানানের দিকে খেয়াল রাখতে হবে। অস্বীকার করা উপায় নেই, খুব কম লেখকই আছেন, যিনি একশো ভাগ শুদ্ধ বানানে একটি পাণ্ডুলিপি তৈরি করতে পারেন। পাণ্ডুলিপি শুদ্ধ করার দায়িত্ব প্রকাশকের হলেও, লেখকেরও দায়িত্ব থাকা ভাল। লেখকের দেওয়া পাণ্ডুলিপি নির্ভুল করার জন্য প্রকাশক প্রুফরিডারের সাহায্য নিয়ে থাকেন। সেটি ছাড়াও পাণ্ডুলিপিটির ভাষা সম্পাদনার জন্য একজন দক্ষ সম্পাদকের প্রয়োজন। অবশ্য বেশিরভাগ প্রকাশনা সংস্থার দক্ষ সম্পাদক না থাকায় প্রুফরিডারই সেই কাজটি করে থাকেন। মাধ্যমে এই কাজটি করে থাকেন। সম্পাদনার সুবিধা থাকলে বইয়ের মান অনেক গুন বাড়ে।
বইটি কেমন হবে, কত পৃষ্ঠা হবে, কী ধরনের কাগজ ব্যবহার করা হবে, প্রচ্ছদ কেমন হবে– এসব বিষয় প্রকাশক ও লেখক মিলে সিদ্ধান্ত নেবেন। এই ক্ষেত্রে লেখকের ধারণা থাকলে প্রকাশকের কাজটা সহজ হয়ে যায়। লেখককেই নিশ্চিত করতে হবে বইটি কত পৃষ্ঠার হবে। যেমন ধরুন, অনেক লেখক বলে থাকেন, তাঁর ৫০টি কবিতা আছে, তিনি একটি বই প্রকাশ করতে চান। অর্থাৎ, এই লেখকের বইয়ের পৃষ্ঠা বা ফরমা সম্পর্কে কোনও ধারণা নেই। থাকলে বলতেন যে, তিনি ৪৮ পৃষ্ঠা বা ৬৪ পৃষ্ঠা অথবা ৮০ পৃষ্ঠার একটি বই প্রকাশ করতে চান। এই যে ৪৮ পৃষ্ঠা, ৬৪ পৃষ্ঠা বা ৮০ পৃষ্ঠা বলা হলো কেন? এর কারণ হচ্ছে প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানগুলো ফরমা হিসেবে বই ছাপেন।
ফরমা কী? মনে রাখুন সাড়ে ৮ ইঞ্চি বাই সাড়ে ৫ ইঞ্চি সাইজের বইয়ে ১৬ পৃষ্ঠায় এক ফরমা হয়। এই মাপটিকে বুক সাইজ বলা যায়। এই বিষয়টি জানা থাকলে একজন লেখক প্রকাশককে বলতে পারবেন যে, তিনি বুক সাইজ ৬৪ পৃষ্ঠার একটি বই প্রকাশ করতে চান। সে অনুযায়ী লেখককে তাঁর লেখা তৈরি করতে হবে। প্রকাশক তখন লেখককে জিজ্ঞেস করতে পারেন কতগুলো বই প্রকাশ করবেন। প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান ১০০ কপি থেকে ১০০০ কপি পর্যন্ত প্রিন্টিং চার্জ (ছাপার খরচ) একই রকম ধার্য করে। এরপর বাঁধাইয়ের বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ। বই বাঁধাইতে শক্ত কাগজের বোর্ড ব্যবহার করা হয়। এইগুলো আবার গ্রেড অনুযায়ী হয়ে থাকে। ভালো মানের বই বোর্ড ৩২ গ্রেডের হয়ে থাকে।
কভার কেমন হবে– সে ব্যাপারেও লেখককে জানতে হবে। কভার আর্ট পেপারে ছাপাতে হয়। কভারে অনেকে ১০০ জিএসএম আর্টপেপার ব্যবহার করে থাকেন। তবে কভারের জন্য ১২০ জিএসএম আর্ট পেপার আদর্শ। তাতে খরচ বেশি পড়লেও বইটি দেখতে আকর্ষণীয় হবে। ।
ভিতরের ছাপা : সাধারণত সাদা-কালো ছাপা হয় বইগুলো। সাদাকালো বই প্রকাশ করতে এক ফরমায় একটি প্লেট ও একবার ছাপার হিসাব করতে হবে। অনেক ক্ষেত্রে, বিশেষ করে কমিকস বই বা ছোটদের বইগুলি মাল্টিকালার ছাপা হয়। মনে রাখতে হবে, সাদাকালো ছাপার থেকে এই খরচটা চারগুণ হয়ে থাকে। কারণ প্রতিটি রঙে একটি করে প্লেট ও প্রতিটি রংয়ের একবার করে ছাপার চার্জ হিসাব করা হয়।
বইয়ের দাম কত হবে? এটি প্রকাশক হিসাব করবেন। লেখক এই বিষয়টি না জানলেও চলবে।
আইএসবিএন: এটি একটি নম্বর। প্রতিটি বইয়ে এটি থাকতে হবে। কেন্দ্রীয় সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের অধীন দফতরে এই নম্বরটি সংগ্রহ করতে হয়। মনে রাখতে হবে যে, আইএসবিএন ছাড়া প্রকাশিত বইটি জাতীয় গ্রন্থাগের জমা দেওয়া যাবে না। এটি প্রকাশকের সংগ্রহ করার দায়িত্ব। লেখকের এখানে কোনও দায়বদ্ধতা না থাকলেও প্রকাশককে সতর্ক করতে হবে। কারণ অনেক সময় আইএসবিএন ছাড়া বই প্রকাশ করতে দেখা গেছে।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন