কলকাতার ‘বইপাড়া’ কলেজ স্ট্রিটের ১৩৭ বছর বয়সী বইয়ের দোকানটি সম্প্রতি হেরিটেজ ফাউন্ডেশন থেকে ‘ব্লু প্লাক’ সম্মান পেয়েছে। দোকানের উপরের তলাটি ১০০ জনের বসার মতো ফ্রি রিডিং রুম এবং লাইব্রেরিতে রূপান্তরিত করা হবে।
সাম্প্রতিককালে অনলাইন শপিং এবং ই-বুকগুলি আদর্শ হয়ে উঠতে থাকায়, পুরানো এবং ঐতিহ্যশালী বইয়ের দোকানগুলি কঠিন চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হয়েছে৷ কিন্তু, সেই জায়গায় দাঁড়িয়েই দাসগুপ্ত অ্যান্ড কোম্পানি সমস্ত প্রতিকূলতা কাটিয়ে, অবিচল এবং সমৃদ্ধি বজায় রেখে চলেছে। যখন অধিকাংশ বইয়ের দোকান ঝাঁপ ফেলতে বাধ্য হয়েছে, দাসগুপ্ত অ্যান্ড কোম্পানি মুদ্রিত শব্দের সারমর্ম রক্ষা করে সটান দাঁড়িয়ে রয়েছে। অতীতের আকর্ষণ বজায় রেখে পরিবর্তিত সময়ের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নেওয়ার ক্ষমতাই এই প্রতিষ্ঠানটিকে অন্যদের থেকে আলাদা পরিচয় দিয়েছে।
বস্তুত, প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিপরীতে দাসগুপ্ত অ্যান্ড কোম্পানি সারা বিশ্বের বইপ্রেমীদের জন্য একটি ‘আইকনিক ল্যান্ডমার্ক’। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়, প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়, হিন্দু স্কুল এবং হেয়ার স্কুলের মতো ঐতিহ্যশালী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান দ্বারা বেষ্টিত, বইয়ের দোকানটি প্রজন্মের পর প্রজন্ম ছাত্র, শিক্ষক, পণ্ডিত এবং শিক্ষাবিদদের আকৃষ্ট করেছে। এর কাঠের বইয়ের আলমারি, বইয়ের বিশাল সংগ্রহে ভরা তাক, প্রতিষ্ঠানের বৌদ্ধিক ও সাংস্কৃতিক তাত্পর্যের প্রমাণ হিসেবে দাঁড়িয়ে আছে। তার বর্ণাঢ্য ইতিহাস জুড়ে, দাসগুপ্ত অ্যান্ড কোম্পানি অগণিত মনিষীর মনকে মোহিত করেছে। পন্ডিত ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর এবং জগদীশ চন্দ্র বসু থেকে শুরু করে সত্যজিৎ রায় কিংবা অমর্ত্য সেন– দাসগুপ্ত অ্যান্ড কোম্পানির বইয়ের দোকানে আসা বিশিষ্টদের তালিকা দীর্ঘ।
দাসগুপ্ত অ্যান্ড কোম্পানি শুধু একটি বইয়ের দোকান নয়; এটি কলকাতার সাহিত্য ঐতিহ্যের প্রতীক। প্রতিষ্ঠাতা গিরীশচন্দ্র দাশগুপ্তর প্রপৌত্র এবং বর্তমান কর্ণধার অরবিন্দ দাশগুপ্ত একটি উচ্চাভিলাষী প্রকল্প শুরু করেছেন। দোকানের উপরের তলাটি ১০০ জনের বসার মতো ফ্রি রিডিং রুম এবং লাইব্রেরিতে রূপান্তরিত হবে। ছাত্র, গবেষক, শিক্ষাবিদ এবং শিক্ষকদের জন্য এর দ্বার উন্মুক্ত থাকবে। এই নতুন উদ্যোগের লক্ষ্য, যারা বই কিনতে পারেন না, বিশেষ করে গ্রামীণ এলাকার ছেলেমেয়ে, তাদের অভাব পূরণ করা। লাইব্রেরিতে ১০,০০০ বই রাখা হবে। সঙ্গে একটি আর্কাইভাল সেন্টার থাকবে, যেখানে ২০০৪ সালে অগ্নিকাণ্ড থেকে বাঁচানো সম্ভব হওয়া রেকর্ড এবং নথিগুলি প্রদর্শিত হবে।
দাসগুপ্ত অ্যান্ড কোম্পানি সবসময়ই সব শ্রেণির পাঠকের চাহিদা পূরণের গুরুত্ব স্বীকার করেছে। এবার পরিকল্পনা– ইংরেজি এবং বাংলা অনুবাদের উপর জোর দেওয়া। অরবিন্দবাবু বলেন, “অনেক বাংলা-মাধ্যমের ছাত্র আছে যারা মেধাবী কিন্তু ইংরেজিতে দুর্বলতার কারণে হেরে যায়। একইভাবে, অনেক বাঙালি ছাত্র রয়েছে যারা ইংরেজিতে দক্ষ কিন্তু বাংলা পড়তে বা লিখতে অক্ষম। আমি উভয়ের উপকারে লাগতে চাই।” তিনি আরও বলেন, “দোকানে পড়াশোনার বই ছাড়াও সাহিত্যকর্মের একটি চিত্তাকর্ষক সংগ্রহ রয়েছে। দিনে প্রায় ৪০০ ক্রেতা দোকানে আসেন। সাহিত্যের দিক দিয়ে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের পরে শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় এবং আশাপূর্ণা দেবীর লেখা বইয়ের সবচেয়ে বেশি চাহিদা। সমসাময়িক লেখকদের মধ্যে শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায় এবং সমরেশ মজুমদার অত্যন্ত জনপ্রিয়। কিন্তু এখন আমি ফেসবুকে বিস্ময়কর লেখকদের লক্ষ্য করছি, যেমন রোশেনারা খান, দীপঙ্কর দাশগুপ্ত, ইসমত রিজওয়ানা — আমরাও প্রকাশক এবং আমরা তাঁদের লেখা প্রকাশ করতে পারলে অত্যন্ত আনন্দিত হব।”
দু’টি বিশ্বযুদ্ধ, স্বাধীনতা আন্দোলন, কিংবা উত্তাল নকশাল আন্দোলন, বাংলার রাজনৈতিক ওঠাপড়ার স্বাক্ষী হয়ে আজও একই জায়গায় অবস্থান করছে দাসগুপ্তা অ্যান্ড কোম্পানি। বইপাড়ায় এই একমাত্র দোকান শুরু থেকে যাদের মালিকানা বদল হয়নি। অরবিন্দবাবু যথার্থই বলেছেন, দোকানে এসে কেউ একটি বইয়ের খোঁজ করলে তিনি কয়েকটি বিকল্প বইয়ের পরামর্শ পাবেন। যে কাজ অ্যামাজনের মতো অনলাইন রিটেল প্ল্যাটফর্মগুলি করতে অক্ষম।
![]() |
কলেজ স্ট্রিটে দাশগুপ্তা অ্যান্ড কোম্পানির বইয়ের দোকান। পাশে ব্লু প্লাক হাতে কর্ণধার অরবিন্দ দাশগুপ্ত |
শিক্ষা-সংস্কৃতির পীঠস্থান কল্লোলিনী কলকাতায় আজও একটি বইয়ের দোকান শহরের সমৃদ্ধ ঐতিহ্যের প্রমাণ হিসাবে দাঁড়িয়ে রয়েছে। দাসগুপ্ত অ্যান্ড কোম্পানি। ১৮৮৬ সালে প্রতিষ্ঠিত প্রতিষ্ঠানটি শুধুমাত্র সময়ের ঝড় মোকাবিলা করেনি বরং কলকাতার আধুনিক ইতিহাসের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে উঠেছে। কলকাতার ‘বইপাড়া’ কলেজ স্ট্রিটের এই ১৩৭ বছর বয়সী বইয়ের দোকানটি সম্প্রতি হেরিটেজ ফাউন্ডেশন থেকে ‘ব্লু প্লাক’ সম্মান পেয়েছে। শহর এবং শহরের বাসিন্দাদের জন্য অমূল্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ এই সম্মান।
সাম্প্রতিককালে অনলাইন শপিং এবং ই-বুকগুলি আদর্শ হয়ে উঠতে থাকায়, পুরানো এবং ঐতিহ্যশালী বইয়ের দোকানগুলি কঠিন চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হয়েছে৷ কিন্তু, সেই জায়গায় দাঁড়িয়েই দাসগুপ্ত অ্যান্ড কোম্পানি সমস্ত প্রতিকূলতা কাটিয়ে, অবিচল এবং সমৃদ্ধি বজায় রেখে চলেছে। যখন অধিকাংশ বইয়ের দোকান ঝাঁপ ফেলতে বাধ্য হয়েছে, দাসগুপ্ত অ্যান্ড কোম্পানি মুদ্রিত শব্দের সারমর্ম রক্ষা করে সটান দাঁড়িয়ে রয়েছে। অতীতের আকর্ষণ বজায় রেখে পরিবর্তিত সময়ের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নেওয়ার ক্ষমতাই এই প্রতিষ্ঠানটিকে অন্যদের থেকে আলাদা পরিচয় দিয়েছে।
বস্তুত, প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিপরীতে দাসগুপ্ত অ্যান্ড কোম্পানি সারা বিশ্বের বইপ্রেমীদের জন্য একটি ‘আইকনিক ল্যান্ডমার্ক’। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়, প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়, হিন্দু স্কুল এবং হেয়ার স্কুলের মতো ঐতিহ্যশালী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান দ্বারা বেষ্টিত, বইয়ের দোকানটি প্রজন্মের পর প্রজন্ম ছাত্র, শিক্ষক, পণ্ডিত এবং শিক্ষাবিদদের আকৃষ্ট করেছে। এর কাঠের বইয়ের আলমারি, বইয়ের বিশাল সংগ্রহে ভরা তাক, প্রতিষ্ঠানের বৌদ্ধিক ও সাংস্কৃতিক তাত্পর্যের প্রমাণ হিসেবে দাঁড়িয়ে আছে। তার বর্ণাঢ্য ইতিহাস জুড়ে, দাসগুপ্ত অ্যান্ড কোম্পানি অগণিত মনিষীর মনকে মোহিত করেছে। পন্ডিত ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর এবং জগদীশ চন্দ্র বসু থেকে শুরু করে সত্যজিৎ রায় কিংবা অমর্ত্য সেন– দাসগুপ্ত অ্যান্ড কোম্পানির বইয়ের দোকানে আসা বিশিষ্টদের তালিকা দীর্ঘ।
দাসগুপ্ত অ্যান্ড কোম্পানি শুধু একটি বইয়ের দোকান নয়; এটি কলকাতার সাহিত্য ঐতিহ্যের প্রতীক। প্রতিষ্ঠাতা গিরীশচন্দ্র দাশগুপ্তর প্রপৌত্র এবং বর্তমান কর্ণধার অরবিন্দ দাশগুপ্ত একটি উচ্চাভিলাষী প্রকল্প শুরু করেছেন। দোকানের উপরের তলাটি ১০০ জনের বসার মতো ফ্রি রিডিং রুম এবং লাইব্রেরিতে রূপান্তরিত হবে। ছাত্র, গবেষক, শিক্ষাবিদ এবং শিক্ষকদের জন্য এর দ্বার উন্মুক্ত থাকবে। এই নতুন উদ্যোগের লক্ষ্য, যারা বই কিনতে পারেন না, বিশেষ করে গ্রামীণ এলাকার ছেলেমেয়ে, তাদের অভাব পূরণ করা। লাইব্রেরিতে ১০,০০০ বই রাখা হবে। সঙ্গে একটি আর্কাইভাল সেন্টার থাকবে, যেখানে ২০০৪ সালে অগ্নিকাণ্ড থেকে বাঁচানো সম্ভব হওয়া রেকর্ড এবং নথিগুলি প্রদর্শিত হবে।
দাসগুপ্ত অ্যান্ড কোম্পানি সবসময়ই সব শ্রেণির পাঠকের চাহিদা পূরণের গুরুত্ব স্বীকার করেছে। এবার পরিকল্পনা– ইংরেজি এবং বাংলা অনুবাদের উপর জোর দেওয়া। অরবিন্দবাবু বলেন, “অনেক বাংলা-মাধ্যমের ছাত্র আছে যারা মেধাবী কিন্তু ইংরেজিতে দুর্বলতার কারণে হেরে যায়। একইভাবে, অনেক বাঙালি ছাত্র রয়েছে যারা ইংরেজিতে দক্ষ কিন্তু বাংলা পড়তে বা লিখতে অক্ষম। আমি উভয়ের উপকারে লাগতে চাই।” তিনি আরও বলেন, “দোকানে পড়াশোনার বই ছাড়াও সাহিত্যকর্মের একটি চিত্তাকর্ষক সংগ্রহ রয়েছে। দিনে প্রায় ৪০০ ক্রেতা দোকানে আসেন। সাহিত্যের দিক দিয়ে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের পরে শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় এবং আশাপূর্ণা দেবীর লেখা বইয়ের সবচেয়ে বেশি চাহিদা। সমসাময়িক লেখকদের মধ্যে শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায় এবং সমরেশ মজুমদার অত্যন্ত জনপ্রিয়। কিন্তু এখন আমি ফেসবুকে বিস্ময়কর লেখকদের লক্ষ্য করছি, যেমন রোশেনারা খান, দীপঙ্কর দাশগুপ্ত, ইসমত রিজওয়ানা — আমরাও প্রকাশক এবং আমরা তাঁদের লেখা প্রকাশ করতে পারলে অত্যন্ত আনন্দিত হব।”
দু’টি বিশ্বযুদ্ধ, স্বাধীনতা আন্দোলন, কিংবা উত্তাল নকশাল আন্দোলন, বাংলার রাজনৈতিক ওঠাপড়ার স্বাক্ষী হয়ে আজও একই জায়গায় অবস্থান করছে দাসগুপ্তা অ্যান্ড কোম্পানি। বইপাড়ায় এই একমাত্র দোকান শুরু থেকে যাদের মালিকানা বদল হয়নি। অরবিন্দবাবু যথার্থই বলেছেন, দোকানে এসে কেউ একটি বইয়ের খোঁজ করলে তিনি কয়েকটি বিকল্প বইয়ের পরামর্শ পাবেন। যে কাজ অ্যামাজনের মতো অনলাইন রিটেল প্ল্যাটফর্মগুলি করতে অক্ষম।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন