এক সাক্ষাৎকারে ভারতীয় বংশোদ্ভূত লেখক সলমন রুশদি বলেন, “আমি দুঃস্বপ্ন দেখছিলাম। সেখান থেকে আমাকে বের করতে থেরাপিস্টকে অনেক পরিশ্রম করতে হয়েছে।”
![]() |
Salman Rushdie |
শরীরে ক্ষমত ভরাট হয়েছে, কিন্তু মনের ক্ষত এখনও দগদগে।
গতবছর ছুরি হামলার পর প্রথমবার সংবাদমাধ্যমের সামনে এসে এমনটাই জানালেন লেখক সলমন রুশদি। ‘মিডনাইটস চিলড্রেন’-এর লেখক ৭৬ বছর বয়সী রুশদির উপর গতবছর ১২ আগস্টে হামলা হয়। তিনি একটি বক্তৃতায় অংশ নিতে মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন। সেই সময় হাদি মাতার নামে ২৪ বছর বয়সী এক উন্মত যুবক রুশদির শরীরে প্রায় দশবার ছুরিকাঘাত করে। অলৌকিকভাবে প্রাণে বেঁচে গেলও রুশদি চিরকালের জন্য একটি চোখের দৃষ্টিশক্তি হারান। লিভারের ক্ষতি হয়। নার্ভ ছিঁড়ে একটি হাত পক্ষাঘাতগ্রস্থ হয়ে গিয়েছে। এখনও শারীরিক এবং মানসিক উভয় ধরনের ক্ষত তাঁকে তাড়িত করে।
সেই ঘটনার পর প্রথমবার সংবাদমাদ্যমের সামনে এসে বিতর্কিত লেখক রুশদি তাঁর বর্তমান লড়াইয়ের কথা সবার সঙ্গে ভাগ করে নিয়েছেন। তিনি বলেন, “আমার শরীরের ক্ষত কিছুটা সেরে গিয়েছে, কিন্তু আমার মনের ক্ষত এখনও দগদগে।” বিবিসিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ভারতীয় বংশোদ্ভূত লেখক বলেন, “আমি দুঃস্বপ্ন দেখছিলাম। সেখান থেকে আমাকে বের করতে থেরাপিস্টকে অনেক পরিশ্রম করতে হয়েছে। তবে, আমি খুব ভালো একজন থেরাপিস্ট পেয়েছি, সেটাই সৌভাগ্যের।”
রুশদির উপর হামলায় অভিযুক্ত হাদি মাতার গ্রেফতার হয়েছে। তবে সে তার দোষ স্বীকার করেনি। শুনানি শুরু হলে রুশদিকেও আদালতে হাজিরা দিয়ে বয়ান জানাতে হবে। আদালতে যাওয়ার ব্যাপারে লেখক অবশ্য দ্বিধাগ্রস্থ। তিনি বলেন, “ছেলেটা দোষ স্বীকার করে নিলে শুনানির প্রয়োজনই হতো না। শুধু শাস্তি ঘোষণা হতো। তাহলে আমাকেও আদালতে যেতে হতো না। কিন্তু এখন যা পরিস্থিতি, তাতে আদালতে যাওয়ার ব্যাপারে আমার মনে দ্বিধা রয়েছে। আমার মন একবার চাইছে আদালতে গিয়ে ওর মুখোমুখি দাঁড়াই, আবার মনে হচ্ছে, এ সব নিয়ে কাটাছেঁড়ায় কী লাভ? আমার কাছে এখন গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল জীবনকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া। আমি এই ঘটনাটা থেকে নিজেকে বের করে আনতে চাই।” তিনি জানান, এই দুঃস্বপ্ন ভক্তদের সঙ্গে ভাগ করে নিতে ছুরি-হামলা নিয়ে একটি বই লিখছেন। স্থিতিস্থাপকতা এবং অবাধ্যতার একটি ক্রিয়াকলাপে, ব্রিটিশ-আমেরিকান লেখকের লক্ষ্য এই ধরনের সহিংসতার দীর্ঘস্থায়ী প্রভাবের উপর আলোকপাত করা এবং তাঁর লেখনির মাধ্যমে ভক্তদের সঙ্গে সংযোগ স্থাপন করা।
প্রসঙ্গত, সলমন রুশদি তাঁর সাড়ে তিনদশক আগে লেখা ‘দ্য স্যাটানিক ভার্সেস’ উপন্যাসের কারণে দীর্ঘদিন ধরে বিতর্ক ও হুমকির মধ্যে রয়েছেন। তিন দশক আগে ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ খোমেনির একটি ফতোয়া ফলে লেখকের বিরুদ্ধে অসংখ্যবার খুনের হুমকি দেওয়া হয়। তাতে ভয় না পেয়ে রুশদি তার কলম চালিয়ে গিয়েছেন। নির্ভীকভাবে তাঁর চিন্তাভাবনা এবং ধারণাগুলি প্রকাশ করেছেন।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন