বইমেলার মাসকয়েক আগে প্রকাশিত হয়েছে লেখক অভিষেক ঘোষের ‘৬৯ ঙ’ বইটি। প্রকাশক: মণিকর্ণিকা প্রকাশনী।
বইতন্ত্র: বই তো হল, কিন্তু তা পাঠকের কাছে পৌঁছবে কিভাবে? প্রতিবছর বয়সে তরুণ ও নতুন লেখকদের বই প্রকাশিত হয়। কিন্তু, তাদের সবার চিন্তা থাকে বইটি যথাসম্ভব বেশি সংখ্যায় পাঠকের হাতে তুলে দেওয়া নিয়ে। পাঠকের হাতেই যদি বই পৌঁছতে না পারে, তা হলে আলোচনা বা সমালোচনা কিছুই হবে না। তাতে লেখকের মেধা ও পরিশ্রমের কোনও মূল্যায়ন হয় না। তাই নতুন লেখকদের লক্ষ্য থাকে জেলা বইমেলা ও অবশ্যই কলকাতা আন্তর্জাতিক বইমেলা।
বইমেলার মাস কয়েক আগে প্রকাশিত হয়েছে লেখক অভিষেক ঘোষের ‘৬৯ ঙ’ বইটি। প্রকাশক: মণিকণিকা প্রকাশনী। লেখকের কথায়, “সত্যি বলতে আমার মতো যাঁরা একেবারেই অনভিজ্ঞ, তাঁরা বই প্রকাশের পরেই বুঝতে পারেন পাঠকের কাছে পৌঁছানো অত সহজ নয়। আপনার আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধব কেউই হয়তো দোকানে গিয়ে সদ্য প্রকাশিত বইটি কিনে উঠতে পারবেন না, যে কোনও কারণেই হোক। কিন্তু তবু একটু চেষ্টা তো আমাদের তরফেও করতে হয়। এটা কলকাতা বইমেলার সময়, এসময় অল্প সংখ্যায় হলেও কিছু পাঠক অন্তত স্টলে ঘুরতে ঘুরতে দু-চারটে নতুন ও অপরিচিত লেখক-লেখিকাদের বই নেড়ে দেখেন, পাতা ওলটান এবং পছন্দ হলে কিনেও নেন। বইটি প্রকাশিত হয়েছিল গতবছর মে মাসে, প্রখর গ্রীষ্ম ও আচমকা বর্ষণের কালে। আমার মতো নতুন লেখকদের ওই গ্রীষ্মের বাজারে সত্যি বলতে কোনও ‘মার্কেট’ নেই। যাই হোক্, এখন আবেদন, যদি বইমেলার ওদিকটায় যান, দেখুন না বইটির দু-চার পাতা উলটে, ভালো লাগতেও পারে।
বাঙালি লেখক-লেখিকাদের মধ্যে আমরা লক্ষ্য করেছি যে তাঁদের গল্প-কবিতা লেখার সাধ ও সাধ্য আছে। কিন্তু লেখাকে পেশা হিসাবে ভাবতে পারেন না। শুধু তাই নয়, তাঁরা নিজের বই কাউকে কেনার কথা বলার ব্যাপারটা ভাবতেই পারেন না। উল্টে-পাল্টে দেখতে পারেন পর্যন্তই। অভিষেক ঘোষ অন্তত, ‘আমার মতো নতুন লেখকদের ওই গ্রীষ্মের বাজারে সত্যি বলতে কোনও মার্কেট নেই’ কথাটা বলে সেই ধারণা থেকে বেরিয়ে আসার কিছুটা চেষ্টা করেছেন।
অভিষেক গল্প লিখতে শুরু করেন বছর বারো আগে। বলছেন, গল্প লেখার সময় আমি কোথাও পৌঁছাতে চাই, কিন্তু প্রতিবারই দেখা যায় গল্পের শেষে যা ভাবিনি, তাই ঘটে গেছে। আমি খেয়াল করিনি, অন্য স্টেশনে পৌঁছে গেছি। কখনও তা ভালো, সুখকর; কখনও তা নয়। অবশ্য সৃষ্টির সার্থকতা পাঠকই বিচার করবেন। কিন্তু এ কথা সত্য, লিখতে ভালো লাগছে বলেই লিখেছি। জোর করে লিখলে, সে লেখা ভালো হয় না। আজকাল অনেক পত্র-পত্রিকায় এরকম কিছু কিছু লেখা দিতে হচ্ছে! মন না চাইলেও অনেক সময় উপায় থাকে না, কারণ সময় কম এবং আমিও ইতিমধ্যে 'বিশাল কিছু' হয়ে উঠতে পারি নি; যে কেউ লেখা চাইলেও অবহেলা করব। সে যাই হোক, আজকের গতিময় জীবনে দাঁড়িয়ে কোনও ক্লান্তিকর গল্প পড়তে, পাঠক হিসেবে আমার নিজেরও ভালো লাগে না। যদি কোনও গল্পে বাক্য-বিন্যাস বা, শব্দচয়ন আশানুরূপ না হয়, তাহলেও ভারি বিরক্ত লাগে। তাই চেষ্টা করেছি, নিজের লেখা নির্মেদ ও গতিময় করে তুলতে, সুসংহত রূপ দিতে! এরপর সবটাই পাঠকের হাতে - আমার কোনও গল্প পাঠকের স্মৃতিতে থেকে গেলে, সেটাই অনেকখানি প্রাপ্তি বলে মনে করবো।
‘৬৯ ঙ’ বইটি ১২টি ছোটগল্পের সংকলন। কলেজ স্ট্রীটে বইটি পাওয়া যায় ধ্যানবিন্দু, দে বুক স্টোর (দীপুদা), রূপায়নী ও বৈভাষিকে। মণিকর্ণিকা প্রকাশনী কর্তৃক প্রকাশিত বইটির মুদ্রিত মূল্য ২৫০ টাকা। এখন কলকাতা আন্তর্জাতিক বইমেলায় গল্পগুচ্ছ স্টলে (৫৫২ নম্বর স্টল) বইটি পাওয়া যাচ্ছে।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন