করোনা যুদ্ধ : প্রকাশিত হল কৃষ্ণ কুমার দাসের 'লকডাউনের ক্ষত '

কোভিডের বিরুদ্ধে সমাজের ৪৫টি শ্রেণীর মরণপণ লড়াই নিয়ে সাংবাদিক কৃষ্ণ কুমার দাসের বই 'লকডাউনের ক্ষত ' প্রকাশিত হল এবার আন্তর্জাতিক কলকাতা বইমেলায়।
কোভিড কালের লড়াই: প্রকাশিত হল কৃষ্ণকুমার দাসের  'লকডাউনের ক্ষত '
কৃষ্ণকুমার দাসের  'লকডাউনের ক্ষত 'বইটির মোড়ক উন্মোচন করছেন পুরমন্ত্রী ও কলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিম। রয়েছেন অর্থমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য, সাংসদ মালা রায়, বিধায়ক দেবাশীষ কুমার, বরো চেয়ারম্যান দেবলীনা বিশ্বাস ও লেখক-সহ অন‌্যান‌্যরা।

বইতন্ত্র: ২০১৯-এর ডিসেম্বরে চিনের ইউহান প্রদেশে প্রথম সার্স-কোভ-২ নামে একটি ভাইরাসের হদিশ মেলে। মানুষের মধ্যে মারাত্মকভাবে সংক্রমিত হতে থাকা অসুখটি মাস দুয়েকের মধ্যে পৃথিবীব‌্যাপী ছড়িয়ে পড়ে। তার থেকে বাদ পড়েনি ভারতও। সংক্রমণ শৃঙ্খল ভাঙতে বিভিন্ন দেশের সরকার লকডাউনের পথে হাঁটে। ২০২০ সালের ২৪ মার্চ, কোনও আগাম প্রস্তুতি ছাড়াই দেশজুড়ে সার্বিক লকডাউন ঘোষণা করেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। মারাত্মক ভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের মধ্যেই এক নজিরবিহীন সংকটের মধ্যে পড়ে দেশে, সমাজ, অর্থনীতি। একদিকে লক্ষ-লক্ষ মানুষের কোভিড আক্রান্ত হওয়া, চিকিৎসা-সঙ্কট, অগণিত মৃত্যু, অন‌্যদিকে রুটি-রুজির টান, জীবন-জীবিকার অনিশ্চয়তা– এক বিভৎস পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। করোনা অতিমারী মানবসভ‌্যতার ইতিহাসে এক প্রলঙ্কর অধ‌্যায়। ভাইরাসটি আমাদের নজরে আসার পর থেকে এপর্যন্ত বিশ্বে ৬০.৮ কোটির বেশি মানুষ এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে। মৃত্যু ৬৫.১ লক্ষের বেশি।

সবচেয়ে বড় কথা হল এই পর্ব পুরো বিশ্বকে পাল্টে দিয়েছে। আজকের দিনে দাঁড়িয়ে আমরা সর্বক্ষেত্রে অনেক পরিবর্তন লক্ষ‌্য করছি। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দিনে-দিনে আরও পরিবর্তন আমাদের চোখে পড়বে। বাড়ি থেকে কাজ, ডিজিট‌্যাল আর্থিক লেনদেন, অনলাইনে নির্ভরশীলতা থেকে শুরু করে বহুজাতিক সংস্থার পণ‌্যকে পিছনে ফেলে স্থানীয় পণ্যের চাহিদা বৃদ্ধি– ইত‌্যাদি সবই করোনা ও তার পিছু ধরে আসা লকডাউনের কৃতীত্ব! সে দিক থেকে করোনা হয়তো পরিবর্তনের জন‌্য একটা বড় ঝাঁকুনি।

৩০ মে ২০২০, আংশিকভাবে লকডাউন প্রত‌্যাহার ঘোষণা বিভিন্ন পর্যায়ে। প্রথম ‘তালাখোলা’ দেশব‌্যাপী উদযাপন হয় কার্যত পরাধীনতা থেকে মুক্তির মতোই। কিন্তু সময় গড়াতে দেখা যায় তখন সঙ্কট আরও তীব্র। দীর্ঘ সময় বন্দিদশা থেকে বাইরে বেরিয়ে সবকিছুকেই কেমন অচেনা মনে হয়। তাল মেলানো যায় না। অনেক কিছু বদলেও গিয়েছে ততদিনে। একদিকে ভাইরাস সংক্রমণের ভয় আর সেইসঙ্গে রুটি-রুজির ব‌্যবস্থার তাগিদ। ইংরেজিতে এই সময়টাকে ‘ট্রানজিশন পিরিয়ড’ বলা হয়ে থাকে। সব রাতের শেষ আছে। সব বিপর্যয় কেটে যায়। যে কোনও বড় বিপর্যয়-পরবর্তী সময়ে এই পর্বটা অতি গুরুত্বপূর্ণ।
সেই সময়কালে কোভিডের বিরুদ্ধে সমাজের ৪৫টি শ্রেণীর মরণপণ লড়াই নিয়ে সাংবাদিক কৃষ্ণ কুমার দাসের বই 'লকডাউনের ক্ষত ' প্রকাশিত হল এবার আন্তর্জাতিক কলকাতা বইমেলায়। ২৫ জানুয়ারি দে’জ পাবলিশিং প্রকাশিত বইটির মোড়ক উন্মোচন করলেন পুরমন্ত্রী ও মেয়র ফিরহাদ হাকিম। ছিলেন অর্থমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য, সাংসদ মালা রায়, বিধায়ক দেবাশীষ কুমার, বরো চেয়ারম্যান দেবলীনা বিশ্বাস প্রমুখ।

কৃষ্ণকুমার দাসের  'লকডাউনের ক্ষত '-১
বইমেলা প্রাঙ্গনে বইটির প্রথম কপি তৃণূমূল কংগ্রেসের রাজ‌্য সাধারণ সম্পাদক তথা লেখক-সম্পাদক কুণাল ঘোষের হাতে তুলে দিচ্ছেন কৃষ্ণ কুমার দাস। রয়েছেন প্রকাশক অপু দে।

লকডাউনে অধিকাংশ মানুষ ছিলেন গৃহবন্দি। মাসের পর মাস বহির্বিশ্বের কোটি কোটি মানুষ শুধু বেঁচে থাকার জন‌্য যে প্রাণান্তকর লড়াই করেছেন তা দেখা সম্ভব হয়নি অধিকাংশের। কিন্তু এই বইটি কলকাতা থেকে ক‌্যালিফোর্নিয়া-নিউজার্সি, বোলপুর-শান্তিনেকেতন, পুরুলিয়া-শিলিগুড়ি থেকে ঢাকা-কক্সবাজারের কয়েক কোটি বাঙালির করোনার বিরুদ্ধে লড়াইয়ের জীবন্ত দলিল। আবার কোভিডকে সামনে রেখে পাড়ার মুদি দোকানি থেকে জেলার নার্সিংহোমে কী ভয়ংকর ব‌্যবসা চলছে তাও জানতে পারবেন সরেজমিনে দেখা নানা অভিজ্ঞতার তথ্যে ভরা এই লেখা থেকে। ডাক্তার, আইনজীবী, পুলিশ, গৃহশিক্ষক থেকে নিষিদ্ধপল্লীর নামী যৌনকর্মীর চাঞ্চল‌্যকর সাক্ষাৎকার ভিত্তিক করোনা যুদ্ধজয়ের অকথিত কাহিনী পাবেন এই বইটিতে।

সাংবাদিক কৃষ্ণকুমার দাসের ছেলেবেলা কেটেছে দক্ষিণ ২৪ পরগণার বারুইপুরে। পড়াশোনা বারুইপুর হাই স্কুলে। কেমিস্ট্রি অনার্স নিয়ে কলকাতার সেন্ট পল্স কলেজে ভর্তি হওয়ার পর শুরু জেলায় জেলায় চষে বেড়ানো। পিওর সায়েন্সের ছাত্র হলেও বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের প্রতি অগাধ আকর্ষণের টানে বাংলায় এমএ করেন। পাশাপাশি, ছাত্র রাজনীতিতে যোগ দিয়ে পৌঁছে গিয়েছেন বৈচিত্রময় ভারতের নানা সাংস্কৃতিক ও ঐতিহাসিক স্থানে। ১৯৯৬ সালের শেষে প্রত‌্যক্ষ রাজনীতি থেকে কিছুটা সরে এসে মূল ধারার সাংবাদিকতায় মগ্ন হয়ে পড়েন। সঙ্গে অব‌্যাহত থেকেছে নানা সংগঠনের সঙ্গে সমাজসেবামূলক কাজকর্ম। তবে সাংবাদিকতার পেশাতেই অস্ট্রেলিয়া, চিন, হংকং, সিঙ্গাপুর এবং অসংখ‌্যবার বাংলাদেশে গিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সহ একাধিক রাষ্ট্রের মন্ত্রী ও বিশিষ্টজনদের স্নেহধন‌্য এই সাংবাদিক বর্তমানে ‘সংবাদ প্রতিদিন’ দৈনিক পত্রিকার ‘চিফ অফ পলিটিক‌্যাল নিউজ ব‌্যুরো।

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন