আটদিনে ২২টি সেশনে থ্রিলারের নানা দিক নিয়ে আলোচনায় উঠে এল থ্রিলার সাহিত্যের সেকাল-একাল। ভবিষ্যতের পথ অনুসন্ধানও করলেন বিশিষ্টরা।
বাংলা ভাষার প্রথম থ্রিলার লিট ফেস্টের উদ্বোধন করলেন বিশিষ্ট প্রাবন্ধিক ও বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন অধ্যাপক সুমিতা চক্রবর্তী, সাহিত্যিক প্রচেত গুপ্ত (Prachta Gupta), থ্রিলার লেখক শুদ্ধেন্দু চক্রবর্তী, সুস্মিতা সাহা এবং শ্রীমন্ত বসু। বন্দুকের গুলি ছুঁড়ে উদ্বোধন হল প্রথম কলকাতার থ্রিলার লিট ফেস্টের (1st Kolkata Thriller Lit Fest 24)। শুধু উদ্বোধকদের হাতে নয় এই সময় কলেজ স্ট্রিটের অভিযান বুক ক্যাফেতে সকল উপস্থিত দর্শকদের হাতেও তুলে দেওয়া হয় ছোটো ছোটো বন্দুক।
বাংলা থ্রিলার ও গোয়েন্দা গল্পের ইতিহাস ও বর্তমান নিয়ে প্রথম সেশনে আলোচনা করেন উদ্বোধকেরা। আলোচনায় উঠে আসে, কাকে থ্রিলার বলা যাবে? থ্রিলার পাঠ আমাদের মানসিক অসুস্থতায় মেডিসিনের মতো কাজ করে কিনা? দারোগা প্রিয়নাথ চক্রবর্তী থেকে মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিন পর্যন্ত বিভিন্ন লেখকের লেখা বিভিন্ন দিক থেকে আলোচিত হয়। অধ্যাপক সুমিতা চক্রবর্তী বলেন, “ভৌতিক থ্রিলার আমার মোটেই ভালো লাগে না। যুক্তির বাস্তবতা না থাকলে সেই থ্রিলার বা গোয়েন্দা গল্প আমার জন্য নয়। যে কারণে আমার সত্যজিতের সোনার কেল্লা ভালো লাগে না, অথচ জয় বাবা ফেলুনাথ ভালো লাগে।” সাহিত্যিক প্রচেত গুপ্ত বলেন, “তা সে থ্রিলারই হোক বা সামাজিক গল্প আসল কথা হল–ভালো লেখা আর খারাপ লেখা। সাহিত্যের সকল বিভাগের ভালো লেখাই আমাদের পাঠ করা প্রয়োজন।” শুদ্ধেন্দু চক্রবর্তী বলেন, “বিভূতিভূষণের তারানাথ তান্ত্রিক বা সমরেশ বসুর বিবর, এগুলো উৎকৃষ্ট থ্রিলারের উদাহরণ।” সুস্মিতা সাহা এবং শ্রীমন্ত বসু বর্তমানে থ্রিলার সাহিত্য নতুন পাঠক সৃষ্টি করছে বাংলা ভাষায় সে বিষয়ে আলোচনা করে মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিন-সহ সমকালীন লেখকদের উদাহরণ দেন।
অভিযান পাবলিশার্সের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, মোট ২২টি পর্বে আলোচক হিসেবে অংশ নেবেন শতাধিক লেখক, প্রকাশক, বইপ্রেমী ও গবেষক। উদ্বোধনী দিনে তিনটি পর্ব অনুষ্ঠিত হয়।প্রথম পর্বের বিষয় ‘প্রিয়নাথদারোগা থেকে মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিন: বাংলা থ্রিলারের আদি থেকে সমকাল’। আলোচক হিসেবে থাকবেন সুমিতা চক্রবর্তী, প্রচেত গুপ্ত, শুদ্ধসত্ত্ব ঘোষ, শুদ্ধেন্দু চক্রবর্তী, সুস্মিতা সাহা এবং শ্রীমন্ত বসু। দ্বিতীয় পর্বের বিষয় ‘বাংলা থ্রিলারে বাস্তব এবং পরাবাস্তব’। এই পর্বে আলোচক হিসেবে ছিলেন যথাক্রমে অরিত্রতুহিন দাস, সুজয়কুমার মুখোপাধ্যায়, শ্রীময়ী রায় এবং শাশ্বত ধর। উদ্বোধনী দিনের শেষ পর্বের বিষয় ‘সুপার ন্যাচারাল বাংলা থ্রিলার’। আলোচক হিসেবে ছিলেন যথাক্রমে শরণ্যা মুখোপাধ্যায়, মনীষ মুখোপাধ্যায়, সুতপা ভদ্র সরকার, ঈশা দেব পাল এবং অভিষেক চট্টোপাধ্যায়।
প্রথম কলকাতা থ্রিলার লিট ফেস্ট ২০২৪-এর সহযোগী আয়োজক হিসেবে আছে অক্ষর সংলাপ প্রকাশন, বিভা, অভিনব মন এবং কলকাতা ক্রিয়েটিভ পাবলিশার্স অ্যান্ড বুকসেলার্স ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন।প্রসঙ্গত, থ্রিলার লিট ফেস্ট ভারতে এই প্রথম। ইউরোপ ও আমেরিকায় নিয়মিত থ্রিলার লিট ফেস্ট, থ্রিলার ফেস্ট হয়। ২০২৪ সালের ২৮ মে থেকে ১ জুন আমেরিকার শেরাটন টাইম স্কয়ারে ১৯তম থ্রিলার ফেস্ট আয়োজিত হচ্ছে। কলকাতার থ্রিলার লিট ফেস্টের পরিকল্পক ও বাস্তবায়নকারী অভিযান বুক ক্যাফের কর্ণধার কবি, সম্পাদক ও প্রকাশক মারুফ হোসেন। তাঁর এ আয়োজন থ্রিলার লেখক, পাঠক ও এ জগতকে আরও সমৃদ্ধ করবে বলে মনে করি।
শতাধিক আলোচকের ২২টি সেশনের আটদিনের (১৮ থেকে ২৫ মে) প্রথম কলকাতা থ্রিলার লিট ফেস্টের ভাবনা আসার মাত্র ৭২ ঘণ্টার ভেতর কীভাবে উদ্বোধন করা সম্ভব হল তা অনুষ্ঠানের সূচনায় জানান অন্যতম আয়োজক মারুফ হোসেন। তিনি বলেন “সমসময়ের বাংলা ভাষার জনপ্রিয়তম থ্রিলার লেখক মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিনের জন্মদিন উপলক্ষ্যে প্রথম কলকাতা থ্রিলার লিট ফেস্টের আয়োজন।”
আলোচনার বিষয়:
১) প্রিয়নাথ দারোগা থেকে মোহম্মদ নাজিম উদ্দিন, ২) বাংলা থ্রিলারে বাস্তব ও পরাবাস্তব, ৩) সুপার ন্যাচারাল বাংলা থ্রিলার, ৪) পছন্দের থ্রিলার, ৫) একবিংশ শতকের প্রিয় গোয়েন্দা, ৬) জীবন যখন থ্রিলার বইয়ের পাতা, ৭) সোশ্যাল মিডিয়া, পাঠকের চাহিদা এবং বাংলা থ্রিলার, ৮) পুরোটাই প্লটনির্ভর নাকি লেখকও গোয়েন্দা হয়ে ওঠেন? ১০) থ্রিলারের মুদ্রণ সৌকর্য ও প্রচ্ছদ : সেকাল ও একাল, ১১) পেশা কি থ্রিলার লেখায় সহায়ক হয়? ১২) থ্রিলার লেখার প্রস্তুতি ও লেখার সময় লেখকের মনের গতিবিধি, ১৩) হুকাকাশি থেকে টাকাশি কেশোরুগি, গোয়েন্দা ভাদুড়ি, পাণ্ডব গোয়েন্দা, ফেলুদা ও বসন্ত সাহা, ১৪) ক্রাইম থ্রিলার ও সময়-সমাজ সচেতন লেখক, ১৫) ঐতিহাসিক ও মিথোলজিক্যাল থ্রিলার, ১৬) থ্রিলারের বিক্রি ও বিপণন, ১৭) ছোটদের থ্রিলার, ১৮) থ্রিলার কিন্তু হালকা লেখা নয়, ১৯) থ্রিলারের মতো পুলিশ জীবন, ২০) বাংলা থ্রিলার চলচ্চিত্র, ২১) রবীন্দ্রনাথ এখানে কখনও খেতে আসেননি, ২২) বাংলা থ্রিলার ভেঙেছে দেশের সীমানা। থ্রিলার লেখক, প্রচ্ছদশিল্পী, গ্রন্থনির্মাণ গবেষক, থ্রিলার গবেষক, থ্রিলার সিনেমা পরিচালক, পুলিশ অফিসার, সাংবাদিক, অধ্যাপক, থ্রিলার পাঠক, পুস্তক বিক্রেতা এবং থ্রিলার প্রকাশক– আটদিনে ২২টি সেশনে থ্রিলারের নানা দিক নিয়ে আলোচনায় একটি প্রশ্নেরই উত্তর খুঁজছেন– কোন পথে এগিয়ে চলেছে বাংলা থ্রিলার সাহিত্য?
মারুফ একটা কাজ করতে গেলে নতুন কিছুর কথা ভাবে ৷ এই কাজটি তার প্রমাণ ৷ তার কাজের জন্যই সে খুবই প্রিয়জন আমার ৷ তার উদ্যোগ সার্থক হোক ৷ উপস্থিত আলোচকদের অনেকেই আমার প্রিয় ও কেউ কেউ বিশেষ শ্রদ্ধেয় ৷ শুভেচ্ছা
উত্তরমুছুনএকটি মন্তব্য পোস্ট করুন