১৬টি রাজ্য থেকে প্রকাশিত সাতটি ভারতীয় ভাষা থেকে অনুবাদ করা বই থেকে ১০টি উপন্যাস বেছে নিয়েছে পাঁচ সদস্যের বিচারক মণ্ডলী।রয়েছে ইসমাইল দরবারের ‘তালাশনামা : দ্য কোয়েস্ট’ এবং শাক্যজিৎ ভট্টাচার্যের ‘দ্য ওয়ান লেগড’।মূল বাংলা উপন্যাস থেকে ইংরেজি অনুবাদ।
এবারের জেসিবি সাহিত্য পুরস্কার বাংলার পাঠক ও প্রকাশনার জন্য অত্যন্ত আনন্দের। দীর্ঘতালিকায় স্থান পেয়েছেন তিনি বাঙালি। তাঁরা হলেন উপমন্যু চট্টোপাধ্যায়, তাঁর ইংরেজি উপন্যাস ‘লরেঞ্জো সার্চেস ফর দ্য মিনিং অফ লাইফ’-এর জন্য, ইসমাইল দরবার তাঁর ‘তালাশনামা : দ্য কোয়েস্ট’-এর জন্য (অনুবাদ ভি রামস্বামী) এবং শাক্যজিৎ ভট্টাচার্য তাঁর ‘দ্য ওয়ান লেগড’-এর জন্য (অনুবাদ ঋতুপর্ণা মুখোপাধ্যায়)।
১৬টি রাজ্য থেকে প্রকাশিত সাতটি ভারতীয় ভাষা থেকে অনুবাদ করা বই থেকে ১০টি উপন্যাস বেছে নিয়েছে পাঁচ সদস্যের বিচারক মণ্ডলী। লেখক, অনবাদক ও কবি জেরি পিন্টোর সভাপতিত্বে জুরির অন্য সদস্যরা হলেন অনুবাদ ত্রিদীপ সুহরুদ, শিল্প ইতিহাসবিদ ও কিউরেটর দীপ্তি শশীধরন, চলচ্চিত্র নির্মাতা ও লেখক শৌনক সেন এবং শিল্পী আকুই থামি। ‘মুস্তাচে’ (২০২০-র বিজয়ী) এবং ‘ভালি’ (২০২২ সংক্ষিপ্তি তালিকায় থাকা)-র পরে অনুবাদক জয়শ্রী কালাথিল এবার তৃতীয়বার জেসিবি তালিকায় ফিরেছেন। অন্যদিকে, ‘দ্য নেমেসিস’ (২০২৩ সংক্ষিপ্ত তালিকায় থাকা)-এর পরে দ্বিতীয়বার তালিকায় এসেছেন অনুবাদক ভি রামস্বামী। তালিকায় চারটি উপন্যাস রয়েছে যা লেখকদের প্রথম সৃষ্টি।
জেসিবি সাহিত্য পুরস্কারের সাহিত্য ডিরেক্টর মিতা কাপুর বলেন, ২০২৪-এর দীর্ঘ তালিকা ভারতীয় কথাসাহিত্যের একটি বৈচিত্র্যময় বিন্যাস উপস্থাপন করে। দশটি বই ভারতে জীবনের বৈচিত্র্যময় এবং জটিল প্রকৃতির একটি উদ্দীপক চিত্রনাট্য প্রদান করে। এই বছরের দীর্ঘ তালিকায় দৈনন্দিন জীবনের জটিলতা এবং আরও গভীর, অসাধারণ মুহূর্তগুলিকে উপজীব্য করে বিভিন্ন অভিজ্ঞতার সন্ধান করেছে।”
দীর্ঘ তালিকায় থাকা বইগুলি–
Chronicle of an Hour and a Half, Saharu Nusaiba Kannanari, Context/Westland
Hurda, Atharva Pandit, Bloomsbury India
Of Mothers and Other Perishables, Radhika Oberoi, Simon and Schuster India
Lorenzo Searches for the Meaning of Life, Upamanyu Chatterjee, Speaking Tiger Books
The Distaste of the Earth, Kynpham Singh Nongkynrih, Penguin India
Talashnama: The Quest, Ismail Darbesh, translated from the Bengali by V Ramaswamy, HarperCollins India
Maria, Just Maria, Sandhya Mary, translated from the Malayalam by Jayasree Kalathil, HarperCollins India
Sanatan, Sharankumar Limbale, translated from the Marathi by Paromita Sengupta, Penguin India
Leaf, Water and Flow, Avadhoot Dongare, translated from the Marathi by Nadeem Khan, Ratna Books
The One Legged, Sakyajit Bhattacharya, translated from the Bengali by Rituparna Mukherjee, Antonym Collections
কলকাতার অভিযান পাবলিশার্স থেকে প্রথম প্রকাশিত হয় ইসমাইল দরবেশের ‘তালাশনামা’ বইটি। বাঙালি মুসলিম সমাজের নানা জটিলতা, কুটিলতা, ধর্ম বিশ্বাসের বিচ্যুতি, রাজনীতির কানাগলি ও অভ্যন্তরীণ অস্থিরতার বাতাবরণে সূত্রপাত ঘটেছে বইটিতে। মসজিদের ইমামের সঙ্গে মসজিদ কমিটির দ্বন্দ্বের পাশাপাশি কুশীলবদের জীবন-জীবিকা, সংস্কার সেই সঙ্গে প্রতিটি চরিত্রের জীবনবোধ ও উদ্দেশ্য অনুসন্ধানের এক প্রচেষ্টা দেখা যাচ্ছে এই উপন্যাসে। সদনাহাটি গ্রামের দরদী, ভাবুক, শিক্ষিত যুবক মারুফের সঙ্গে ইমাম মাওলানা তাহিরুলের দার্শনিক দ্বন্দ্বও লক্ষ্যণীয়। আবার অন্যদিকে অবিবাহিত তাহিরুলের প্রেমে পড়া জেদি, মুক্তমনা রিজিয়ার জীবনযন্ত্রণাও ব্যথিত করে তোলে। কিন্তু অদ্ভুতভাবেই এই উপন্যাসের মোড় ঘুরে যায় সদনাহাটির সংখ্যালঘু অমুসলিম শিক্ষিত সুমনের সঙ্গে পালিয়ে গিয়ে রিজিয়ার বিয়ে করার বিষয়টিতে। তাই একটা প্রশ্ন তো থেকেই যায় যে কী এমন গোপন রহস্য লুকিয়ে রয়েছে এই বিবাহের পিছনে? তার থেকেও বড়ো রহস্য হল পালিয়ে যাওয়ার আগে রিজিয়া কেন মসজিদের দেওয়ালে লিখে গেল ইসলামবিরোধী কথাগুলো? উপন্যাসটি বারবার মনে রাখতে শেখায় প্রত্যেকের মধ্যেই রয়েছে আত্ম-অন্বেষণের এক প্রয়াস। আসলে কী চেয়েছে তারা? কীসের তালাশ?
লেখক শাক্যজিত ভট্টাচার্যের ‘একানড়ে’ প্রকাশিত হয়েছিল ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে সপ্তর্ষি প্রকাশন থেকে প্রকাশিত হয়েছিল। ‘একানড়ে’ আপাতদৃষ্টিতে হরর উপন্যাস হলেও আসলে একটি উচ্চাকাঙ্ক্ষী প্রয়াস, যা লোককথা, প্রবাদ ও লৌকিক দেবতাদের সম্বল করে আখ্যানের মোড়কে উপস্থাপিত হয়েছে। জাদুবাস্তবতার বুননে পরাবাস্তবতার চুমকি মেশানো উপাদানগুলোকে গ্রহণ করে এখানে উত্থান হয়েছে ইভিলের। সেই অশুভকে নির্মাণ করার মূল মাধ্যম হয়ে ওঠে ভাষাকাঠামো, যার মাণিক্যময় জৌলুষের অভ্যন্তরে ঘাতক ছুরির মতো সযত্নে হননবৃত্তান্ত লুকনো থাকে। এই আখ্যান দেখিয়ে দেয় ইভিল– একটি দৈনন্দিন স্বত্ত্বা। আপনি যখন স্বপ্নে বিভোর তখন নিঃশব্দে সেই ইভিল আপনার সর্বাংগ কুড়ে খায়।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন