নোবেল পুরস্কার হাঙ্গেরিয় লেখক লাসজলো ক্রাসনাহরকাইকে

ক্রাসনাহরকাইয়ের গদ্য গভীর, প্রবাহিত। দীর্ঘ বাক্যের মধ্যে দিয়ে চলে অস্তিত্ববাদী চিন্তা ও এক অনবরত অন্তর্দ্বন্দ্ব। তাঁর লেখনী পাঠককে যেন এক অবিরাম ধ্বংস ও মুক্তির চক্রে টেনে নেয়।

নোবেল পুরস্কার হাঙ্গেরিয় লেখক লাসজলো ক্রাসনাহরকাইকে

২০২৫ সালের সাহিত্যের নোবেল পুরস্কার পেলেন হাঙ্গেরিয় লেখক লাসজলো ক্রাসনাহরকাই (Laszlo Krasznahorkai)। সুইডিশ অ্যাকাডেমি জানিয়েছে, “বিপর্যয়ের অন্ধকারের মধ্যেও যে শিল্পের শক্তিকে নতুনভাবে প্রমাণ করেছেন, তাঁর সেই দৃষ্টিনন্দন ও দূরদর্শী সাহিত্যকীর্তির জন্য” তাঁকে এ বছর নোবেল দেওয়া হয়েছে। পুরস্কারের অর্থমূল্য ১১ মিলিয়ন সুইডিশ ক্রাউন (প্রায় ১.২ মিলিয়ন মার্কিন ডলার)।

১৯৫৪ সালে হাঙ্গেরির দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের গিউলা শহরে জন্মগ্রহণ করেন ক্রাসনাহরকাই। তাঁর সাহিত্যজীবনের সূচনা থেকেই তিনি মধ্য ইউরোপীয় ঐতিহ্যের ধারক— যে ধারার মূলস্রোত কাফকা থেকে থমাস বার্নহার্ড পর্যন্ত বিস্তৃত, যেখানে জীবনের অসারতা, বিস্ময় ও গোঁড়ামি একসঙ্গে মিশে থাকে।

তাঁর প্রথম উপন্যাস ‘Satantango’ (সাটানট্যাঙ্গো) ১৯৮৫ সালে প্রকাশিত হয় এবং প্রকাশের পরই তা হাঙ্গেরি সাহিত্যজগতে আলোড়ন তোলে। দূরবর্তী এক গ্রামীণ অঞ্চলে মানবজীবনের হতাশা, লোভ ও পতনের যে মায়াবী চিত্র তিনি আঁকেন, তা তাঁকে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির পথে এগিয়ে দেয়। এই উপন্যাসটি পরে হাঙ্গেরির কিংবদন্তি পরিচালক বেলা তার এক মহাকাব্যিক চলচ্চিত্রে রূপান্তর করেন।

এরপর তাঁর আরও বহু উল্লেখযোগ্য কাজ পাঠকের মনে গভীর ছাপ ফেলেছে। ‘The Melancholy of Resistance’, ‘War and War’ এবং ‘Baron Wenckheim’s Homecoming’— এই উপন্যাসগুলিতে তিনি মানবসভ্যতার ভয়াবহতা, অস্তিত্ব সংকট ও মানসিক বিপর্যয়ের মধ্য দিয়ে মানুষের স্থিতিশীলতার এক অনন্য শিল্পরূপ সৃষ্টি করেছেন। তাঁর সাম্প্রতিক উপন্যাস ‘Herscht 07769’ জার্মান সমাজের অস্থিরতা ও বাস্তবতার নির্ভুল প্রতিচ্ছবি তুলে ধরে— যার কারণে সমালোচকেরা একে সমসাময়িক ‘মহান জার্মান উপন্যাস’ বলে অভিহিত করেছেন।

ক্রাসনাহরকাইয়ের গদ্য গভীর, প্রবাহিত। দীর্ঘ বাক্যের মধ্যে দিয়ে চলে অস্তিত্ববাদী চিন্তা ও এক অনবরত অন্তর্দ্বন্দ্ব। তাঁর লেখনী পাঠককে প্রায় সম্মোহিত করে— যেন এক অবিরাম ধ্বংস ও মুক্তির চক্রে টেনে নেয়।

উল্লেখ্য, গত বছর ২০২৪ সালে সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পেয়েছিলেন দক্ষিণ কোরিয়ার লেখিকা হান কাং, যিনি ইতিহাসের ক্ষত ও মানুষের ভঙ্গুরতাকে সাহসিকতার সঙ্গে তুলে ধরেছিলেন। চিকিৎসা, পদার্থবিদ্যা ও রসায়নের পর এবারের নোবেল মরসুমে সাহিত্যের পুরস্কার ঘোষণার মধ্য দিয়ে সাহিত্যপ্রেমীদের নজর এবার পড়ল হাঙ্গেরির এই নিভৃতচারী লেখকের দিকে— যাঁর কলমে ধ্বংসের মধ্য দিয়েই ফুটে ওঠে শিল্পের চিরন্তন পুনর্জন্ম।

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন