অমর্ত্য সেনের স্মৃতিকথা হোম ইন দ্য ওয়ার্ল্ড: আ মেমোরি প্রকাশিত


নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেনের স্মৃতিকথায় পূর্ববঙ্গ তথা ঢাকার প্রসঙ্গ না থাকাটা প্রত্যাশিত নয়। কারণ, তাঁর পিতৃপুরুষের ভিটে বাংলাদেশের মানিকগঞ্জে। তাঁর শিক্ষাজীবনেরও শুরু ঢাকার সেন্ট গ্রেগরি উচ্চবিদ্যালয়ে। দেশভাগের পর অমর্ত্য সেনের পরিবার ভারতে থিতু হয়। সম্প্রতি অমর্ত্য সেনের স্মৃতিকথা প্রকাশিত হয়েছে। আর এখানে নিজের জীবনের নানা ঘটনার টুকরো টুকরো যেসব ছবি তিনি এঁকেছেন, তার মধ্যে রয়েছে ঢাকার স্মৃতিও।
বইটিতে এমন সব ঘটনা জানা যাচ্ছ, যা যে কোনও কারও জীবনে ঘটতে পারে। কিন্তু ব্যক্তিটি যখন অমর্ত সেন, তখন তার থেকে আমাদের শিখবার অনেক রসদ মিলবে। যেমন, অমর্ত্য সেনের বয়স সে সময় ১৮। হঠাৎ তিনি খেয়াল করলেন, তাঁর মুখের ভেতরের একটি অংশ ফুলে উঠেছে, যাকে বলে ‘লাম’। এটা কি ক্যানসারের লক্ষণ? দুজন চিকিৎসকের সঙ্গে কথা বললেন তিনি। তবে তাঁরা তাঁকে তেমন গুরুত্ব দিলেন না। কিন্তু অমর্ত্য সেনও নাছোড়বান্দা। নিজেই লাইব্রেরি থেকে ক্যানসার সংক্রান্ত বইপত্র সংগ্রহ করে পড়তে শুরু করলেন। বুঝতে
পারলেন যে তাঁর মুখের ভেতর যে টিউমার বড় হচ্ছে, সেটা আসলে স্কোয়ামাস সেল কার্সিনোমা, যা মূলত ক্যানসার। এমন অনুসন্ধানী মন নিয়েই বেড়ে উঠছিলেন অমর্ত্য সেন। ‘সবার আমি ছাত্র’ কথাটি যেন তাঁর ক্ষেত্রেই খাটে। কারণ, তিনি কেবল অর্থনীতিবিদ নন, বহুমাত্রিক জ্ঞানে প্রজ্ঞাবান এক ব্যক্তিত্ব। দর্শন থেকে ইতিহাস, সাহিত্য, বিজ্ঞান, গণিত এবং অবশ্যই অর্থনীতি– সবই রয়েছে তাঁর আগ্রহের কেন্দ্রে। ফলে ‘হোম ইন দ্য ওয়ার্ল্ড : আ মেমোরি’ নামে অমর্ত্য সেনের স্মৃতিকথায় এসব প্রসঙ্গ যে খুব ভালোভাবেই স্থান পেয়েছে, সেটা বলাবাহুল্য।
প্রকাশনা সংস্থা পেঙ্গুইন থেকে ৪৮০ পৃষ্ঠার এই বই প্রকাশিত হয়েছে ৮ জুলাই। বহু প্রতীক্ষিত এ স্মৃতিকথায় অমর্ত্য সেনের জীবনের বিভিন্ন অধ্যায় অর্থাৎ ঢাকা থেকে শান্তিনিকেতন, কলকাতা থেকে কেমব্রিজ, মার্ক্স-কেনস-অ্যারো থেকে ১৯৪৩ সালের মন্বন্তর– এসব বিচিত্র ঘটনা উঠে এসেছে।
নিজের স্মৃতিকথায় বাঙালি সংস্কৃতিকে চমৎকারভাবে উপস্থাপন করেছেন অমর্ত্য সেন। সেকালে হিন্দু-মুসলিম দ্বন্দ্বের বাইরেও যে তাদের মধ্যে সম্প্রীতিমূলক এক ধরনের ভালোবাসার বন্ধন ছিল, সেটিও লিখেছেন তিনি। উল্লেখ করেছেন সেন পরিবারের অনেক সদস্যের পরাধীন ভারতে ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনে যুক্ত থাকার কথা। বইয়ের অনেকটা অংশজুড়েই রয়েছে ব্রিটেন ও ইন্ডিয়ার সংঘাতময় সম্পর্কের বর্ণনা। বইটির জন্য এত দিন মুখিয়ে ছিলেন পাঠকেরা। অবশেষে করোনাকালে পাঠকদের হাতে পৌঁছাল ‘হোম ইন দ্য ওয়ার্ল্ড: আ মেমোরি’।

প্রতিনিধি

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন