এক ডজন বিশ্বখ্যাত বই, যা নিষিদ্ধ হয়েছিল

 


উইলিয়াম টাইন্ডেল অনূদিত ‘বাইবেল’

Tyndale Bible

অশ্লীলতার কারণে প্রথম যে বইটি নিষিদ্ধ হয় সেটি ছিল খ্রিস্টানদের পবিত্র বাইবেল। ইংল্যান্ড থেকে প্রকাশিত উইলিয়াম টাইন্ডেল অনুদিত বাইবেল নিষিদ্ধ হওয়ার কারণ ছিল অশ্লীলতা (বিবাহবিচ্ছেদ নিয়ে আলোচনা)। তৎকালীন অষ্টম হেনরি নিজের জীবনের বিবাহ বিচ্ছেদ নিয়ে বিস্তর ঝামেলায় পড়েছিলেন। তিনি চেয়েছেন বিবাহ বিচ্ছেদ নিয়ে কোথাও যেন আলোচনা না হয়। তাই পরিশেষে পুড়িয়ে ফেলা হয় অনুদিত বাইবেলের ছ’হাজার কপি। অনুদিত বাইবেলটি নিষিদ্ধ হওয়ার পর টাইন্ডেল প্রানে রক্ষার জন‌্য দেশত্যাগ করেছিলেন। কিন্তু মজার ব্যাপার হল বর্তমানে সেই অনুদিত বাইবেলটিই পুরো বিশ্বের মানুষ অনুস্মরণ করছে।

দ্য রামায়না অ্যাজ টোল্ড বাই অব্রে মেনেন

The Ramayana, As Told by Aubrey Menen

এই বইটি ছিল নিষিদ্ধ ঘোষিত আরেকটি ধর্মীয় গ্রন্থ। আধুনিক আঙ্গিকে রামায়ণকে ব্যাখ্যা করায় গ্রন্থটি নিষিদ্ধ করা হয়। দেব দেবীকে মানবরূপে উপস্থাপনের কারণে ভারত সরকার গ্রন্থটি ১৯৫৬ সালে প্রকাশিত হওয়ার সঙ্গেসঙ্গে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে।

লেডি চ্যাটারিজ লাভার

Lady Chatterley's Lover

ডি এইচ লরেন্স এর বইটিতে ঘন ঘন fuck ও sex শব্দ দুটি ব্যবহৃত হওয়ায় বইটি নিষিদ্ধ করা হয়। পরে অবশ্য বইটি নির্দোষ প্রমাণিত হয়।

ললিতা

Lolita

ভ্লাদিমির নবকভের লেখা এই বইটিতে খোলাখুলি যৌন বিবরণের কারণে নিষিদ্ধ করা হয়। কিন্তু মজার ব্যাপার হল নিষিদ্ধ হওয়ার পর সকলের আগ্রহ আরও বেড়ে যায় বইটি নিয়ে। এখন সারা বিশ্বে ললিতা শব্দটি যৌনতার সমার্থক হয়ে দাড়িয়েছে।

দ্য অ্যাডভেঞ্চার অব হাকলবেরিফিন

Adventures of Huckleberry Finn

মার্ক টোয়েনের ‘দ্য অ্যাডভেঞ্চার অব হাকলবেরি ফিন’ ভাষার অজুহাত দেখিয়ে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়। বইটি মূলত বর্ণান্ধতার কারণে মার্কিনিরা নিষিদ্ধ ঘোষণা করে। ১৮৮৪ সালে প্রকাশিত এই বইয়ে শ্বেতকায় ছেলে এবং কৃষ্ণাঙ্গ মানুষের বন্ধুত্ব দেখানো হয়, যা শ্বেতঙ্গ শাসকেরা স্বাভাবিকভাবে মেনে নিতে পারেনি। বর্তমান বিশ্বে ‘দ্য অ্যাডভেঞ্চার অব হাকলবেরি ফিন’ বইটি সুপাঠ্য।

অ্যানিমাল ফার্ম

Animal Firm

জর্জ অরওয়েলের ‘অ‌্যানিমাল ফার্ম অ্যা ফেয়রি টেল’ বইটি মূলত সাংকেতিক উপন্যাস। এ উপন্যাসে রাশিয়ার স্টালিন যুগের ভয়াবহতাকে তুলে ধরা হয়েছিল। বইটি রাশিয়াতে নিষিদ্ধ হওয়ার পরে অ‌্যানিমাল ফার্ম নামে মার্কিন মুল্লুকে প্রকাশিত হয়।

প্রজাপতি

Projapati

সাহিত্যিক সমরেশ বসুর ‘প্রজাপতি’ অশ্লীলতার অভিযোগে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছিল। ১৮ বছর বন্ধ ছিল এর প্রকাশ। লেখক বুদ্ধদেব বসু আদালতে সাক্ষ্য দিতে গিয়ে বলেছিলেন, “যৌনতার কারণে ‘প্রজাপতি’ নিষিদ্ধ হলে বাইবেল মহাভারতেকেও নিষিদ্ধ করতে হয়।” পরে বইটির উপর থেকে সকল আইনি বাধা তুলে নেওয়া হয়।

এ ফেয়ারওয়েল টু আর্মস

A Farewell to Arms

প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময়কার আধা-আত্মজীবনীমূলক এই উপন্যাসটি প্রকাশিত হয় ১৯২৯ সালে ইটালিতে। , আরনেস্ট হেমিংওয়ের লেখা উপন্যাসটিতে কাপোরেত্ত যুদ্ধক্ষেত্র থেকে ইতালীয় সৈন্যদের পিছু হটার ঘটনাটি ভীরুতা হিসেবে উল্লেখ এবং অশ্লীলতার দায়ে সেই সময়কার আদালত বইটি নিষিদ্ধ ঘোষণা করে।

এলিস’স অ্যাডভেঞ্চার ইন ওয়ান্ডারল্যান্ড

Alice's Adventures in Wonderland

লুইস ক্যারলের লেখা বইটি সম্পূর্ণ অপ্রত্যাশিত ও অদ্ভুত একটি কারণে চিনা সরকার সে দেশে নিষিদ্ধ করেছিল ১৯৩১ সালে। হানান প্রদেশের একটি আইন ছিল যে, কোনও পশুর কণ্ঠে কোনওভাবেই মানুষের ভাষা তুলে দেওয়া যাবে না। এতে পশুকে মানুষের সমমর্যাদায় নিয়ে আসা হবে। কিন্তু বইটিতে বিড়াল, মানুষের মতো করে কথা বলতে পারে। আর এজন্যেই বইটি নিষিদ্ধ হয়ে যায়।

অল কোয়ায়েট অন দ্য ওয়েস্টার্ন ফ্রন্ট

All Quiet on the Western Front

প্রথম বিশ্বযুদ্ধে অংশগ্রহণকারী এক জার্মান সৈনিক যিনি পরবর্তীতে পৃথিবীর সবচেয়ে অনুভূতিপ্রবণ ঔপন্যাসিকদের একজন হয়ে ওঠেন– তিনি এরিক মারিয়া রেমার্ক। তার রচিত বিখ্যাত যুদ্ধবিরোধী উপন্যাস অল কোয়ায়েট অন দ্য ওয়েস্টার্ন ফ্রন্ট (মূল নাম- ইম ওয়েস্তেন নিখৎস নুয়্যেস)- সে সময়ে জার্মানির সমরনীতি ও যুদ্ধের বীভৎসতার দিকে দুঃসাহসিক আঙুল তুলেছিল। ১৯২৯ এ প্রকাশিত এ বইটিকে নিষিদ্ধ করেছিল জার্মান সরকার। অতঃপর ১৯৪১ এ আরও একটি বিশ্বযুদ্ধ সংঘটিত হয়।

ক্রয়টজার সোনাটা

Kreutzer Sonata

লিও টলস্টয় এই বই লেখার আগে কোনও বিতর্কে ছিলেন না। তবে এই বইয়ের কাহিনি এরকম যে, এক স্বামী তাঁর স্ত্রীকে খুন করেন স্ত্রীর পরকিয়ায় ঈর্ষান্বিত হয়ে। বইটি এখনও নিষিদ্ধ তালিকায় অবস্থান করছে।

ইউলিসিস

Ulysses

সাহিত্যের ইতিহাসে আরেকটি অবাক করার মতো ঘটনা ঘটিয়েছিলেন জেমস জয়েস তাঁর বিখ্যাত ইউলিসিস লিখে। তিনি ১৯০৪ সালে জুন মাসে মাত্র ১৮ ঘণ্টার ঘটনা (সকাল ৮টা থেকে বিকাল ২টা) নিয়ে উপন্যাস লিখেছিলেন। উপন্যাসটি প্রকাশিত হওয়ার পর অশ্লীলতার অভিযোগে নিষিদ্ধ হয়ে যায়। উপন্যাসটির ৪৯৯টি কপি পুড়িয়ে ফেলা হয়। উপন্যাসটি এত তথ্যবহুল ছিল যে জয়েস বলেছিলেন “ডাবলিন শহর যদি কোনওদিনে ধ্বংস হয়ে যায় তাহলে হুবহু শহরটি গড়ে তোলা যাবে তার এই ইউলিসিস থেকে।” বইটি কেবল উপন্যাস নয় জীবন্ত ইতিহাসও বটে। এটি উইলিসিস সেরা উপন্যাসগুলির মধ্যে একটি।

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন