আদিত্যর পরের গল্পটা

প্রণব সেন

অঙ্কণ : শান্তনু দে


যদি ভেবে থাকেন কিউবিকল থেকে সরাসরি রঞ্জনাকে দেখা যেত বলে সুমনবাবুর জায়গা বদল করা হয়েছে, তবে বড় ভুল হবে। ওঁর জায়গা বদলটা নিছকই অফিসের ইন্টেরিয়ওর চেঞ্জের জন্য। সত্যিই এর মধে্য আর অন্য কোনও গল্প নেই।

সুমনবাবু আগে যেখানে বসতেন, মাথাটা একটু উঁচু করলেই চলত। যে মেয়ের সঙ্গে চোখাচুখি হত তাকে ডেকে নিতেন কিউবিকলে। সামনের চেয়ারে বসিয়ে কথা হত। তঁারা সবাই ওঁর অধস্তন কর্মী। যদি ভাবেন নিছক গল্প কি! তাতেও আমি বলব, ঠিক হচ্ছে না। কাজের কথাই হত। এর মাঝে সুমনের ডাকে কিংবা স্বতপ্রনোদিত হয়ে কেউ সেই আলোচনায় যোগ দিলে তাদের কিউবিকলের বাইরে দেওয়ালে বুক ঠেকিয়ে দঁাড়াতে হত।

এখনও তেমনই সবকিছু চলে বটে, কিন্তু সে বসন্ত নেই। এবার সুমনবাবুকে যে কিউবিকলে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে সেটা বেশ বড়। তবে মুশকিল হল, এখানে তেমন প্রিভেসি নেই। একই কিউবিকলে দু’জনার ডেস্ক। আগের জায়গায় ওঁর ডেস্কটপের মনিটরে কেউ উঁকি মারতে পারত না। এখানে সেই স্বস্তি নেই। তবে একটাই বঁাচোয়া, যার সঙ্গে সুমনবাবুকে কিউবিকল শেয়ার করতে হয়েছে, তিনি আবার খুব কম সময়ই ডেস্কে থাকেন। বলা যেতে পারে অফিসের পুরো সময়টাই তঁার বাইরে বাইরে কাজ। বিকেলের আগেটায় অফিসে ঢুকে কম্পিউটারে থেকেঠকাঠক-ঠকাঠক রিপোর্ট মেল করে চলে যান। যেন কোনও ঘোরের মধ্যে থাকেন। কারও সঙ্গে, এমনকী নিকট প্রতিবেশী সুমনবাবুর সঙ্গেও বিশেষ কথা বলেন না। রটনা, মালিকের খাস লোক। যাই হোক, সেই সময় কাউকে ডেকে গুজব করার, থুরি কাজ বোঝানোর পরিস্থিতি থাকে না সুমনবারও। তঁার তখন কাজ বুঝে নেওয়ার পালা। কর্পোরেট অফিসে সেই সময় সবাই মহাব্যস্ত।

সে যাক গে। যা বলছিলাম, সুমনবাবুর এখনকার ঠঁাইটা যেন একটা বিচ্ছিন্ন দ্বীপভূমি। একবার চেয়ারে বসে পড়লেই একদম একা। দু’হাজার স্কোয়ার ফিট ফ্লোরের মূল ভূখণ্ড থেকে যোগাযোগহীন। চেয়ারে হেলান দিয়ে ঘাড় উঁচু করলে কেবল দেওয়ালে দেওয়ালে টাঙানো টিভি স্ক্রিনগুলোতে নিঃশব্দে শেয়ার বাজারের ওঠা-পড়া দেখতে পান। কখনও সখনও চেয়ার ছেড়ে উঠে দঁাড়িয়ে ফ্লোরে চোখ চারান। তখন তঁার চোখগুলো দেখে মনে হয়, যেন নিঃসঙ্গ কোনও জাহাজের নাবিক মহাসমুদ্রে কোনও বন্ধু-দ্বীপ খঁুজছেন। চোখের ইশারায় ডাকার কোনও সুযোগ নেই।

অসুবিধা অনেক। কিন্তু সুবিধা একটাই, তঁার কিউবিকলের সামনে দিয়ে সবার নিত্য যাতায়াত। নানা কাজে। সে সময় কাউকে ডেকে নেওয়ার সুযোগ আছে। সে সুযোগ তিনি নেন।

এটা ঠিক হচ্ছে না। আপনি ভাবছেন, সুমনবাবু শুধু মেয়েদেরই তঁার কিউবিকলে ডাকেন! অবশ্য, আপনার চিন্তা একেবারে ভুল বলা চলে না। আচ্ছা, আপনাকে আমি এক্ষেত্রে দশে আট দিচ্ছি। কারণ, সুমনবাবু কচিৎ ছেলেদেরও ডেকে কথা বলেন। বিষয়বস্তুর রকমফের থাকে। মুড-মর্জিরও।

মাঝেমধে্য কিউবিকল ছেড়ে বেরিয়ে ফ্লোরের ইতি-উতি ঘুরে বেড়ান সুমনবাবু। সবাই তার পছন্দের নয়। তাদের এড়িয়েই চলেন। পছন্দের লোকগুলোর ডেস্কে গিয়ে মৃদু সরে আলাপচারিতা করতে দেখা যায় তঁাকে। ব্যাপার জমে গেলে বেশ কিছুক্ষণ সেখানে কাটিয়ে দেন। তখন তঁাকে চেয়ার এগিয়ে দিলেও বসবেন না। অধস্তন কর্মীটিকে কঁাধ চেপে চেয়ারে বসিয়ে নিজে দঁাড়িয়ে কথা বলে যাবেন অনর্গল। কারও চোখে চোখ থাকে না। তখন তঁার নজর পুরো ফ্লোরে ঘোরে। যেন স্মৃতির অতল থেকে ঘটনাগুলো একের পর এক তুলে আনছেন।

সুমনবাবু প্রাজ্ঞ ব্যক্তি। কর্পোরেট দুনিয়ার অজস্র খবর তঁার জানা। রংচঙে দুনিয়ার আড়ালের কেচ্ছা-কেলেঙ্কারি, লোভ, প্রলোভন, প্রতিহিংসার লড়াই। দুর্দান্ত কালেকশন তঁার। ফি শনিবার বিকেলে রয়েল ক্লাবে যাবেনই তিনি। সেখানে কর্পোরেটের হত্তা-কত্তাদের আড্ডা। সেখান থেকেই সংগ্রহ। তবে যেটা গল্প করেন, তা মোট জানার একটি অতি সামান্য ভগ্নাংশ মাত্র। বাকিটা তুলে রাখেন। একদিন আদিত্যকে কথা প্রসঙ্গে বলেছিলেন, রিটায়ারমেন্টের পর এই সব নিয়ে বই লিখবেন। সে নেচে উঠে বলেছিলাম, বেশ হবে। কর্পোরেট কর্তাদের অন্দরমহল নিয়ে বাজারে তেমন কোনও বই নেই। ভাল কাটবে।

পুরুষ সহকর্মীরা তঁার গার্ল-প্রীতি নিয়ে আড়ালে হাসি-ঠাট্টা করে থাকেন। বিলক্ষণ জানেন সুমনবাবু। কিন্তু মহিলা সহকর্মীরা কখনও ‘বুড়োর ভীমরতি’ বলে তঁাকে তাচ্ছিল্য করেছেন, এমনটা আদিত্যর অন্তত জানা নেই। তেমনটা হলে নিশ্চয় তার অজ্ঞাত থাকত না। করবেই বা কেন? চাকরি থেকে অবসরের বয়স পেরিয়ে গেছে। তিন বছর ধরে এক্সটেশনে আছেন। শরীরে ছাপ পড়েছে বয়সের। কিন্তু মনের বয়স হয়নি।

মাথার চুল পাতলা হয়েছে। বেশিরভাগটাই সাদা। ঘাড় ছাপিয়ে বেশ খানিকটা লম্বা। কান চাপা। গালে পঁাচ এমএম ট্রিম করা দাড়ি। সবটাই সাদা। ভ্রুর মেদ ঝুলে এসে চোখগুলো ইষৎ ছোট হয়ে গেছে। কিন্তু চাওনিটা এখনও অত্যন্ত প্রাণবন্ত। টেবিলে ঝুঁকে যখন কোনও অল্পবয়সী মহিলা সহকর্মীর সঙ্গে কথা বলেন মুখে অদ্ভূত হাসি খেলে। চকচক করে চোখ দু’টো। সেই চাওনিতে কে তঁার অ্যাডমায়ার হবেন না!

আদিত্যর মোবাইলে হোসয়াটসঅ্যাপে মেসেজ ঢুকল। সুমনবাবু : একবার আসতে পারেন?

আদিত্য চেয়ার ছেড়ে উঠে দঁাড়িয়ে দেখল নিজের কিউবিকলেই আছেন তিনি। মাথার খানিকটা দেখা যাচ্ছে। বসের আজ্ঞা। যেতে তো হবেই। তবু একটা রিপ্লাই দেওয়া সৌজন্য। একটা কৃতার্থসূচক ইমোজি যথেষ্ট। সেটি খুলে দেখার আগেই সামনে হাজির আদিত্য। সুমনবাবু চোখের ইশারায় চেয়ার দেখিয়ে বসতে বললেন। বেশ খানিক্ষণ চোখে হাসি ফুটিয়ে চেয়ে রইলেন আদিত্যর দিকে। এই চাওনিটা রপ্ত করা নয়। যাকে তিনি এমনভাবে দেখেন, সেই সময়টায় তার মনে হয় যেন এক্স-রে’র মতো ভিতরটা দেখতে পাচ্ছেন। সুমনবাবু বললেন, ‘কী শুনছেন?’

এ প্রশ্নে বেশ খানিকটা অবাক হল আদিত্য। ডাক পেয়ে সে ভেবেছিল তার সঙ্গে হয়তো নিজের বই লেখা নিয়ে কোনও আলোচনা করবেন সুমনবাবু। কারণ, অফিসে দিনভর এক্সেল ম্যাপিং করলেও রীতিমতো সাহিত্যচর্চা করে আদিত্য। কলেজে পড়ার সময় বন্ধুদের সঙ্গে নিয়ে একটা লিটল ম্যগাজিন করতো। খবরের কাগজে কাজের সাধ ছিল। সেটা পূর্ণ হয়নি। এখনও অবশ্য সাহিত্যচর্চা চলে। প্রচুর বই কেনে আর পড়ে। ফেসবুকে নিয়মিত কবিতা-অনুগল্প পোস্ট করে। তাতে প্রচুর লাইক পড়ে, কমেন্ট আসে। সুমনবাবু সেটা জানেন। মাঝেমাঝেই সমসাময়িক সাহিত্য নিয়ে আদিত্যর সঙ্গে আলোচনায় বসেন। তঁার অবশ্য ম্যানেজমেন্টের বাইরে অন্য বই তেমন পড়া হয়ে ওঠেনি। এখন সাহিত্য পড়াশোনা বলতে খবরের কাগজের রবিবারের পাতা। ব্যাস ওইটুকুই। সে কারণেই ভরসা সুমন। কর্পোরেট কেচ্ছা নিয়ে বই লেখার বাসনাটা জিগির দেওয়ার পর, মাঝেমাঝেই আদিত্য ডেকে কথা পাড়েন। তাই অাজও তেমনই কিছু ঘটবে বলে আশা করেছিল আদিত্য।

অপ্রত্যাশিত প্রশ্নের মুখে পাল্টা প্রশ্ন আদিত্যর, ‘কিসের কী শুনবো?’

সুমনবাবু সেভাবেই বললেন, ‘কানাঘুষো। সত্যিই তেমন কিছু কানে আসেনি আপনার! বলছেন?’

‘উঁ হু।’ ভ্রু কঁুচকে মাথা নাড়ে আদিত্য।

‘কান খোলা রাখুন। শুনতে নিশ্চয় পাবেন।’

‘আপনিই বলুন।’

‘তবে তো হয়েই গেল। খাটুন। একটু খাটুন।’

ধঁাধা নিয়ে নিজের কিউবিকলে ফিরে এল সুমন। দু’টো আটতলা টাওয়ারের অফিস। কোনায় কোনায় গল্প ঘুরে বেড়ায়। চোখ-কান খোলা রাখলেই জানা যায়। ক্যান্টিনের লাঞ্চে বা কফি ব্রেকে ওসব নিয়ে কথা বলে না কেউ। দেওয়ালের কান আছে। চোখও আছে। দিকেদিকে সিসিটিভি। বসের অ্যাফেয়ার্স নিয়ে গুঞ্জন মোটেই ঠিক বাত নয়! কিন্তু তবু গল্প সংক্রমন আটকানো যায় না।

পঙ্কজবাবু স্ট্যাডেলের পার্টিতে নাকি উর্মির হাত ধরে টেনেছেন। ক’দিন ধরে ব্যাপারটা নিয়ে খুব কানাঘুষো চলছে। অফিস করিডরে নয়। বাইরের রাস্তায় সিগারেটের দোকানের আশপাশে। দুই টাওয়ারে সর্বত্র স্মোক অ্যালার্ম বসানো আছে। পুরুষ-মহিলা, সব কর্মীকে তাই ধূমপানের জন্য নিচের রাস্তায় আসতে হয়। সেখানে ছোট পরিসরে আলোচনা শুনেছে আদিত্য।

শোনা কথা, বসেদের সেই পার্টিতে নাকি ব্যাপারটা নিয়ে উর্মি বেশ সিনক্রিয়েট করেছে। এইচআরে অভিযোগ জানিয়েছে কিনা, কারও কাছে খবর নেই। কেউ কেউ বলছে, সম্ভবত করেনি। পঙ্কজবাবু নাকি পরে ক্ষমা চেয়ে নিয়েছেন। #মিটু’তে নাম তুলে দেবে, নাকি হুমকি দিয়েছিল উর্মি।

ব্যাস এই পর্যন্তই। ব্যাপারটা তো ওখানেই থেমে গেছে। সেটা নিয়ে আর কোনও ঘেঁাট পাকিয়েছে কি? সুমনবাবু কি ওই ব্যাপার নিয়ে কিছু ইঙ্গিত করছেন?

হতে পারে। ভাবতে থাকে আদিত্য। কারণ, বসেদের উচ্চতায় যে খবর থাকে না, তা নিচু স্তরে কর্মীদের কাছে চালাচালি হয়। কিন্তু এই বিষয়টিতে সুমনবাবুর ইন্টারেস্ট থাকার কারণ কী? তিনি কি পঙ্কজবাবুর প্রতি জেলাস?

কাজ করতে করতেও সুমনের কাছে ক্রমশঃ যুক্তিগ্রাহ্য হতে থাকে সম্ভাবনাটা। শোনা কথা, মহিলা-প্রীতি নিয়ে কোনও একদিন পার্টিতে নাকি সুমনবাবুকে রীতিমতো ফ্যসাদে ফেলে দিয়েছিলেন পঙ্কজবাবু। তাই তঁার ব্যাপারটা পাকলে যুৎসই একটা জবাব হবে।

‘কিছু গন্ধ পাচ্ছো?’

আদিত্য ফিরে দেখল ঈশিতা। কফি মাগ নিয়ে ওর টেবিলেই বসে পড়ল সে। আদিত্য বলল, ‘টেম্পটেশন?’

হো হো করে হেসে ইশিতা বলল, ‘ওঃ তুমি পারো বটে। আমি আমার পারফিউমের কথা বলছি না।’

‘তবে?’

‘অফিসের।’

‘কই, না তো। কেন কিছু শুনেছো নাকি?’

‘না। তবে কিছু একটা ঘটছে, বা ঘটবে।’

কফিতে চুমুক দিয়ে মাথা দোলাতে থাকে আদিত্য। ইশিতা ফের বলে, ‘বাই দ্য ওয়ে। বস তোমাকে কিছু আভাস দেননি? অবশ্য আমার এটা তোমাকে জিজ্ঞাসা করা ঠিক নয়। তবু করে ফেললাম।’

আন্দাজে ঢিল মারে আদিত্য, ‘ওই একই প্রশ্ন। যেটা তোমাকে করেছে।’

‘তুমি কীভাবে জানলে?’

‘তুমি উত্তরটা পাচ্ছ না বলেই আমাকে জিজ্ঞাসা করছো, তাই না?’

ইশিতা হাসে। তারপর বলে, ‘বস তোমার প্রশংসায় একেবারে পঞ্চমুখ। বললেন, ফেসবুক পোস্টে তোমার লেখা গল্প-কবিতাগুলো খুব ইন্টারেস্টিং।’

‘বুঝলাম।’ বলে আদিত্য। তারপর উঠে পড়ে।

সুমনবাবুর অ্যাডমায়ারদের একজন ঈশিতা। কিউবিকলে তার সঙ্গে সুমনবাবুর কী কথা হয় আদিত্য কোনওদিন তা জানতে চায়নি ঈশিতার কাছে। কৌতূহল চেপে গিয়েছে। কৌতূহলই তো! ওর কিউবিকলেই একপাশে বসে ঈশিতা। কাজের ফঁাকে অনবরত হোয়াটসঅ্যাপ করে। যেন ওর সঙ্গে দু’টো কথা বলা দূরে থাক তাকানোরও ফুরসৎ পায় না। হঠাৎ, কফি ব্রেকে কথা বলতে আসায় একটু অবাকই হয়েছিল আদিত্য। ইদানিং, এটা ও করছে।

দু’বার একটু অন্য ধরনের ঘটনা ঘটে গিয়েছিল। সুমনবাবু তখন পুরনো কিউবিকলে বসতেন। একদিন হয়েছে কী, বেশ ক’জন ছেলেমেয়েকে নিয়ে হাল্কাভাবে কথাবার্তা বলছিলেন সুমনবাবু। কোনও প্রসঙ্গ উঠতে গার্গীর ডাক পড়ে। গার্গী তখন নতুন এসেছে। এটাই ওর প্রথম চাকরি। কেউ কেউ ওর ফেসবুক প্রোফাইল দেখে জেনে ফেলেছে ও শাস্ত্রীয় সঙ্গীত গায়। আর সেটা সুমনবাবুকে জানিয়েও দিয়েছে। গার্গী কিউবিকলের সামনে এসে খুব অনাগ্রহের সঙ্গে বলেছিল, ‘হ্যঁা, বলুন কী বলবেন।’

সুমনবাবু স্বভাবসিদ্ধভাবে বলেছিলেন, ‘আসুন না, ভিতরে আসুন, বসুন।’

গার্গী মুখে অদ্ভূত অভিব্যক্তি ফুটিয়ে বলেছিল, ‘না, বলুন, এখান থেকেই বুঝতে পারছি।’ মেয়ে অতি সিরিয়াস! যেন হাতের জরুরি কাজ ফেলে এসেছে। অস্বস্তি লুকতে পারেননি সুমনবাবু। তবে সাঙ্গরা পরিস্থিতি ট্যাকেল করে ফেলেছিল খুব সুচারুভাবে। তাকে আর কখনও ডাকেননি সুমনবাবু।

এরপরের ঘটনাটা ভুবনেশ্বর অফিস থেকে ট্রেনিংয়ে আসা রেবতিকে নিয়ে। তাকে কফি ব্রেকে সঙ্গে যেতে বলেছিলেন সুমনবাবু। সেখানে কথা বলবেন। বসের কথায় আপত্তি করার উপায় ছিল না। কিন্তু গার্গি অস্বস্তির কথা বলেছিল ইশিতাকে। ব্যাপারটা শুনে খুব খারাপ লেগেছিল আদিত্যর। ভদ্রলোকের কোনও দুরভিসন্ধি নেই, আদিত্যর পর্যবেক্ষণ। তাই তঁাকে কেউ ভুল বুঝলে খারাপ লাগে। আসলে কায়া-বৃদ্ধ লোকটির সঙ্গে মনের সেতু তৈরি হয়েছে এক যুবকের।

দু’দিন পর আবার ডাক। এবার ইন্টারকমে।

কিউবিকলে চেয়ারে হেলান দিয়ে মোবাইলে মেসেজ টাইপ করছিলেন সুমনবাবু। ভীষণ টেক স্যাভি। এই বয়সেও ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপের ব্যবহার রপ্ত করে ফেলেছেন। অন-লাইন মার্কেটিং খুব প্রিয় হয়েছে। প্রথম প্রথম আটকে যেতেন। তখন মোবাইল নিয়ে ঈশিতার স্মরণ নিতেন সমাধানসূত্রের খেঁাজে। এখনও মাঝেমধ্যে যান দুরুহ টেকনিক্যাল সমস্যায়।

‘ইয়ং ম্যান, কী ভাবছো?’ চোখের হাসিতে বলেন সুমনবাবু।

ঠেঁাট চেপে না সূচক মাথা নাড়ে আদিত্য। হেঁয়ালি করতে ভালবাসেন সুমনবাবু। বললেন, ‘একটা ক্লু দিতে পারি।’

‘বলুন।’

‘এটা কী মাস?’

‘মার্চ।’

‘ব্যাস। ওইটেই ক্লু।’ একটু থেমে আবার বলেন, ‘ভারি বুটের শব্দ শুনতে পাচ্ছি।’

আরও বড় চিন্তায় পড়ে গেল আদিত্য।

‘বাই দ্য ওয়ে, তোমার লেখালেখি কেমন চলছে? অনেকদিন নতুন কিছু দেখছি না।’

‘খুব শিগগিরি একটা লিখব। তবে এবারেরটা ফেসবুকে নয়। আমার এক বন্ধু, কলেজের, ওয়েবজিন করেছে। লেখা চেয়েছে। রাজি হয়ে গেছি।’

‘তা ভাল। লিঙ্কটা শেয়ার করবে, পড়ব।’

‘আপনার বই লেখার কী হল? কবে লেখা ধরবেন?’

‘দেখা যাক, মনে হয় খুব তাড়াতাড়ি লেখা শুরু করতে পারব।’

এত কথার মধ্যে আদিত্য ‘ক্লু’ নিয়ে চিন্তা করতে থাকে। এই মার্চ মাস ইয়ার এন্ডিংয়ের। ইয়ারলি টার্গেট ফুলফিল করার সময়। যারা আগের তিনটে কোয়াটার্লি পিছিয়ে রয়েছে, তাদের বড় চাপের সময়। এটা অ্যাপ্রাইসালের সময়। এর উপরই নির্ভর করছে আগামী বছরে ইনক্রিমেন্ট, প্রমোশন। আর ক’দিনের মধ্যেই মেলে অ্যাপ্রাইসাল ফর্ম এসে যাবে। কিন্তু সুমনবাবু সে সবের গন্ধ নিশ্চই বলছেন না। আদিত্য ভাবতে থাকে, কোম্পানি তো বেশ চলছে। গত কয়েকবছরে ব্যবসা বেড়েছে। নতুন নতুন অ্যাপয়েন্টমেন্ট হয়েছে। বিদেশে লগ্নী হয়েছে। বড় কোনও সমস্যা হওয়ার কথা নয়।

আদিত্য নিজের কিউবিকলে ঢুকে দেখল ঈশিতা হোয়াটসঅ্যাপে ব্যস্ত। তাকে ফিরতে দেখে বলল, ‘এখন কি ধঁাধা খুঁজবে?’

উত্তর করল না আদিত্য। তার মানে ওকেও ধঁাধার সূত্র বলেছেন সুমনবাবু।

‘তুমি খঁুজে পেলে?’ পাল্টা প্রশ্ন করে আদিত্য।

এবার ঘুরে বসে ইশিতা। বলে, ‘একটা ব্যাপার ঘটেছে।’

‘কেমন?’

‘গেস করো।’

‘দূর সব ব্যাপারে এত মাথা ঘামাতে ভাল লাগে না। বলার হলে বলে ফেল।’

‘বস...কারও কাছে এটা নিয়ে আলোচনা করবে না কিন্তু...আমাকে ডিনারে নিয়ে যেতে চেয়েছে।’

‘গুড লাক, যাচ্ছো তো?’

‘যাচ্ছি।’

আর কথা না বলে এক্সেল খোলে আদিত্য। যেন হাড়-পিত্তি জ্বলতে থাকে। বুড়ো ভামের শখ কত, বলে ঈশিতাকে নিয়ে ডিনারে যাবে! এক মুহূর্তে সুমনবাবু সম্পর্কে পর্যবেক্ষণটা একশো আশি ডিগ্রি ঘুরে যায়। এক্সেলের রো-কলামে ভীর জমানো অজস্র সংখ্যার মতো আদিত্যর মাথায় কুচক্র কিলবিল করে। ঘাড় উঁচু করে দেখতে পায় কিউবিকলে দঁাড়িয়ে রয়েছেন সুমনবাবু। চারদিকে চোখ চারাচ্ছেন। যেন কোনও অভুক্ত শকুন ভাগারে মড়া গরু খুঁজছে।

আদিত্যর খুবই ইচ্ছা করছে সুমনবাবুকে প্রেমিসেসে দঁাড়িয়ে অপমান করে দিতে। লোকটা নিজেকে ভাবে কী! সবাই ঠিকই বলে, লোকটা মেয়েবাজ। পঙ্কজবাবু, শীর্ষবাবুরা এর থেকে অনেক ভাল বলতে হবে। যা করে খোলাখুলি করে। লুকিয়ে চুরিয়ে করে না। ওঁদের বয়সে এমনটা খুব খারাপও বলা চলে না। কিন্তু এই বয়সে সুমনবাবু এটা করছেন কী? ওঁরা ভালমানুষ নন, কিন্তু সুমনবাবুর মতো ভালমানুষের মুখোশ পড়ে থাকেন না। বুড়োটা তার মানে অছিলা করেই মোবাইলের সমস্যা নিয়ে বারবার ঈশিতার কাছে আসে। এখন সুমনবাবু সম্পর্কে এটাই এখন আদিত্যর বিচার।

কফি ব্রেকে চলে এল আদিত্য। কফি মাগ নিয়ে জানলার ধারে বসে বহুক্ষণ বাইরে চেয়ে রইল। আসতে আসতে নিজেকে সামলে নিল। মাথা ঠাণ্ডা হতে মনে মনে ভাবতে লাগল, আচ্ছা হঠাৎ সুমনবাবু সম্পর্কে তার দৃষ্টিভঙ্গী এমন বদলে গেল কেন? সে কি জেলাস হচ্ছে? ঈশিতাকে ডিনারে নিয়ে যেতে চেয়েছেন, এটাই কি সুমনবাবুর অপরাধ। সিগারেটে লম্বা টান দেওয়া দরকার। কফি শেষ করে নীচের রাস্তায় নেমে গেল সে। বেশ কিছুটা সময় কাটিয়ে ফিরে এল অফিসে।

লাঞ্চব্রেকে পাশে এসে বসল ঈশিতা। নিজেকে ওর সামনে স্বাভাবিক রাখতে অতিরিক্ত সতর্ক হয়ে উঠল আদিত্য। তাতেই ধরা পড়ে গেল। ঈশিতা বলল, ‘কী ব্যাপার, হঠাৎ মুড অফ হয়ে গেল কেন তোমার?’

‘মুড অফ হওয়ার কী দেখলে?’ ভাবলেশ গোছের কথা আদিত্যর।

‘মনে হল, তাই বললাম। না হলেই ভাল। আমি তো ভাবলাম সুমনবাবুর ধঁাধার সমাধান করে ফেলেছো।’

‘আমার বাজে চিন্তা করার সময় নেই। ইচ্ছাও নেই। তোমার থাকলে তুমি করো।’

‘ও বাব্বা!’ যেন আকাশ থেকে পড়ে ঈশিতা। সুমনবাবুর ভক্তর হল কী! ‘তোমার খুব প্রশংসা করছিলেন সুমনবাবু’, সরাসরি আদিত্যর চোখের দিকে চেয়ে ভাব বোঝার চেষ্টা করে সে।

‘তবে তো কথাই নেই। প্রমোশন পাক্কা। অ্যাপ্রাইজালের আর দরকার নেই।’ রুটি ছিঁড়ে চিমটি করে সবজি তোলে আদিত্য। মুখে পুরে চিবোতে চিবতে বলে, ‘তবে কী জানো, বসেরা সামনে যেটা বলেন, কার্যক্ষেত্রে তার বিপরীতটাই হয়। সুমনবাবুর ক্ষেত্রে আবার এটা দু’শো শতাংশ সত্যি। খেঁাজ করে দেখো।’

‘না, সুমনবাবু তেমন লোক বলে আমার মনে হয় না। কিন্তু উনি তোমার এই অফিসের কাজের বাইরে কাজ নিয়ে প্রশংসা করছিলেন। তোমার লেখা নিয়ে। বলছিলেন, তোমার লেখার বঁাধুনি আছে। সুযোগ পেলে ভাল জায়াগায় যেতে পারবে। এখানে সময় বরবাদ হচ্ছে।’

আগেরদিনই মোবাইল হাতে করে ঈশিতার ডেস্কে এসেছিলেন সুমনবাবু। কাজে ব্যস্ত ছিল আদিত্য। সেভাবে খেয়াল করেনি। তবে এটুকু বুঝেছে ওঁর কোনও একটা হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ নিয়ে কথা হচ্ছিল। কিছু ছবি এসেছে। ছবিগুলো দেখার জন্য মোবাইলটা ঈশিতার হাতেই ছেড়ে দিয়েছেন। আগ্রহ নিয়ে ইশিতা স্ক্রিনে স্ক্রল করে ছবিগুলো দেখছিল। ‘এটা বেশ’, ‘এটা একটু অন্যরকম’, ‘এটা খুব সুন্দর, দেখতে পারেন’ ইত্যাদি অগোছাল মন্তব্যও করছিল মাঝে মাঝে। ব্যাপারটা খুব জানতে ইচ্ছা করছিল আদিত্যর। কিন্তু সে সেটা প্রকাশ করেনি।

‘ওসব নিয়ে আবার কথা উঠল কীসে?’ বলে আদিত্য।

‘ওই যে কাল মোবাইল নিয়ে দেখাতে এসেছিলেন, দেখোনি?’

‘দেখছিলাম, তাতে কী?’

‘উনি একটা হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে আছেন। সেখানে ওঁর পরিচিত দুই ভদ্রমহিলার শাড়ির বুটিক আছে। তো তঁারা কিছু নতুন কালেকশান গ্রুপে পোস্ট করেছেন। এর মধ্যে সুমনবাবু কিছু একটা মন্তব্য করেছিল দু’জনার ডিজাইন নিয়ে । তারপরেই, সুমনবাবুর দাবি, তঁারা ওঁকে কনভিন্স করতে শুরু করেন। তাই আমার কাছে এসেছিলেন ওপিনিয়ন নিতে।’

‘ওপিনিয়ন না আরও কিছু। একটা অছিলায় এসেছিলেন আসলে এটাই জানাতে যে, তিনি মহিলাদের মধ্যে কতটা আগ্রহের।’

‘তোমার হল কী! তুমি তো সুমনবাবুর ফ্যান। তুমিই তো এতদিন অন্য কথা বলতে।’

‘বলতাম, কারণ চিনতে ভুল করেছি।’ বলেই ফেলল আদিত্য।

‘বাঃ তবু ভাল, দেরীতে হলেও চিনেছো। উনি কিন্তু তোমাকে এখনও চেনেননি। তা না হলে আমার কাছে তোমার অত প্রশংসা করে। আমাকে তো কালকে ওই সময় বলছিলেন, তুমি আমাদের কথা মন দিয়ে শুনছো আর তোমার পরের গল্পের প্লট সাজাচ্ছো।’

মনে মনে খুশিই হল আদিত্য। একটু নরমও হল সুমনবাবু সম্পর্কে। কিন্তু তঁার সম্পর্কে নতুন অভিমতটা পাল্টাল না।

ক্রমশ দিন কমে আসছে। আর কোনও ধঁাধা, লুকোচুরি নয়। অফিসশুদ্ধু সবাই খবরটা জেনে গেছে। সুমনবাবুর রিটায়ারমেন্টটা এবার হচ্ছেই। চিঠি হাতে এসে গেছে। ইদানিং, সুমনবাবু সম্পর্কে ধারণা বদলালেও এই খবরে আদিত্যর মন মোটেই ভাল নেই। এরমধ্যে একদিন মিনিট পঁাচেকের জন্য আদিত্যকে কিউবিকলে ডেকেছিলেন সুমনবাবু। কথায় কথায় বলছিলেন, ‘আমি জানি, আমি মহিলা কর্মীদের ডেকে গল্প করি, কথা বলি–এ নিয়ে অনেকে অনেক কথা হয়েছে। সব আমার কানে আসে। কিন্তু আমি বলব, ওই মেলামেশাটা দরকার। সবার সঙ্গে সবাই মেশো। মিশতে গেলে এক বয়স হওয়া জরুরি নয়, এক মন করে নিতে হয়।’

আদিত্যর মনে হয়েছিল, তারা কাছে কৈফিয়ৎ করছেন সুমনবাবু।

কিন্তু সুমনবাবুর অবসরের চেয়েও বড় বিপর্যয়ের জন্য দিন কয়েকের অপেক্ষা ছিল। তারপরেই এক লহমায় ফ্লোরের পরিবশটাই বদলে গেছে। সবাই থম মেরে রয়েছে। দমবন্ধ অবস্থা। একসময় যেখানে অকাল বসন্ত বিরাজ করত, এই ঘোর বসন্তেও সেখানে আষাঢ়ের ঘন কালো মেঘ। উপসাগরে গভীর নিম্নচাপের সৃষ্টি হয়েছে। শক্তি বাড়াতে বাড়াতে সেটা ক্রমশ এগিয়ে আসছে। সাইক্লোন হয়ে ওই ফ্লোরটাতে আছড়ে পড়ে মারাত্মক কিছু ঘটিয়ে ফেলবে।

কর্মীদের মধ্যে কথা-বার্তা কম। কাজের বাইরে কোনও কথা নেই। কখনও কখনও কোনও সামান্য কথার সূত্র ধরে আচমকা যেন ফ্লোরে গৃহযুদ্ধ বেঁধে যায়। পারস্পরিক দোষারোপ, কাদা ছেঁাড়াছুড়ি, ব্যক্তিগত আক্রমণ কিছুই বাদ যায় না। একসময়ের বন্ধুও শত্রু হয়ে গেছে যেন। সবাই সবার প্রতিদ্বন্দ্বী। কে বলবে ক’দিন আগেই এই অফিসবন্ধুরা সহকর্মীর জন্মদিনে মোমবাতি জ্বেলে কেক কেটেছে। গালে ক্রিম মাখিয়ে দিয়েছে। দেওয়ালে টাঙানো বোবা টিভি মনিটারগুলোয় ওঠানামা করা স্টক লিস্ট যেন ওদের সবাইকে উপহাস করে। অনেক আগে সুমনবাবু কি এই অবস্থাটা আন্দাজ করতে পেরছিলেন? এটাই কি সেই ভারি বুটের শব্দ।

কোম্পানির হালৎ ভাল নয়। কোনও ঘোষণা নেই, কিন্তু সারা অফিসে অব্যক্ত রব ঘুরে বেড়ায়। রাইভালের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করতে গিয়ে বিদেশে লগ্নী করে ডুবেছে কোম্পানি। বাইরের অডিট সংস্থার সুপারিশ–কর্মী সংকোচন। মার্চ যত ফুরিয়ে আসছে, পাল্লা দিয়ে সবার চাকরির অনিশ্চয়তা বাড়ছে।

ব্যাগে সাদা খামটা ঢুকিয়ে রাখল আদিত্য। সুমনবাবু কিউবিকলে ডেকেছিলেন। ইন্টারকমে ফোন করে। খামটা হাতে ধরাননি। টেবিলের উপরই রেখে দিয়েছিলেন। স্বভাবসিদ্ধ ভঙ্গিতে চোখের ইশারায় তুলে নিতে বলেছিলেন। আদিত্যর কিছু বলার ছিল না। আশা করেছিল সুমনবাবু দু’চারটে কথা বলবেন। বলেলনি। অফিস কপিতে সই করে টেবিলে রেখে ফিরে এসেছে সে। পিছনের চেয়ারে ইশিতা ছিল না। সুমনবাবুর ডাকে যাওয়ার সময়ও ছিল, এখন হয়তো টয়লেটে গিয়ে থাকতে পারে। মিনিট পঁাচেক অপেক্ষা করল আদিত্য। তারপর ড্রয়ার খুলে নিজের ব্যক্তিগত কিছু জিনিস–দু’টো নভেল, কফি মাগ, দু’-চারটে লাল-কালো পেন ব্যাগে গুছিয়ে ফেলল। ওই ফ্লোরে আর এক মুহূর্তও থাকতে ইচ্ছা করছে না। এতটাই নিস্তব্ধ যে নিজের হৃদস্পন্দন যেন শুনতে পাচ্ছে সে।

অফিসের গেটের বাইরে এসে মাথা উপরে করে চোখ বন্ধ করে মস্ত একটা শ্বাস নিলাম। প্রিয়জনকে দাহর পর মায়া কাটাতে এক লাঠির ঘায়ে হঁাড়ি ভেঙে আর যেমন পিছনে ফিরে চাইতে নেই, তেমন কায়দায় একবারও অফিসবাড়িটার দিকে মুখ ফেরালাম না।

রাস্তা পার করে চলে এলাম সেই সিগারেটের দোকানে। সিগারেট ধরিয়ে ধেঁায়া ছাড়লাম। এখন হঠাৎ নিজেকে খুব হাল্কা লাগছে। অন্তত, চাকরি হারানোর রোজকার আতঙ্ক থেকে মুক্তি।

আচমকা পিঠে মৃদু চাপড়ে ফিরলাম। দঁাড়িয়ে ঈশিতা। বলল, ‘আজ সন্ধেবেলা কী করবে?’

বললাম, ‘কিছু না। আমি এখন বেকার...।’

‘আমাকে সঙ্গে নিয়ে সুমনবাবুর বাড়ি যাবে।’

‘কেন?’

‘তোমার বিয়ের জন্য কথা বলবেন। হঁাদা। ডিনারের নেমন্তন্ন। তোমারও।’

ঈশিতার চোখ থেকে চোখ সরিয়ে নিলাম। কথা খুঁজে পাচ্ছি না

ঈশিতা আমার হাত টেনে নিয়ে বলল, ‘রাজি হয়ে যাও, আমার চাকরিটা তো রয়েছে। ঠিক চালিয়ে নেওয়া যাবে। তুমি তোমার পছন্দের কাজ খুঁজে নিও ধীরে-সুস্থে। পারবে না?’

ঈশিতার দিকে ফিরলাম। ও চোখে চোখ রেখে না বলি কী করে!

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন