অনমিত্র
মধ্যাহ্নভাজের আগেটায় একটু চা পানের অভ্যাস রয়েছে। নিজেই বানিয়ে নেন। সেদিও তেমনই চা বানাচ্ছিলেন। এমন সময় সেই ফোনটা এল। ওপার প্রথমটায় ভদ্রলোক ভেবেছিলেন হয়তো কোনও বিক্রয় প্রতিনিধি ফোন করেছেন, যেমনটা সচরাচর ঘটে থাকে। তবু ফোনটা তুলে নিলেন তিনি। ফোনের ওপারে অপরিচিত কণ্ঠস্বর,– “হ্যালো, অাপনি সাহিতে্য নোবেল পেয়েছেন। অভিনন্দন আপনাকে।”
বড় বিরক্ত হলেন ভদ্রলোক। এমন সময় এ কী কৌতুক! রীতিমতো ধমকের সুরে বললেন, “তুমি দূর হও। আমাকে একা থাকতে দাও।”
সুইডিশ অ্যাকাডেমির প্রতিনিধি অবশ্য তাঁকে শেষ পর্যন্ত বিশ্বাস করাতে পারেন যে তিনি সতি্যই সাহিতে্য এ বছরের নোবেল পেয়েছেন। তিনি আর কেউ নন, সাহিতি্যক আবদুলরাজাক গুরনাহ।
সাহিত্যে নোবেল বিজয়ী ১১৮তম লেখক আবদুলরাজাক গুরনাহ। তিনি এক কোটি সুইডিশ ক্রোনার পাবেন। ৭৩ বছর বয়সী গুরনাহ ১০টি উপন্যাস লিখেছেন। এর মধ্যে ‘প্যারাডাইস’ অন্যতম। উপন্যাসটি ১৯৯৪ সালে প্রকাশিত হয়। এই উপন্যাসে বিংশ শতাব্দীর গোড়ার দিকে তানজানিয়ায় এক কিশোরীর বেড়ে ওঠার গল্প বর্ণনা করা হয়েছে নিপুণভাবে।
নোবেল পুরস্কার প্রবর্তন করেন সুইডিশ বিজ্ঞানী আলফ্রেড নোবেল। তাঁর ইচ্ছা অনুসারে প্রতিবছর চিকিৎসা, পদার্থবিজ্ঞান, রসায়ন, সাহিত্য, শান্তি ও অর্থনীতিতে নোবেল পুরস্কার দেওয়া হয়। গবেষণা, উদ্ভাবন ও মানবতার কল্যাণে যাঁরা অবদান রাখেন, তাঁরা পান বিশ্বের সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ এই পুরস্কার। গত বছর সাহিত্যে এ পুরস্কার পেয়েছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের কবি লুইস গ্লিক।
গুরনাহর নোবেল পুরস্কার জয়ে আনন্দে মেতে উঠেছে ব্রিটেনের কেন্ট ইউনিভার্সিটি। তিনি এই ইউনিভার্সিটির প্রাক্তন ছাত্র এবং পরবর্তী সময়ে এই প্রতিষ্ঠানেই অধ্যাপনা করেছেন। ইউনিভার্সিটির ওয়েবসাইটে একটি অভিনন্দন বার্তায় বলা হয়েছে, “আমরা আনন্দিত যে আমাদের প্রাক্তন ছাত্র এবং ইমেরিটাস অধ্যাপক আবদুলরাজাক গুরনাহ সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার ২০২১ পেয়েছেন। ঔপনিবেশিকতার অনুপ্রবেশের বিরুদ্ধে আবদুলরাজাক গুরনাহর আপসহীন সংগ্রাম এবং সংস্কৃতি ও মহাদেশীয় পরিসরে উদ্বাস্তু মানুষের কণ্ঠস্বরকে সাহসের সঙ্গে তুলে ধরার জন্য তাঁকে এই পুরস্কার দেওয়া হলো। তাঁর অনেকগুলো গল্প আমাদের নিজস্ব লাইব্রেরিতে প্রথম খসড়া হয়েছিল। এটি বিশ্বব্যাপী লক্ষ লক্ষ মানুষকে স্পর্শ করেছে।”
নোবেল পুরস্কার প্রবর্তনের ৮৫ বছর পর প্রথম আফ্রিকান কৃষ্ণাঙ্গ হিসাবে পুরস্কারটি পান ওল সোয়েঙ্কা। এরপর আবদুলরাজাক কৃষ্ণাঙ্গ আফ্রিকান লেখক হিসেবে নোবেল পুরস্কার পেলেন।
আবদুলরাজাক গুরনাহ কেন্ট বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৮২ সালে পিএইচডি করেন। তাঁর গবেষণার বিশয় ছিল ‘ক্রাইটেরিয়া ইন দ্য ক্রিটিসিজম অব ওয়েস্ট আফ্রিকান ফিকশন’। এখানেই দীর্ঘদিন তিনি ইংরেজি ও ঔপনিবেশিকোত্তর সাহিত্য বিভাগে অধ্যাপনা করেন। সম্প্রতি অবসর গ্রহণ করেছেন গুরনাহ।
গুরনাহর মাতৃভাষা ও প্রথম ভাষা সোয়াহিলী। ইংল্যান্ডে শিক্ষার শুরু থেকে তিনি তার সাহিত্যের ভাষা হিসেবে ইংরেজীকে গ্রহণ ও ব্যবহার করেছেন। তার ইংরেজী গদ্যে সোয়াহিলী, আরবী ও জার্মান ভাষার ভাবধারার চিহ্ন বিদ্যমান। তিনি কোরান, আরবী ও ফার্সি পদ্য, বিশেষত আরব্য রজনী থেকে কাহিনী ও কল্পিক উপকরণ গ্রহণ ও ব্যবহার করেছেন। তার লেখা ইংরেজী পাঠক মহলে যেমন সমাদৃত তেমন আফ্রিকান সমাজে এখনও নয়। উপন্যাসিক মাজা মেলজিসটে এই প্রেক্ষিতে বলেছেন যে, গুরনাহ যেসব মানুষের কাহিনী বলেছেন তাদের কাহিনী সচরাচর শোনা হয় না সত্তে¡ও পাঠককে জোর দিয়ে শুনতে হয়। ১৯৯৬ সালে নিউইয়র্ক টাইমস-এ প্রখ্যাত লরা উইনটারস তার ‘নিস্তব্ধতার প্রশংসা’র বিষয়ে বলেছেন যে, গুরনাহ কুশলীর মতো এক মানুষের কষ্টের কথা তুলে ধরেছেন, যিনি দুই সংস্কৃতির মাঝখানে আটকে পড়ে আছেন এবং সেই সংস্কৃতি দুটির একটি অন্যটির সঙ্গে তার সংস্রবতা সত্ত্বেও তাকে আপন করে নেয় না। তথাপি একথা অনস্বীকার্য যে, গুরনাহ সমকালীন আফ্রিকান লেখকদের মধ্যে অন্যতম শ্রেষ্ঠ স্থান অধিকার করে আছেন।
গুরনাহর নিজের কথায়, “ঔপনিবেশিকতার আবরণে আগে ইউরোপ ও আমেরিকা থেকে যারা ভিন্নতর দেশে আস্তানা নিয়েছিল, তাদের তুলনায় ঐসব দেশ থেকে সমকালে সম্পদশালী দেশে আসা মানুষের সংখ্যা অনেক কম। সেই প্রেক্ষিতে ইউরোপ ও আমেরিকায় সমকালীন শরণার্থী ও অভিবাসীদের প্রতিক‚লে স্থানীয় জনগণের বিরোধিতা ক্ষুদ্র মানসিকতার পরিচায়ক এবং অগ্রহণীয়।”
বইয়ের তালিকা
2020 Afterlives
2017 Gravel Heart
2011 The Last Gift
2007 The Cambridge Companion to Salman Rushdie
2005 Desertion
2001 By the Sea
1996 Admiring Silence
1994 Paradise
1993 Essays in African Literature: A Re-evaluation
1990 Dottie
1988 Pilgrims Way
1987 Memory of Departure
পুরস্কার
2021 Nobel Prize for Literature
2006 Commonwealth Writers Prize (Eurasia Region, Best Book)
2001 Los Angeles Times Book Prize (Fiction)
1994 Booker Prize for Fiction
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন