অগ্নিমূল্যের বাজারেও বই কেনা ছাড়তে নারাজ পাঠক

সারা ব্রিটেনে এক হাজার বইক্রেতার উপর এই সমীক্ষাটি চালানো হয়। সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে যে বেশিরভাগ ক্রেতাই মূল্যবৃদ্ধির কারণে জীবনযাত্রার সঙ্কট সত্ত্বেও বই কেনা চালিয়ে যাওয়ার পক্ষে।

অগ্নিমূল্যের বাজারেও বই কেনা ছাড়তে নারাজ পাঠক

বইতন্ত্র ডেস্ক : কয়েক দশক আগে  সৈয়দ মুজতবা আলি বলেছিলেন, বই কিনে কেউ দেউলিয়া হয় না। মুদ্রাস্ফীতির চাপে পড়ে অনেক পরিবারই তাদের দৈনন্দিন খরচ-খরচা কাটছঁাট করতে বাধ্য হচ্ছেন। অনেকেই বলছেন, এই সময় তাঁরা অপ্রয়োজনীয় বলে মনে হতে পারে এমন কিছু খরচ ছেড়ে দিতে পারেন– যেমন ছুটিতে বেড়াতে যাওয়া। অথচ, সাহিত্যপ্রেমীদের ক্ষেত্রে, তাদের পছন্দের বিনোদন সংক্রান্ত খরচ কমানোর প্রশ্নই আসে না। বিশ্বব্যাপী মূল্যবৃদ্ধি সঙ্কটের মধে্য বইবাজারের অবস্থা কেমন সেটা পরখ করতে সম্প্রতি ব্রিটেনের বুকসেলার্স অ্যাসোসিয়েশন এবং নিলসেন ইন্সটিটিউট যৌথভাবে একটি সমীক্ষা করে। বস্তুত, মানুষের সাহিত্য-প্রীতির খরচে মুদ্রাস্ফীতির প্রভাব অনুমান করাই ওই সমীক্ষার লক্ষ্য ছিল।

সারা ব্রিটেনে এক হাজার বইক্রেতার উপর এই সমীক্ষাটি চালানো হয়। সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে যে বেশিরভাগ ক্রেতাই মূল্যবৃদ্ধির কারণে জীবনযাত্রার সঙ্কট সত্ত্বেও বই কেনা চালিয়ে যাওয়ার পক্ষে। কিন্তু কেন? ৪৫ শতাংশ উত্তরদাতাই বলছেন বই কেনা হল অর্থের ভাল খরচ। আর ২০ শতাংশের কথায় অর্থের দূর্দান্ত মূল্য। অনেকে এই সত্যটিও উল্লেখ করেন যে বই হল নিজের দৈনিন্দিন জীবন থেকে হারিয়ে যাওয়া এবং বিনোদনের জন্য বিশেষভাবে সহায়ক। একটি বই নিজেই নিজেকে দেওয়া সর্বোত্তম উপহার। আরেকটি সুবিধা হল যে তারা আমাদের মানসিক সুস্থতা উন্নত করতে সাহায্য করে, যেমনটা সঙ্গীত এবং অন্যান্য শিল্পকর্ম থেকে মেলে। প্রায় অর্ধেক উত্তরদাতা বলেছেন যে তাঁরা আরও বই কেনার জন্য বেড়াতে যাওয়া এবং বিনোদনের মতো অন্যান্য খরচ হ্রাস করার কথা ভাববেন। কিন্তু বই কেনা বন্ধ করবেন না। প্রতি দজনের মধ্যে আটজন উত্তরদাতা জানিয়েছেন, তাঁরা স্থানীয় দোকান থেকেই বই কিনতে থাকবেন, এমনকী জীবনযাত্রার খরচ বাড়লেও।

একমাত্র নেতিবাচক দিক হল যে সমীক্ষা রিপোর্টটিতে দেখা যাচ্ছে, অল্পবয়সী, শিশু এবং যারা বিশেষ করে জীবনযাত্রার সঙ্কট দ্বারা প্রভাবিত তারা তাদের বইয়ের খরচ হ্রাস করার চেষ্টা করছে। এই ক্ষেত্রে, ৩০ শতাংশ উত্তরদাতা আগামী বছর বই কেনা কমানোর কথা ভাবছে। বছরশেষের ছুটির মরশুম বইয়ের দোকানের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ সময়। প্রকৃতপক্ষে, এই সময়ে সাধারণত প্রকাশনা ক্ষেত্রের বার্ষিক টার্নওভারের ২০ শতাংশের ভাগ থাকে এই সময়ের ব্যবসা থেকে। কারণ, এই চুটির মরশুমে বই একটি আদর্শ উপহার বলে মনে করে ব্রিটিশরা। ১৮ থেকে ৪৪ বছর বয়সী সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ তাদের নিজেদের অধিকারের সুন্দর বস্তু বলে মনে করে বইকে। শুনে আবাক হবেন না, উত্তরদাতাদের ৯০ শতাংশ বড়দিতে শিশুদের উপহার দেওয়ার জন্য যতটা সম্ভব বেশি বই কেনার চেষ্টা করেন। বুকসেলার্স অ্যাসোসিয়েশনের ডিরেক্টর মেরিল হল বলেন, বইগুলি অর্থের জন্য চমৎকার মূল্য প্রদান করে। ২০০৮ সালের আর্থিক সংকটের সময়, এবং কোভিড-১৯ মহামারীর শীর্ষের সময়, বইয়ের বিক্রি অনেকগুলি জনারের মধ্যে বেড়ে গিয়েছিল। আমরা খুব আশা করি যে কঠিন সময়ের আসন্ন মাসগুলিতে তেমনটাই হবে। গ্রাহকরা তাদের কেনাকাটার জন্য বইয়ের দোকানেই আসবেন।

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন