শীতের ছুটিতে ঘুরে আসুন নদীয়া

ঐতিহাসিক স্থান এবং তীর্থস্থানের মধ্যে রয়েছে মায়াপুর, শান্তিপুর শাড়ি এবং বিশ্ববিখ্যাত কৃষ্ণনগরের মাটির পুতুল। আপনি যেদিকেই তাকান না কেন নদীয়া জেলায় অজস্র চমক রয়েছে।

Historical nadia tour


সামনেই বড়দিনের ছুটি। খুব বেশিদূরের না গিয়ে এই বাংলাতেই দু’-একদিনের ছুটি কাটাতে বেড়ানোর খুব ভাল জায়গা আছে। কলকাতা থেকে একটু দূরেই নদীয়া জেলায়। একটিকে ঐতিহাসিক গুরুত্ব, অন‌্যদিকে ধর্মবিপ্লবের পীঠস্থান এই নদীয়া জেলা। পলাশীর প্রান্তরে ভাগিরথার তীরে যুদ্ধে ভারতের স্বাধীনতার সূর্য অস্তমিত হয়েছিল। আবার এই জেলাতেই মহাপ্রভূ শ্রী চৈতন‌্যদেব কৃষ্ণপ্রেমে মানুষকে পাগল করেছিলেন। সমৃদ্ধ শিল্প-সংস্কৃতির ঐতিহ‌্য আজও বহমান। ঐতিহাসিক স্থান এবং তীর্থস্থানের মধ্যে রয়েছে মায়াপুর, শান্তিপুর শাড়ি এবং বিশ্ববিখ্যাত কৃষ্ণনগরের মাটির পুতুল। আপনি যেদিকেই তাকান না কেন নদীয়া জেলায় অজস্র চমক রয়েছে। ট্রেন বা সড়ক পথে, কলকাতা থেকে মাত্র কয়েক ঘণ্টা লাগে কৃষ্ণনগর পৌঁছতে। কৃষ্ণনগরকে কেন্দ্র করেই আশপাশের সমস্ত দর্শনীয় স্থান দেখে নিতে পারেন দু’রাত ও এক দিনের প্ল‌্যানে

নবদ্বীপ: এখানে মহাপ্রভু শ্রীচৈতন্য দেবের জন্ম। ভাগীরথী নদীর তীরে অবস্থিত। কৃষ্ণনগর থেকে মাত্র ২০ কিলোমিটার দূরে। চৈতন্যদেব বৈষ্ণব মতবাদের প্রচার করেন এখান থেকেই। উপরন্তু, তিনি ষোড়শ শতকের সমাজ সংস্কারকদের একজন। বৈষ্ণবধর্মের পাশাপাশি তিনি ভক্তিবাদের প্রবক্তা। নবদ্বীপ ছিল লক্ষ্মণ সেনের রাজধানী, সেন বংশের অন্যতম শ্রেষ্ঠ রাজা। ১১৭৯ থেকে ১২০৩ সাল পর্যন্ত তিনি নবদ্বীপ শাসন করেন।

মায়াপুর: নবদ্বীপ ধামের বিপরীতে ভাগীরথী অপর পারে মায়াপুর। অনেকে দাবি করেন যে মায়াপুর হল মহাপ্রভূ চৈতন্যদেবের উপাসনা জীবনের কেন্দ্রভূমি। এখানে একটি ইসকন মন্দির রয়েছে। মনগ্রাহী ও অবাক করা মন্দিরের নকশা। প্রতিদিন বহুভক্ত সেই মন্দিরে আসেন। এখানে রাস উত্সব হলয় দোলযাত্রা। তখন বহু বিদেশী ভক্তও আসেন এখানে। একতা, সম্প্রীতি ও সৌহার্দ‌্য উদযাপনের একটি স্থান হল মায়াপুর। মায়াপুরের ইসকন মন্দিরে থাকার ও আহারের বন্দোবস্ত রয়েছে। তবে আগাম খেঁাজ নিয়ে যেতে হবে।

শান্তিপুর: শত শত বছর ধরে শান্তিপুর সংস্কৃত শিক্ষার একটি কেন্দ্র। পুতি ও বৈদিক শিক্ষা নবম শতাব্দী থেকে চলে আসছে। একই সময়ে, ফৌজদার গাজী ১৭০৩-০৪ সালে তোপখানা মসজিদের আটটি মিনার সহ একটি বিশাল "গম্বুজ" নির্মাণ করেন। রয়েছে ঐতিহ্যবাহী আটচালা শৈলীতে নির্মিত শ্যামচাঁদ মন্দির, পোড়ামাটির তৈরি জলেশ্বর মন্দির এবং আদিত্যপ্রভু মন্দির

শান্তিপুরী তাঁতের শাড়ি এখন শুধু দেশেই নয় বিদেশেও পাওয়া যাচ্ছে। সেখানেও এখন মসলিন তৈরি হচ্ছে।

শান্তিপুর ফুলিয়া শহরের কাছেই। বাংলা রামায়ণ রচয়িতা কৃত্তিবাস এই শহরেই জন্মগ্রহণ করেন।

পলাশী: লর্ড ক্লাইভের সেনাবাহিনী এখানে ২৩ জুন, ১৮৫৭ সালে বাংলার শেষ স্বাধীন নবাব সিরাজউদ্দালার সঙ্গে যুদ্ধ করে এবং তারপর ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি ভারতের নিয়ন্ত্রণ নেয়। ১৮৮৩ সালে, ব্রিটিশরা তাদের বিজয় স্মরণে একটি স্তম্ভ স্থাপন করেছিল সেই পলাশীর প্রান্তরে। এই ব‌্যাটেল ফিল্ড দর্শণীয় স্থান। অনুমতি পেলে কাছেই পলাশীর বিখ‌্যাত সুগারমিল দেখে নিতে পারেন।

বেথুয়াধারী: ১৯৮০ সালে ৬৭ একর ঘন জঙ্গল নিয়ে তৈরি অভয়ারণ‌্য। বাস্তবে এটি ডিয়ার পার্কেরই একটি অংশ। এটি এখন একটি জনপ্রিয় পর্যটন গন্তব্য। এই বনে রয়েছে হরিণ, বনবিড়াল, বিভিন্ন প্রজাতির পাখি, অজগর এবং আরও পঞ্চাশ প্রজাতির প্রাণী

কৃষ্ণনগর: এটি জেলার সদর দফতর। রাজকৃষ্ণ চন্দ্র রায় যে রাজবাড়িটি তৈরি করেছিলেন, এটি এই এলাকার অন্যতম উল্লেখযোগ্য নিদর্শন। ১৭২৮ থেকে ১৭৮২ পর্যন্ত, কৃষ্ণচন্দ্র এই স্থান শাসন করেছিলেন। এই রাজপ্রাসাদের স্থাপত্য নিপুণ। দোল ও জগধাত্রী পুজো– বছরের দুই সময়ে এই রাজবাড়ির দরজা সাধারণের জন‌্য খোলা হয়।

সেখানে দুটি সুন্দর গীর্জা আছে। প্রোটেস্ট্যান্ট চার্চ এখানে ১৮৪০ সালে এবং ক্যাথলিক চার্চ ১৮৯০ সালে প্রতিষ্ঠা হয়েছিল।

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন