জানেন কি, বিশ্বের সেরা ১০ বইমেলা কোনগুলি?

অমর একুশে গ্রন্থমেলা উৎসর্গ করা হয়েছে ১৯৫২-র ভাষাশহিদদের উদ্দেশে‌। শহীদদের উদ্দেশ করে বইমেলার আয়োজন বিশ্ব বইমেলার ইতিহাসে বিরল।

ফ্রাঙ্কফুর্ট বুক ফেয়ার (জার্মানি)

বিশ্বের সতেরো শতক থেকে অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে এই বইমেলা। প্রতিবছর অক্টোবরে জার্মানির ফ্রাঙ্কফুর্টের ফ্রাঙ্কফুর্ট ট্রেড ফেয়ার গ্রাউন্ডে বসে বইমেলা। এটি বাণিজ্যিক দিক থেকে বিশ্বের বৃহত্তম বইমেলা। আর জনসমাগমের নিরিখে ইউরোপে এর অবস্থান দ্বিতীয়। মেলার প্রথম তিন দিন থাকে কেবল বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে আগতদের জন‌্য। শেষ দুদিন মেলা সবার জন‌্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়। মেলায় প্রায় ২ লাখ ৮৬ হাজার দর্শনার্থী আসেন। এর মধ্যে ১ লাখ ৪২ হাজারই আসেন বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে আসেন।

লন্ডন বুক ফেয়ার (ব্রিটেন)

এটি হল বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম বইমেলা। ১৯৭১ সালের ৫ নভেম্বর এ মেলার সূচনা। বর্তমানে বিশ্বের শতাধিক দেশ এ মেলায় অংশ নেয়। সমগ্র ইউরোপের প্রকাশক, বিক্রেতা, এজেন্টদের তীর্থস্থান হিসেবে খ্যাত লন্ডন বুক ফেয়ার। ২০০৬ সাল পর্যন্ত এ মেলা চলত অলিম্পিয়া এক্সিবিশন সেন্টারে। ফের ২০১৫ সালে সেখানে ফিরিয়ে আসে বইমেলা।

বলগ্না চিলড্রেনস বুক ফেয়ার (ইতালি)

শিশুসাহিত্যের জন্য ‘বলগ্না চিলড্রেনস বুক ফেয়ার’ প্রধান বইমেলা। ১৯৬৩ সাল থেকে প্রতিবছর মার্চ ও এপ্রিলের চার দিন এ মেলা অনুষ্ঠিত হয়। শিশুসাহিত্য, শিশুচলচ্চিত্র এবং অ্যানিমেশন নিয়ে যারা কাজ করেন তারাই মূলত এখানে শিশুসাহিত্য সম্পর্কিত বিষয়ে আলোচনা করতে অংশ নেন। এ ছাড়া এ মেলায় শিশুসাহিত্য, চলচ্চিত্র ও অ্যানিমেশন ইত্যাদিতে কৃতিত্ব রাখার জন্য মোট চারটি ক্যাটাগরিতে পুরস্কার দেওয়া হয়। প্রায় ১,৫০০ প্রকাশক মেলায় অংশ নিয়ে থাকেন। প্রতিবছর ৭০ থেকে ৮০টি দেশের প্রতিনিধি মেলায় অংশ নিয়ে থাকেন।

বুয়েন্স আয়ারস ইন্টারন্যাশনাল বুক ফেয়ার (আর্জেন্টিনা)

১৯৭৫ সাল থেকে আর্জেন্টিনার রাজধানী বুয়েন্স আয়ারস শহরে প্রতিবছরের এপ্রিলে অনুষ্ঠিত হয় এই বইমেলা। বইমেলাটি মূলত স্প্যানিশ সাহিত্য কেন্দ্র করে। বিশ্বের অন্তত ৫০টি দেশের অংশগ্রহণে এ মেলায় অন্তত ১২ লাখ জনসমাগম হয়। আর্জেন্টাইন সোসাইটি অব রাইটার্সের প্রতিষ্ঠিত ‘ফান্দাসিঁও এল লিব্রো’ নামে একটি অলাভজনক সংস্থা এ বইমেলার আয়োজক।

বুক এক্সপো আমেরিকা (আমেরিকা)

১৯৪৭ সালে ওয়াশিংটন ডিসিতে ‘আমেরিকান বুকসেলার অ্যাসোসিয়েশনের কনভেনশন এবং ট্রেড শো’ নামে শুরু হয়েছিল এই বইমেলা। ১৯৭১ সালে নাম বদলে নাম হয় ‘বুক এক্সপো আমেরিকা’। দেশের বড় বড় শহরে পালাক্রমে চলে এই বইমেলা। ২০০৮-এ লস অ্যাঞ্জেলেস, ২০০৯-১৫ সালে নিউইয়র্ক সিটিতে এবং সর্বশেষ ২০১৬ সালে শিকাগোয় হয়েছে এ মেলা। এ মেলার অন্যতম আকর্ষণ হল ‘দ্য বুককর্ন’। যা মূলত গল্প বলা ও সংস্কৃতি প্রদর্শন।

মস্কো ইন্টারন্যাশনাল বুক ফেয়ার (রাশিয়া)

শরতে আয়োজিত এ বইমেলার সূচনা ১৯৭৭ সালের ১ সেপ্টেম্বর। এর পর প্রতিবছর ৩ থেকে ৭ সেপ্টেম্বর মধ্যে মস্কো এক্সিবিশন সেন্টারে অনুষ্ঠিত হয় বইমেলা। এখানে রাশিয়াসহ আন্তর্জাতিক প্রকাশনা সংস্থাগুলো অংশ নেয় এবং পাঠকরা বিশেষ মূল্যে বই কিনতে পারেন।

কায়রো ইন্টারন্যাশনাল বুক ফেয়ার (মিশর)

আরব দুনিয়ার প্রাচীনতম এবং বৃহত্তম বইমেলা হল কায়রো আন্তর্জাতিক বইমেলা। অনুষ্ঠিত হয় জানুয়ারির শেষ সপ্তাহে। কায়রো শহর প্রতিষ্ঠার এক হাজার বছর পূর্তি উপলক্ষে ১৯৬৯ সালে এই বইমেলার সূচনা। মিশরের আল আজহার বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছেই মাদিনাত নাসারের কায়রো ইন্টারন্যাশনাল ফেয়ার গ্রাউন্ডে মেলার আয়োজন করে ‘জেনারেল ইজিপশিয়ান বুক অর্গানাইজেশন’। প্রায় ২০ লক্ষ মানুষের মিলনমেলায় পরিণত হয়েছে এ আয়োজন।

হংকং বুক ফেয়ার

হংকং ট্রেড ডেভেলপমেন্ট কাউন্সিলের উদ্যোগে আয়োজন করা হয় এই বইমেলার। ১৯৯০ সালে এর সূচনা। প্রতিবছর মধ্য জুলাইয়ে এ মেলা আয়োজিত হয় হংকং কনভেনশন অ্যান্ড এক্সিবিশন সেন্টারে। হংকংয়ের জনগণ জন্য কম দামে দেশি বা বিদেশি বই কেনার সুযোগ পায় এই মেলায়। উদ্দেশ‌্য মূলত আন্তর্জাতিক বই ব্যবসাকে উৎসাহিত করা। এখানে আলাদাভাবে একটি কমিকস মেলাও অনুষ্ঠিত হয়।

আন্তর্জাতিক কলকাতা বইমেলা (ভারত)

এশিয়ার প্রধান বইমেলা এবং অবাণিজ্যিক দিক থেকেও এই বইমেলার গুরুত্ব অপরিসীম। আড়াই লাখেরও বেশি পাঠক প্রতিবছর এ বইমেলায় আসেন। ১৯৭৬ সালে সূচনা হওয়া এই বইমেলা ১৯৮৪ সালে আন্তর্জাতিক বইমেলার স্বীকৃতি পেয়েছে। জানুয়ারির শেষ বুধবার শুরু হয়ে ১২ দিনব্যাপী বইমেলা চলে। মেলার বর্তমান আয়োজনস্থল বিধাননগরের বইমেলা প্রাঙ্গনে। প্রকাশক ও পুস্তক বিক্রেতারা সাধারণ মানুষের কাছে তাদের প্রকাশিত অথবা পরিবেশিত বইয়ের প্রচার ও বিক্রয়ের উদ্দেশ্যে এ মেলায় যোগ দিয়ে থাকেন। বর্তমানে বইমেলাকে ‘বাঙালির চতুর্দশ পার্বণ’ বলে অভিহিত করা হয়।

অমর একুশে গ্রন্থমেলা (বাংলাদেশ)

একুশে বইমেলা হিসেবে বেশি পরিচিত। এই বইমেলার প্রতিবছর এ মেলার আয়োজন করে বাংলা অ‌্যাকাডেমি। সূচনাকালে বাংলা একাডেমি চত্বরে অনুষ্ঠিত হয়ে এলেও ২০১৪ সাল থেকে মেলার পরিধি সোহরাওয়ার্দী উদ্যান পর্যন্ত বিস্তৃত হয়েছে। অমর একুশে গ্রন্থমেলা উৎসর্গ করা হয়েছে ১৯৫২-র ভাষাশহিদদের উদ্দেশে‌। শহীদদের উদ্দেশ করে বইমেলার আয়োজন বিশ্ব বইমেলার ইতিহাসে বিরল।