The Joy Of Sex : অর্ধশতাব্দী পার করে আজও বিকল্পহীন ডা. আলেক্স কমফোর্টের নান্দনিক যৌনতার গাইডলাইন

সমালোচনা সত্ত্বেও, ‘দ্য জয় অফ সেক্স’ ব্যাপকভাবে পঠিত হয় এবং একটি বেস্টসেলার হয়ে ওঠে। বিশ্বব্যাপী ৫০ মিলিয়নেরও বেশি কপি বিক্রি হয়। এটি টানা তিনদশকের বেশি বছরেরও বেশি সময় ধরে মুদ্রিত হয়েছিল।

the-joy-of-sex-by-alex-comfort-a-feature-story

কোনও মহাকাব‌্য নয়। নয় কোনও সেলিব্রিটির রসালো আত্মজীবনী। এমনকী নোবেল পুরস্কারপ্রাপ্ত কোনও মহার্ঘ‌্য উপন‌্যাসও নয়। তবু প্রকাশের পর অর্ধ শতাব্দী কেটে গিয়েও আজও আলোচনায়, বিতর্কে সেই বই। আবার যে বইয়ের স্রষ্টা তথাকথিত কোনও লেখকই নন।

দ‌্য জয় অফ সেক্স। সত্তরের দশকে যে বই যৌনতা সম্পর্কে বিশ্বের দৃষ্টিভঙ্গীই বদলে দিয়েছে। এর আগে যৌনতা নিয়ে এত খোলামেলা আলোচন আর কোনও বইয়ে হয়নি। ১৯৭২ সালে ডা. আলেক্স কমফোর্টের লেখা বইটি প্রকাশ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই বিতর্ক শুরু হয়। যে বই আসলে নন-ফিকশন একটি ‌‘সেক্স গাইড’। বাংলায় অনেকটা কোকশাস্ত্রের মতো। অথচ, বইটির জনপ্রিয়তা এতটাই ছিল যে এটি বিশ্বব্যাপী ১২ মিলিয়নেরও বেশি কপি বিক্রি হয়েছে এবং এক ডজনেরও বেশি ভাষায় অনুবাদ করা হয়েছে। স্বাভাবিক যৌনতাকে আড়ালে সরিয়ে রাখার মনোভাব সরিয়ে তাকে বুকসেল্ফে বা কফিটেবিলে ঠাঁই দেওয়ার বিপ্লব ঘটিয়ে অচিরেই ডা. কমফোর্ট হয়ে উঠেছিলেন ‘ডা. সেক্স’। ১৯৭০, ৮০ এবং ৯০-এর দশকের শুরুতে জন্মগ্রহণ করা আমাদের অনেকের জন‌্য ‘দ্য জয় অফ সেক্স’ সবকিছু বদলে দিয়েছে। ডা. কমফোর্ট এই বইতে শিখিয়েছিলেন, যৌনতা কোনও বাধ‌্যবাধ‌্যকতা নয়, উপভোগের বিষয়। তাকে আড়ালে লুকিয়ে রাখা চরব বোকামি।

যৌনতা বিষয়ক বিশ্বের সবচেয়ে আলোচিত বইগুলোর মধ্যে একটি ‘দ্য জয় অফ সেক্স’। প্রকাশের সঙ্গসঙ্গে সেটি বেস্টসেলার হয়ে ওঠে। বইটি মানুষের যৌনতার জন্য একটি বিস্তৃত নির্দেশিকা। যেখানে যৌন কৌশল, যৌন স্বাস্থ্য, যৌন মনোবিজ্ঞান এবং যৌন সম্পর্ক সহ বিভিন্ন বিষয়ে বিস্তৃত আলোচনা রয়েছে। বইটি কথোপকথন শৈলীতে লেখা হয়েছে। যা একদিক তথ‌্যপূর্ণ অথচ বিনোদনমূলক হয়ে উঠেছে। বইটি লাইন ড্রয়িং দিয়ে চিত্রিত। যে কারণে বইটিতে থাকা তথ‌্যগুলি সংখ‌্যাগরিষ্ঠ পাঠকের সহজে বুঝতে সুবিধা হয়েছে। প্রকাশের সময়কালে, মনে রাখতে হবে সেই সাতের দশকের শুরুতে, রক্ষণশীল সমাজে এই বইটি যুগান্তকারী এবং বৈপ্লবিক হিসাবে বিবেচিত হয়েছিল। এটি যৌনতার বিষয়ে একটি ক্লাসিক কাজ হিসাবে রয়ে গিয়েছে।

ডা. কমফোর্টের বইটি যৌনতা বিষয়ের একটি সাধারণ ভূমিকা দিয়ে শুরু হয়েছে। তারপরে শরীরের যৌন স্থান, যৌন কৌশল এবং যৌন সম্পর্কের অধ্যায় রয়েছে। বইটিতে যৌন মনোবিজ্ঞান, যৌন স্বাস্থ্য এবং যৌন সমস্যাগুলির বিষয়ও রয়েছে। এতে পুরুষত্বহীনতা, অকাল বীর্যপাত এবং ইচ্ছার অভাবের মতো সমস্যাগুলি কীভাবে মোকাবিলা করা যায় সে সম্পর্কে তথ্য অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। কীভাবে একজনের যৌন কৌশল উন্নত করা যায় এবং কীভাবে একটি স্বাস্থ্যকর যৌন সম্পর্ক বজায় রাখা যায় সে সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। এমনকী, যৌন কল্পনার বিষয় এবং তাকে কীভাবে যৌন অভিজ্ঞতা উন্নত করতে ব্যবহার করা যেতে পারে, তা নিয়েও আলোচনা আছে বইটিতে। সবমিলিয়ে ‘দ্য জয় অফ সেক্স’ একটি ক্লাসিক কাজ হিসাবে বিবেচিত হয় যা মানুষের যৌনতার জন্য একটি ব্যাপক, তথ্যপূর্ণ এবং বিনোদনমূলক নির্দেশিকা প্রদান করে। যে সমস্ত মানুষ তাঁদের যৌনজ্ঞান এবং অভিজ্ঞতা উন্নত করতে চান, তাঁদের জন‌্য এই বই একটি মূল্যবান সম্পদ হিসাবে বিবেচিত হয়।

ডাঃ অ্যালেক্স কমফোর্টের লেখা ‘দ্য জয় অফ সেক্স’ যুগান্তকারী এবং বৈপ্লবিক হিসাবে বিবেচিত হলেও, তাকে ঘিরে বিতর্কও কম হয়নি। বইটির একটি প্রধান সমালোচনা ছিল যে এটিকে অতি উদার এবং স্বেচ্ছাচার হিসাবে দেখা হয়েছিল। কিছু মানুষের মত ছিল যে বইটিতে যৌন বিষয়গুলির খোলামেলা এবং বিশদ আলোচনা অনুপযুক্ত। কেউ কেউ এমনটা বলেছে যে যৌন কৌশল সম্পর্কে বইটির পরামর্শটি অতি স্পষ্ট এবং তা অশ্লীলতাকে উৎসাহিত করতে পারে। কিছু ধর্মীয় গোষ্ঠীও বইটির সমালোচনা করেছেন এই যুক্তি দিয়ে যে এটি যৌনতার প্রতি নৈতিকভাবে শিথিল মনোভাবকে প্রচার করেছে। বইটির আরেকটি সমালোচনা ছিল যে এটিকে অতি বিষমকামী হিসেবে দেখা হয়েছিল এবং এতে LGBTQ+ যৌন অভিজ্ঞতার বিষয়ে পর্যাপ্ত তথ্য অন্তর্ভুক্ত ছিল না।

এইসব সমালোচনা সত্ত্বেও, ‘দ্য জয় অফ সেক্স’ ব্যাপকভাবে পঠিত হয় এবং একটি বেস্টসেলার হয়ে ওঠে। বিশ্বব্যাপী ৫০ মিলিয়নেরও বেশি কপি বিক্রি হয়। এটি টানা তিনদশকের বেশি বছরেরও বেশি সময় ধরে মুদ্রিত হয়েছিল। যৌনতা এবং যৌনতার প্রতি পরিবর্তনশীল মনোভাব প্রতিফলিত করতে একাধিকবার সংশোধন হয়েছে বইটিতে। অনেক বিশেষজ্ঞ বিশ্বাস করেন যে বইটি যৌন বিষয় নিয়ে খোলামেলা আলোচনার ক্ষেত্রে চারপাশের নিষেধাজ্ঞার বেড়াজাল ভেঙে ফেলতে সাহায্য করেছিল। যা মানুষকে তাদের নিজস্ব যৌনতা নিয়ে আরও স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করতে সাহায্য করে।

এটি লক্ষণীয় যে, বিশ্বায়ন থেকে বহুদূরে থাকা সেই পৃথিবীতে এই বইটি প্রকাশিত হয়েছিল। যখন যৌনতা সম্পর্কে তথ্য এখনকার মতো সহজলভ‌্য ছিল না এবং যৌনতার বিষয়ে সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গি আলাদা ছিল। সে কারণেই বইটির মূল্যায়ন করার সময় প্রসঙ্গটি বিবেচনা করা গুরুত্বপূর্ণ। তাই বইটিকে একটি ২৫০-পৃষ্ঠার ইরোটিক গাইড ভাবা সঠিক হবে না।

‘দ‌্য জয় অফ সেক্স’ লিখে ডা. কমফোর্ট রাতারাতি প্রচারের পাদপ্রদীপে আসেন।  বিশ্বব‌্যাপী বইটির বিক্রি থেকে তিনি ৩০ লক্ষ টাকা আয় করেন। তবু তাঁর আক্ষেপ ছিল এই যে তাঁর অন‌্য কাজগুলির প্রতি সুবিচার হয়নি। তবু, জনপ্রিয়তার ঢেউয়ে ভেসে ১৯৭৪ সালে লেখেন ‘মোর জয় অফ সেক্স’ এবং ১৯৯১ সালে লেখেন ‘দ‌্য নিউ জয় অফ সেক্স’। ডা. কমফোর্ট পেশায় ছিলেন স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ। প্রথম বইটি লেখার সময় তাঁর বয়স ছিল ৫২। ‘দ‌্য জয় অফ সেক্স’ প্রকাশের কিছুদিনের মধ্যেই ৩০ বছরের বিবাহে বিচ্ছেদ হয়। পরের বছর বিয়ে করেন প্রাক্তন স্ত্রীর বেস্টফ্রেন্ডকেই, যার সঙ্গে তার আগে দশ বছর প্রেম করেছিলেন ডা. সেক্স।  

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন