Everything Everywhere All at Once : অভিবাসীর অব‌্যক্ত যন্ত্রণা ফুটিয়ে অস্কার জয়

অভিবাসী গল্পের উদ্ভাবনী এবং জটিল চিত্রায়নের জন্য ‘এভরিথিং এভরিহোয়ার অল অ্যাট ওয়ানস’-এর অস্কার জয়, এটুকু বললে সবটা বলা হবে না

Everything Everywhere All at Once : অভিবাসীর অব‌্যক্ত যন্ত্রণা ফুটিয়ে অস্কার জয়

এমন তো হতেই পারে, আমরা অনেকেই এমন জগতে বাস করি যেটা আমাদের প্রত‌্যাশিত ছিল না। সেটা বাহ্যিক হতে পারে, বা মনোগত। আমাদের অনেককে দেশ ছাড়তে হয়েছে কোনও পরিস্থিতিতে। আবার হয়তো কেউ শিল্পী হতে চেয়েছিলাম, অনেক পারিপার্শ্বিক কারণে তা আর হয়ে ওঠেনি। অন‌্য জীবন যাপন করতে হচ্ছে। দুই ক্ষেত্রেই অ-সুখ আমাদের ন‌্যাহ‌্য সঙ্গী। এই দুই অসুখকে মিলিয়ে দিয়েছেন ড‌্যানিয়েলস। সুক্ষ্ণভাবে বলতে গেলে অভিবাসীদের অব‌্যক্ত যন্ত্রণা ফুটিয়ে তুলে তাঁদের এই বছরে অস্কারে সেরা ছবির তকমা পেল 'এভরিথিং এভরিহোয়ার অল অ্যাট ওয়ান্স' (Everything Everywhere All at Once)। ছবিটি দার্শনিক বিষয়বস্তু তথা অস্তিত্ববাদ, শূন্যবাদ ও নিরর্থবাদ এবং প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে চলে আসা ট্রমা, এডিএইচডি, এশীয়-মার্কিন পরিচয় চিত্রায়নের জন্য বিপুল সমাদৃত হয়। ন্যাশনাল বোর্ড অব রিভিউ ও আমেরিকান ফিল্ম ইনস্টিটিউট ২০২২ সালের সেরা ১০ চলচ্চিত্রের তালিকায় এই চলচ্চিত্রটিকে স্থান দেয়।


অভিবাসী গল্পের উদ্ভাবনী এবং জটিল চিত্রায়নের জন্য ‘এভরিথিং এভরিহোয়ার অল অ্যাট ওয়ানস’-এর অস্কার জয়, এটুকু বললে সবটা বলা হবে না। আসলে অভিবাসী সমস‌্যাটি আজ আবার দুরুহ হয়ে উঠেছে। কোনও কারণে মাটি ছেড়ে আসা মানুষের মধ্যে যে একটা ‘আইডেন্টিটি ক্রাইসিস’ তৈরি হয়, তা প্রজন্মের পর প্রজন্ম চলতে থাকে। এটা বাইরে থেকে বোঝা যায় না। বাইরে যে দৃশ‌্যত জীবনটা আরা আসলের মধ্য়ে যোজন দূরত্ব থেকে যায়। পরিস্থিতির উপর, নিজের উপর, আশপাশের মানুষের উপর বিশ্বাস থাকে না। প্রকৃতপক্ষে জীবনের কোনও অর্থই খুঁজে পাওয়া যায় না।


ড‌্যানিয়েল কোয়ান এবং ড‌্যানিয়েল শিনার্ট পরিচালিত ছবিটির কেন্দ্রীয় চরিত্রে এলভিন (অভিনেত্রী মিশেল ইয়ো সেরা অভিনেত্রীর পুরস্কার পেলেন)। যনি পরিবারের অমতে ওয়েমন্ডকে (অভিনেতা কে হু কুয়ান) বিয়ে করেন। পরিবার সেই বিয়ে মেনে না নেওয়ায় চিন ছেড়ে তিনি এনমন্ডের সঙ্গে আমেরিকা চলে আসেন। এখানে তাদের এক কন‌্যা সন্তান জন্মায়– জয়। ছবির শুরুতে আমরা দেখতে পাই একটি অভিবাসী ছোট চিনা পরিবার। আপাতভাবে সুখী বলে মনে হয়, তবে আদপে সম্পর্কগুলো তিক্ত। এলভিন ঋণ নিয়ে একটি লন্ড্রি চালায়। কিন্তু ঋণের টাকায় সখের জিনিস কিনতে গিয়ে ব‌্যবসা ঠিক চলছে না। ব‌্যাঙ্কের ঋণ শোধের তাড়া। এদিকে স্বামী এডমন্ড বিবাহ বিচ্ছেদের নোটিস পাঠিয়েছে। মেয়ে, যে একজন লেসবিয়ান, তার সঙ্গেও এলভিনের সম্পর্ক তিক্ত। এলভিন, একজন মা যিনি তার অনেক দায়িত্বের মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখতে সংগ্রাম করছেন। একটি কমেডি-সায়েন্স ফিকশনের আড়ালে ছবিটি তৈরি হলেও আমাদের সবাইকে ভাবা প্র‌্যাকটিস করায়, যারা বাহ‌্যিক বা মনোগত অভিবাসী, সবাইকে।


ছবিটির মূল অংশে অনেকগুলি বিভিন্ন সংঘাত এবং সংগ্রামের একটি ধারণা, একটি আরেকটির সঙ্গে অপ্রত‌্যাশিতভাবে জুড়ে যাচ্ছে। বিশেষ করে ছোট অভিবাসী পরিবার, যারা পৃথিবীতে তাদের পথ তৈরি করার চেষ্টা করে এ ছবিতে তাদেরই গল্প বলা হয়েছে। এটা ব‌্যাক্ত হয়েছে যে আমরা কখনওই শুধু একটি স্বত্ত্বা, বরং অনেকগুলো স্বত্ত্বা। আমরা প্রত্যেকে একসঙ্গে অনেকগুলি জগতে বাঁচি! প্রত্যেকেই আমাদের নিজস্ব উপায়ে লড়াই করে চলেছি। বলতে গেলে, ছবিটির সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য দিকগুলির মধ্যে একটি হল অভিবাসন ও তার সঙ্গে আসা সংগ্রামের চিত্রায়ন।


তবে কি আমরা হতাশ হব? না, ছবিতে যে বার্তা দেওয়া হয়েছে, তার জন‌্যই ছবিটির অস্কার প্রাপ্তি। বর্তমানকে মেনে নেওয়া, ইতিবাচক মনোভাব নিয়ে আগামীকে আলিঙ্গন, আত্মবিশ্বাস আর পরিবারকে ভালবাসা। অভিবাসন সমস‌্যা হয়তো আগামী দিনে আরও প্রকট হবে, তবে মানুষকে সীমান্তের সীমারেখা পার করে জীবনকে ভালবাসতে হবে। সেটাই দেখাতে চেয়েছেন ড‌্যানিয়েলরা। তাতে সফলও হয়েছেন।

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন