Margaret Sullivan : আস্থা হারিয়েছে মার্কিন সংবাদমাধ্যম, দাবি বইয়ে

রয়টার্স ইনস্টিটিউটের একটি আন্তর্জাতিক সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে সংবাদমাধ‌্যমের উপর আমেরিকানদের আস্থা ২৯ শতাংশে নেমে এসেছে। বিশ্বের যে ৪৬টি দেশকে নিয়ে এই সমীক্ষা, তাদের মধ্যে আমেরিকার স্থান সর্বনিম্ন।

Margaret Sullivan : আস্থা হারিয়েছে মার্কিন সংবাদমাধ্যম, দাবি বইয়ে

মার্কিন সংবাদমাধ্যম আগের তুলনায় অনেকটাই বিশ্বস্ততা হারিয়েছে। ২০২১ সালে রয়টার্স ইনস্টিটিউটের একটি আন্তর্জাতিক সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে সংবাদমাধ‌্যমের উপর আমেরিকানদের আস্থা ২৯ শতাংশে নেমে এসেছে। বিশ্বের যে ৪৬টি দেশকে নিয়ে এই সমীক্ষা, তাদের মধ্যে আমেরিকার স্থান সর্বনিম্ন। দেখা গিয়েছে, বিশ্বের সবচেয়ে প্রাচীন গণতন্ত্রে মূলধারার সংবাদপত্রের প্রতি অবিশ্বাস দিন দিন আরও খারাপ হচ্ছে। গতবছর অক্টোবরে  মার্কিন সাংবাদিক মার্গারেট সুলিভানের (Margaret Sullivan) ‘নিউজরুম কনফিডেন্সিয়াল : লেসন (অ‌্যান্ড ওরিস) ফ্রম এন ইঙ্ক স্টেইনড লাইফ’ (Newsroom Confidential: Lessons (and Worries) from an Ink-Stained Life)

প্রকাশিত হয়েছে। সম্প্রতি তিনি একটি নিবন্ধে তাঁর কর্মজীবনের অভিজ্ঞতা লিখতে গিয়ে দাবি করেছেন, মূলত, কেবল টিভি নেটওয়ার্কের উত্থান, আর বিশেষ করে রুপার্ট মারডকের ফক্স নিউজ, বিশ্বাসের এই পতনের জন্য একটি বড় অবদান রেখেছে।

সুলিভানের মতে, মতামত কোনও তথ‌্য নয়। ইন্টারনেটের জন‌্য সেটারই বাড়বাড়ন্ত হয়েছে। ফেসবুক একাই গণতন্ত্রের প্রধান শত্রু হয়ে উঠছিল। কারণ, এর অ্যালগরিদমগুলি সত্যের চেয়ে ‘পাগলামি মিথ্যা’কে সমর্থন করছিল। ২০২৬ সালের নির্বাচনে ফেসবুককে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে রাশিয়ার বিভ্রান্তিমূলক প্রচারণার একটি মোহরা হয়ে উঠতে দেখা গিয়েছে। কিন্তু যতদিন মুনাফা বেড়েছে, ততদিন কোনও পদক্ষেপ করা হয়নি।

মার্কিন সাংবাদিক নিবন্ধটিতে লিখেছেন, আমেরিকা কীভাবে এই জায়গায় পৌঁছল, যদি সেই প্রশ্নের জবাব দু’টি শব্দে দিতে হয়, তবে তা হবে ‘ফক্স নিউজ’। ফক্স নিউজ আমেরিকায় সত্য বলার ক্ষমতা, এমনকি সত‌্য-মিথ‌্যার পার্থক্য সম্পর্কে সচেতন হওয়ার উপর ভয়ানক নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। এটা ঘটেছে আরও একটা কারণে, আমেরিকানদের সিংহভাগ ফক্স নিউজকে সংবাদের একমাত্র উৎস হিসাবে না দেখলেও, অবশ‌্যই প্রথম পছন্দ।

২০১৯ সালে অনুসন্ধানী প্রতিবেদক জেন মায়ার দ্য নিউ ইয়র্কার-এ ‘দ্য মেকিং অফ দ্য ফক্স নিউজ হোয়াইট হাউস’ নামে একটি অত্যাশ্চর্য এগারো হাজার শব্দের নিবন্ধ লিখেছিলেন। সেই প্রতিবেদনের মাধ্যমে মায়ার ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং রক্ষণশীল কেবল নেটওয়ার্কের মধ্যে সিম্বিওটিক ঘনিষ্ঠতা অন্বেষণ করেছেন এবং দৃঢ়ভাবে পরামর্শ দিয়েছেন যে ফক্স নিছক পক্ষপাতের বাইরে সরাসরি প্রচারে অবতীর্ণ হয়েছে। সংবাদমাধ‌্যমটি রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনের কাছাকাছি কিছু হয়ে উঠেছে। সুলিভান মনে করেন যে মায়ারের তদন্ত নিপুণভাবে সম্পন্ন হয়েছিল এবং এটি ব্যাপকভাবে অনুরণিত হয়েছিল।

সুলিভান প্রায় তিন বছর ওয়াশিংটন পোস্ট-এর কলামিস্ট ছিলেন। সে সময় তিনি ফক্স নিউজ সম্পর্কে অনেক কলাম লিখেছেন। ২০১৬ সালের গ্রীষ্মে ওয়াশিংটনের রাস্তায় পিঠে গুলিবিদ্ধ হয়ে ডেমোক্রেটিক ন্যাশনাল কমিটির ২৭ বছর বয়সী কর্মী সেথ রিচের মৃত্যুর বিষয় নিয়ে কীভাবে তারা দর্শকদের বিভ্রান্ত করেছিল, তাঁরা তার কঠোর সমালোচনা করেছিলেন। ফক্সের প্রাইম টাইম স্টার শন হ্যানিটি নিরলসভাবে এই ধারণাটি ছড়িয়ে দিয়েছেন যে এটি ডিএনসি-র একটি অভ্যন্তরীণ কাজ হতে পারে। উইকিলিকসের সঙ্গে রিচের ইমেল শেয়ার করার জন্য হিলারি ক্লিনটনের শিবিরের প্রতিশোধ। হ্যানিটি এটাই বলতে চেয়েছিলেন যে হিলারি বা তাঁর লোকেরা সেথ রিচকে হত্যার নির্দেশ দিয়েছিলেন। রিচের পরিবার পরে এর বিরোধিতা করে সংবাদমাধ‌্যমটির বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করেছিল।

সুলিভান মনে করেন, মায়ারের কাজের উপর ভিত্তি করে তৈরি করা এবং ফক্স নিউজ কীভাবে প্রায় ট্রাম্প প্রশাসনের একটি হাত হিসাবে কাজ করে সে সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি করা গুরুত্বপূর্ণ। তাঁরা বিশ্বাস করেন যে আমেরিকায় ফক্স নিউজের ধ্বংসাত্মক ভূমিকাকে গুরুত্ব সহকারে নেওয়ার সময় এসেছে। এমন নয় যে এটা কোনও ভুল-ত্রুটি বা বাণিজ্যিক উদ্বেগের সঙ্গে চলা কোনও সাধারণ সংবাদ সংস্থা নয়। এটি একটি নির্লজ্জ প্রোপাগান্ডা, কোটি কোটি টাকার ব‌্যবসা।

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন