২০১৮ সালে অক্টোবরে তাঁর প্রথম বই ‘ফুল ডিসক্লোজার’ প্রকাশের সঙ্গে সঙ্গেই তা বেস্টসেলার হয়ে যায়। বইটিতে স্টর্মি একজন পর্নস্টার হিসাবে নিজের অভিজ্ঞতার কথা শুনিয়েছেন। প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক নিয়েও বিশদে জানিয়েছেন স্টর্মি।
kkkkkkkkkkkkkkkkk
২০০৬ সাল। এপ্রিল। লেক তাহো, ক্যালিফোর্নিয়া।
ভর দুপুর, কিংবা মাঝরাত। পেইন্ট হাউসের সুসজ্জিত লাক্সারি শুটের ভিতর দিন-রাত বোঝা কঠিন । সার্ভিস গার্ল শক্ত পানীয় আর গ্লাস দুটি রেখে বেরিয়ে যেতে দরজা বন্ধ হয়ে গেল।
পক্ককেশের, ষাটোর্ধ পুরুষটি তখন মিটিমিট হাসেছেন। যেন এবার, হাতে এলে তো জানা!
সঙ্গের যুবতীটি সবেমাত্র ২৭ পেরিয়েছে। খুব একটা পছন্দের লোক এ বুড়ো নয়। তবু কী উপায়? লোকটা রাজনীতিতে যেমন পোক্ত, তেমনই ব্যবসা কুবেরের ধনও জমিয়েছে। দিলখোলা। এ না-খুশ হলে সমস্যা আছে।
ততক্ষণে যুবতী অবশ্য তৈরি। শরীরের সব পোষাক খুলে ফেলেছে। যেন ভাবটা এমন, বাবু আর প্রেম দেখিয়ে কাজ নেই, যা করার এসো, লেগে পড়ো...
তবে বুড়োটা আনাড়ি। পেইন্ট হাউসের বাথরুমে স্নান করতে করতেই আক্ষেপটা মনের মধ্যে ঢুকে গেল যুবতীর। যুবতী একজন পর্ন অভিনেত্রী। তার অনেক পুরুষের সঙ্গে ইচ্ছা-অনিচ্ছায় শরীর-সম্পর্কের অভিজ্ঞতা রয়েছে। কিন্তু এই বুড়োটা অত্যন্ত উগ্র প্রকৃতির।
শুধু আমেরিকা কেন, ফের সংবাদ শিরোনামে প্রাক্তন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। আর তার সঙ্গে জুড়েছে পর্নস্টার স্টর্মি ড্যানিয়েলসের (Stormy Daniels) নামও। জানেন কি এর অন্তরালে একটি বইয়ের ভূমিকা রয়েছে?
২০১৬ সালে স্টর্মিকে মুখ বন্ধ করার জন্য ১.৩০ লক্ষ ডলার দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে ট্রাম্পের বিরুদ্ধে। চাঞ্চল্যকর এই অভিযোগ সামনে আসার পরেই ট্রাম্পের বিরুদ্ধে ফৌজদারি ধারায় মামলা রুজু করা হয়েছিল। ট্রাম্পের বিরুদ্ধে মানহানির মামলা দায়ের করেছিলেন স্টর্মি। কিন্তু মঙ্গলবার সেই মামলায় হেরে গিয়েছেন স্টর্মি ড্যানিয়েলস। উল্টে, ক্যালিফোর্নিয়ার একটি আদালত মানহানির মামলায় স্টর্মিকেই ১ লক্ষ ২১ হাজার মার্কিন ডলার ক্ষতিপূরণ দেওয়ার নিদেশ দিয়েছে।
২০১১ সালে আত্মজীবনীমূলক একটি বই ‘ফুল ডিসক্লোজার’ (Full Disclosure) লেখেন স্টর্মি ড্যানিয়েলস। সেই বই প্রকাশ নিয়ে মার্কিন সাপ্তাহিক ম্যাগাজিন ‘ইন টাচ’-এ একটি সাক্ষাৎকার দিতে গিয়ে তিনি প্রথমবার দাবি করেন যে ট্রাম্পের সঙ্গে তাঁর ব্যক্তিগত সম্পর্ক ছিল। স্টর্মির এই সাক্ষাৎকার ঘিরে তোলপাড়ল হয় আমেরিকা তথা গোটা বিশ্ব। একজন প্রেসেডিন্ট পদপ্রার্থীর সঙ্গে এক পর্নস্টারের মাখামাখির খবর বিশেষভাবে প্রভাবিত করে আমেরিকাবাসীদের। আসলে আমেরিকার সমাজ যতই উদার মনোভাবাপন্ন হোক না কেন, তারা চায় দেশের প্রেসিডেন্ট যেন কলুষমুক্ত চরিত্রের হন। আমেরিকার দ্বিদলীয় রাজনীতিতে দু’টি দলের নীতি-আদর্শের মধে্য বিশেষ কোনও প্রার্থক্য নেই। সে কারণে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রার্থীদের ব্যক্তিগত চরিত্র ও সম্পর্কগুলি ভীষণভাবে প্রাধান্য পায়।
স্টর্মি দাবি করেন, ২০০৬ সালে ট্রাম্পের সঙ্গে তাঁর সম্পর্কের শুরু হয়েছিল। ওই বছরের জুলাইয়ে একটি গলফ টুর্নামেন্টে ট্রাম্পের সঙ্গে তাঁর প্রথম দেখা হয়। এর পরে ক্যালিফোর্নিয়া ও নেভাডার রিসর্ট এলাকার হোটেলে তাঁরা যৌন সম্পর্কে লিপ্ত হন বলেও দাবি করেন স্টর্মি । পাশাপাশি তাঁর দাবি, এই যৌন সম্পর্কের কথা যাতে কেউ জানতে না পারে, সে জন্য তাঁকে প্রবল চাপ দেন ট্রাম্প। অভিযোগ, ২০১৬ সালে মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আগে মুখ বন্ধ রাখার জন্য তাঁকে ১ লাখ ৩০ হাজার মার্কিন ডলার ঘুষও দিয়েছিলেন ট্রাম্পের আইনজীবী। স্টর্মি স্বীকার করেছেন তাঁর বইয়ে, ট্রাম্পকে মোটেই তাঁর পছন্দ ছিল না। কিন্তু লেক তাহের হোটেলে যা ঘটেছিল, তাতে দু’জনেরই সম্মতি ছিল। তবে ট্রাম্পের সঙ্গে সেই সম্পর্ক ছিল তাঁর সবচেয়ে খারাপ যৌন অভিজ্ঞতা।
আমেরিকার অ্যাডাল্ট ছবির অভিনত্রী স্টর্মি ড্যানিয়েলসের আসল নাম স্টেফানি ক্লিফোর্ড। জন্ম ১৯৭৯ সালে আমেরিকার লুজিয়ানায়। তাঁর শৈশব-কৈশর কেটেছে লুজিয়ানার ব্যাটন রুজের একটি দরিদ্র এলাকায়। জানা যায়, ছোটবেলার ঘোড়ায় চড়া আর লেখালেখির সখ ছিল তাঁর। হতে চেয়িছিলেন সাংবাদিক। স্টর্মি তাঁর আত্মজীবনীতে জানিয়েছেন, তাঁর সে স্বপ্নপূরণ হয়নি। ২০০৪ সালে তিনি পর্ন ইন্ডাস্ট্রিতে জড়িয়ে পড়েন। নিজের পরিচয় তৈরি করেন স্টর্মি ড্যানিয়েলস। হুইস্কির নামকরা ব্র্যান্ড জ্যাক ড্যানিয়েলস থেকেই নিজের নামের অংশ বেছে নেন তিনি নিজেই।
পর্ন ইন্ডাস্ট্রিতে কাজে নামার আগে মাত্র ১৭ বছর বয়সেই প্রথম স্ট্রিপিংয়ের (শরীর প্রদর্শনের জন্য জনসমক্ষে নগ্ন হওয়া) পরে তিনি অন্যান্য কাজ শুরু করেন। পর্ন ছবির পাশাপাশি বেশ কয়েকটি মূলধারার ছবিতেও অভিনয় করেছেন তিনি। জিতেছেন বহু পুরস্কার। রাজনীতির আঙিনা থেকেও দূরে থাকতে চাননি স্টর্মি। ২০১০ সালে তিনি লুসিয়ানার রিপাবলিকান সিনেট মনোনয়নের জন্য প্রতিযোগিতা করে রাজনীতিতেও নাম লিখিয়েছিলেন।
নিজের পর্ন কেরিয়ারের জন্য যতটা না, স্টর্মি তার চেয়ে বেশি পরিচিতি পেয়ে গেলেন প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে তাঁর নাম জড়িয়ে। ২০১৮ সালে অক্টোবরে তাঁর প্রথম বই ‘ফুল ডিসক্লোজার’ প্রকাশের সঙ্গে সঙ্গেই তা বেস্টসেলার হয়ে যায়। বইটিতে স্টর্মি তাঁর জীবনের গল্প বলেছেন। একজন পর্নস্টার হিসাবে নিজের অভিজ্ঞতার কথা শুনিয়েছেন। প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক নিয়েও বিশদে জানিয়েছেন স্টর্মি। যার মধ্যে রয়েছে তাঁরা কীভাবে দেখা হয়েছিল এবং তাঁদের মুখোমুখি হওয়ার ঘটনাগুলি। তিনি ট্রাম্পের প্রাক্তন আইনজীবী মাইকেল কোহেনের কুখ্যাত ‘হুশ মানি’ পেমেন্ট সহ তাঁকে মুখ বন্ধ রাখার জন্য ট্রাম্প এবং তার সহযোগীদের বিভিন্ন প্রচেষ্টার বর্ণনা দিয়েছেন।
২০০৬ সালে লেক তাহোতে একটি সেলিব্রিটি গল্ফ টুর্নামেন্টের সময় থেকে ট্রাম্পের সঙ্গে ড্যানিয়েলসেরর যৌন সম্পর্ক শুরুর দাবি করেন তিনি। যে সময়ে রিয়েলিটি শোয়ের টেলিভিশন তারকা স্ত্রী মেলানিয়ার গর্ভে তাঁদের সন্তান ব্যারনের জন্ম হয়। বইটিতে তিনি লিখেছেন, গল্ফ টুর্নামেন্টেই প্রথমবার ট্রাম্পকে দেখেন তিনি। স্টর্মি বলেন, ট্রাম্পের পেন্টহাউসে তাঁর একজন দেহরক্ষীদের বিখ্যাত রিয়েল এস্টেট টাইকুনের সঙ্গে ডিনার করার আমন্ত্রণ জানান স্টর্মিকে। সেখানেই প্রথমবার তাঁদের যৌনতা হয়।তিনি লিখেছেন, "এটি আমার সবচেয়ে কম আকর্ষণীয় যৌনতা ছিল।”
পুরো বই জুড়ে, ড্যানিয়েলস নিজেকে একজন শক্তিশালী এবং স্বাধীন মহিলা হিসাবে চিত্রিত করেছেন। যিনি ‘পাওয়ারফুল’ পুরুষদের ভয় করতে অস্বীকার করেন। তিনি মিডিয়া এবং রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানেরও সমালোচনা করেছেন। তিনি বিশ্বাস করেন যে তারা তাঁর প্রতি অবিচার করেছে। ‘ফুল ডিসক্লোজার’ বইটি ড্যানিয়েলস এবং ট্রাম্পের মধ্যে কথিত সম্পর্কের বিষয়ে নতুন করে আগ্রহের জন্ম দিয়েছে। বইটি সাধারণত সমালোচকদের দ্বারা সমাদৃত হয়েছিল, যারা ড্যানিয়েলসের লেখা এবং তার অভিজ্ঞতার কথা বলার সাহসের প্রশংসা করেছেন।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন