‘প্লেবয়’ মাগাজিনের সাম্প্রতিক সংখ্যায় মারলেনের একটি ১২ পৃষ্ঠার দীর্ঘ সাক্ষাৎকার প্রকাশিত হয়েছে। যেখানে তিনি নারী ও LGBTQ+ অধিকার নিয়ে কথা বলেছেন।
বরাবরই বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দুতে থাকে ‘প্লেবয়’ (Playboy) ম্যাগাজিন। তাতে কোনও নতুনত্ব নেই। তবে হালফিলে সেই পত্রিকা এতটাই উষ্ণতা ছড়িয়েছে যে তাতে উত্তপ্ত ফ্রান্সের অভ্যন্তরীণ রাজনীতি। ‘প্লেবয়’ ম্যাগাজিনের প্রচ্ছদে খোলামেলা পোশাকে হাজির হয়ে নিজের দলেরই সমালোচনার মুখে পড়েছেন ফ্রান্সের মন্ত্রী মারলেন শিয়াপ্পা (Marlene Schiappa)। পরিস্থিতি এমন জায়গায় পৌঁছেছে যে প্রধানমন্ত্রী এলিজাবেথ বোর্ন তাঁকে ডেকে স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন, যেটা ঘটেছে তা ঘটলেই ভাল হত।
বস্তুত, ‘প্লেবয়’ মাগাজিনের সাম্প্রতিক সংখ্যায় মারলেনের একটি ১২ পৃষ্ঠার দীর্ঘ সাক্ষাৎকার প্রকাশিত হয়েছে। যেখানে তিনি নারী ও LGBTQ+ অধিকার নিয়ে কথা বলেছেন। সেই কারণেই প্রচ্ছদে তাঁর একটি ছবি ছাপা হয়েছে, যা ‘প্লেবয়’ ম্যাগাজিনের নিজস্ব ফটোশুট। সাক্ষাৎকারে তাঁর বলা কথাগুলি নিয়ে যতটা আলোচনার প্রয়োজন ছিল, তা না হয়ে বরং ম্যাগাজিনের প্রচ্ছদে তাঁর ছবিটি ঘিরে সমালোচনা বেশি হচ্ছে। একটি সাদা পোশাকে শিয়াপ্পার বক্ষবিভাজিকা নজর কাড়ছে সেই ছবিতে। এখানে বলে রাখা ভাল, ‘প্লেবয়’ ম্যাগাজিন ২০১৭ সাল থেকে নগ্ন ছবি ছাপা বন্ধ করে দিয়েছে। তবে শুরু থেকেই নারীর নগ্ন ছবি ছাপার জন্য বিখ্যাত ও বিতর্কিত ‘প্লেবয়’ ম্যাগাজিন। কিন্তু কখনও ছবিগুলিতে যৌনতা প্রকট হয়নি, খেয়াল রাখা হয়েছে শিল্পের দিকেই। এ হেন ‘প্লেবয়’ পত্রিকায় মন্ত্রীর ছবি হতেই সমালোচনায় সরব হয়েছে প্রেম ও ছবির দেশ ফ্রান্স। শিয়াপ্পার সমালোচনায় নেমেছে সেদেশের আম জনতা থেকে রাজনৈতিক মহল।
শিয়াপ্পা বর্তমানে ফ্রান্সের সামাজিক অর্থনীতি দফতরের মন্ত্রী। ২০১৭ সালে তিনি প্রথম লিঙ্গ সমতা (Gender equality) মন্ত্রী হিসাবে নিযুক্ত হন। শিয়াপ্পা দীর্ঘদিন ধরেই নারী সমানাধিকার নিয়ে আন্দোলন করে আসছেন। লিঙ্গ সমতা মন্ত্রী হিসাবে তিনি মহিলাদের উপর যৌন হয়রানি রুখতে একটি আইন তৈরিতে মুখ্য ভূমিকা পালন করেছিলেন। রাস্তায় মহিলাদের কটুক্তি বা কুরুচিপূর্ণ ইঙ্গিত, অনুসরণ, যৌন হয়রানির অভিযোগে অভিযুক্ত পুরুষকে স্পট ফাইন করার বিধান রয়েছে সেই আইনে। আইনটি কার্যকর হওয়ার পর ফ্রান্সের বড়বড় শহরগুলিতে এই ধরনে নারী হেনস্তার ঘটনা বেশ কিছুটা কমেছে।
শিয়াপ্পার কাজগুলি তাঁর দলের কাছে প্রশংসিত হলেও, এখন তারা ‘প্লেবয়’ ম্যাগাজিনের কভারে স্বল্পবাসে ছবি মানতে পারছে না। যেমনটা জানা যাচ্ছে যে দলের অনেক নেতাই শিয়াপ্পার ছবি নিয়ে প্রধানমন্ত্রী এলিজাবেথ বোর্নের কাছে ক্ষোভ জানিয়েছেন। এরপর তিনি শিয়াপ্পাকে ডেকে পাঠান নিজের দফতরে। তিনি শিয়াপ্পাকে বলেছেন, “বিশেষ করে এই সময়ের জন্য এই কাজটি উপযুক্ত হয়নি।”
বস্তুত, ফ্রান্স বর্তমানে অর্থনৈতিক সংকটের মধ্যে দিয়ে চলেছে। জনগণের ব্যাপক বিরোধিতা সত্ত্বেও প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যক্রোঁর নেতৃত্বের সরকার বিতর্কিত পেনশন নীতি সংস্কারে বদ্ধপরিকর। তাতে দেশটিতে রাজনৈতিক ও সামাজিক সংকটও দেখা দিয়েছে। ফরাসী রাজনীতিবিদ জিন লুক মেলনচা পুরো বিষয়টির সমালোচনা করে বলেন, “যে দেশে প্রেসিডেন্ট নিজেকে Pif এবং তার মন্ত্রী প্লেবয়-এ নিজেকে প্রকাশ করেন, সেখানে বিরোধীরা তো চুপ থাকবে না। ফ্রান্স পথভ্রষ্ট হচ্ছে।” শুধু কি তাই, শিয়াপ্পার নিজের সহকর্মী, নারী অধিকার আন্দোলনের কর্মী স্যান্ডরিন রুসো বলেন, “আমরা একটি সামাজিক সঙ্কটের মাঝখানে রয়েছি। মানুষ জীবন এবং মৃত্যুর মধ্যে রয়েছে। আমি বুঝতে পারছি পর্দার আড়ালে ধোঁয়া উঠতে শুরু করেছে।”
শিয়াপ্পাা শনিবার একটি টুইট বার্তায় তার সমালোচকদের উদ্দেশে বলেছেন, “মহিলাদের নিজের শরীরের নিয়ন্ত্রণ করার অধিকার সর্বকালীন ও সর্বব্যাপী। নিন্দুক এবং ভন্ডদের প্রতি যথাযথ সম্মানের সঙ্গে মনে করিয়ে দিতে চাই ফ্রান্সে নারীরা স্বাধীন।”
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন