সদ্য প্রকাশিত হয়েছে পার্থজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের কিশোর রচনা সম্ভার। নির্মল বুক এজেন্সি। পাওয়া যাচ্ছে কলেজ স্ট্রিটে।
উপন্যাস ও বড়োগল্প। একটি দুটি নয়, সব মিলিয়ে সাতটি। ছোটোগল্প তো অসংখ্য, তিন ডজনের কাছাকাছি। অনেক ছড়া-কবিতা ও জীবনী। অন্য ধরনের রচনা। সব মিলিয়ে এক জবর আয়োজন। কত রকমের লেখা। ছমছমে থমথমে ভয়ের। গমগমে জমজম রহস্যের। হা-হা হো-হো হাসির। আনন্দের পাশে নিরানন্দ। পড়তে পড়তে মন কেমন করে। নিজের অজান্তেই শিখে নেওয়া যায় দুঃখ-জয়ের মন্ত্র। জানা হয়ে যায় লক্ষ্য পূরণের পথ। বলে, বড়ো হওয়ার কথা, ভালো হওয়ার কথা।
পার্থজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের গল্প-উপন্যাস আমোদে আনন্দে জুড়িয়ে ফুরিয়ে যায় না। ছোটোদের নিতাস্তই “ছোটো” ভেবে হেলায় ফেলায় রচিত নয়। এসব লেখা পড়ে ছোটরা আলো-অন্ধকার চেনে, পরিবেশ-পরিজন চেনে। ভালোবাসতে শেখে। উপন্যাস-গল্পের পাশাপাশি রয়েছে গভীর অনুভূতির, উপলব্ধির ছড়া-কবিতা, নজরুলের প্রেরণাময় জীবনকথা, এমনকি শান্তিনিকেতনে সত্যিকারের বাঘ-উপদ্রবের আখ্যান! ছোটোদের কথা ভেবে কত কী! এই আনন্দযজ্ঞে তাদের নিমন্ত্রণ।
পার্থজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের বিভিন্ন বইয়ের সেরা সব রচনা নিয়ে প্রকাশিত ‘কিশোর রচনাসম্ভার’ শুধু ছোটদের নয়, ভালো লাগবে বড়োদেরও। স্মৃতির খাতার পাতা একের পর এক সরে সরে যাবে। স্পষ্ট হয়ে উঠবে ছেলেবেলা, হারানো পুরোনো ছবি। যেন স্মৃতির নদীতে নদীতে অবগাহন। এও তো ভিন্নতর আনন্দ।
লেখক পার্থজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, “নানা বিষয়ে আমার কৌতূহল। পুরানো সাময়িকপত্র, ঠাকুরবাড়ি, শিশুসাহিত্যের ইতিহাস– বিভিন্ন দিকে তা বিস্তৃত। বিশ্ববিদ্যালয় স্তরে যে দু’টি গবেষণা সম্পন্ন করেছি, সে দু’টিও শিশুসাহিত্য সম্পর্কিত। বাংলা সাহিত্যের পুরনো সম্পদ কম পুনরুদ্ধার করিনি। একাধিক অপ্রকাশিত পাণ্ডুলিপিও খুঁজে পেয়েছি। অবনীন্দ্রনাথের একটি অমুদ্রিত বইয়ের পাণ্ডুলিপি উদ্ধার করেছি। সেই উদ্ধার-পর্বের কথা ভেবে আজও শিহরিত হই। এত শত কাণ্ডের মধ্যেও আমি ছোটদের জন্য লিখতে চেয়েছি। ছোটোদের জন্য আমার যত আনন্দ! তাদের কথা ভেবে নিরবিচ্ছিন্নভাবে অন্তত পঁচিশ-তিরিশ বছর ধরে। ছড়া-কবিতা দিয়ে আমার এই ছোটদের লেখালেখির সূচনা। এখনও ছোটোদের কথা ভেবে ছড়া-কবিতা লিখতে পারলে বেশি ভালো লাগে। মনে প্রশান্তি জাগে।”
বইটি সম্পর্কে লেখক নিজে বলছেন, “আমার প্রকাশিত বিভিন্ন বই থেকে লেখাগুলি এই সংকলনে সংগৃহীত হয়েছে। বড় গল্প ও উপন্যাস পর্যায়ে যে সব লেখা রয়েছে, তা অধিকাংশই পৃথক বই আকারে বেরিয়েছিল। কিছু কিছু এখনও পাওয়া যায়। গল্পগুলিও এযাবৎ প্রকাশিত আমার বিভিন্ন বই থেকে সংকলিত হয়েছে। ছোটোদের মতো করে বড় মানুষের কয়েকটি জীবনী আমি লিখেছি। এই সংকলনে আমার লেখা নজরুলের জীবনীটি রাখা হয়েছে। এটিও বই হয়ে বেশ ক’বছর আগে বেরিয়েছিল। ‘অন্য ধরনের রচনা’ পর্যায়ে যে লেখা দু’টি রয়েছে, নিজের কোনও বইতে তা গ্রন্থিত হয়নি। প্রথম লেখাটি ‘ছোটবেলার প্রিয় শখ’ নামে প্রকাশিত একটি সংকলনের জন্য একসময় লিখে দিয়েছিলাম। দ্বিতীয় লেখাটি ‘বর্তমান’ দৈনিকের ‘হ-য-ব-র-ল’ বিভাগের জন্য লেখা।”
পার্থজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের জন্ম ১৯৬৪, হাওড়ার সালকিয়ায়। পড়াশোনা কলকাতা ও রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে। অবনীন্দ্রনাথের শিশুসাহিতে্য ডক্টরেট। বাংলা ছড়ার বিবর্তন নিয়ে গবেষণা করে ডি-লিট উপাধি অর্জন। মূলত শিশুসাহিতি্যক। ছোটোদের ছড়া-কবিতায় সম্ভ্রমের আসন। ছোটোদের গল্প-উপন্যাসেও সমান সিদ্ধহস্ত। ছোটোদের কথা ভেবে পঞ্চাশটি বই লিখেছেন। সম্পাদনা করেছেন একশোরও বেশি বই। শিশুসাহিতা নিয়ে নিরবচ্ছিন্ন গবেষণায় ব্যাপৃত। শিশুসাহিতোর ইতিহাস রচনার পাশাপাশি শিশুসাহিতোের বহু হারানো সম্পদ পুনরুদ্ধার করেছেন। অবনীন্দ্রনাথের না-ছাপা বইয়ের পাণ্ডুলিপি ‘স্বপ্নের মোড়ক’ খুঁজে পেয়েছেন। গগনেন্দ্রনাথের ‘ভোঁদর বাহাদুর’-এর আদি-পাঠ, বাংলা ভাষার প্রথম বার্ষিকী ঠাকুরবাড়ি থেকে প্রকাশিত ‘পার্বনী’– এমন কত গুরুত্বপূর্ণ বই নতুন করে সম্পাদনা করেছেন। শিশুসাহিত্য নিয়ে শুধু নয়, ঠাকুরবাড়ি ও বাংলা সাময়িকপত্র নিয়েও গভীর অনুসন্ধিৎসা। ঠাকুরবাড়ি নিয়ে অন্তত বারোটি বই লিখেছেন। সম্প্রতি প্রকাশিত ‘সাময়িকপত্র প্রসঙ্গে’ বইটিতে বাংলা সাময়িকপত্রের ইতিহাস পর্যালোচনা করেছেন। ঠাকুরবাড়ি ও বাংলা সাময়িকপত্র সম্পর্কিত কিছু বই সম্পাদনাও করেছেন। পশ্চিমবঙ্গ সরকারের শিশু-কিশোর আকাদেমির কর্মপরিষদ সদস্য।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন