বর্তমান সময়ে মত প্রকাশের স্বাধীনতার উপর হস্তক্ষেপের চেষ্টা চলছে। পশ্চিমী দেশগুলিতে এর আগে এমন চ্যালেঞ্জের মুখে কখনও পড়তে হয়নি, বলেন সলমন রুশদি।
গত বছর অগস্ট মাসে বুকারজয়ী লেখক সলমন রুশদির উপর হামলার ঘটনা ঘটে। গুরুতর জখম হন তিনি। ঘটনার প্রায় নয় মাস পরে ফের মুখ খুললেন ‘দ্য স্যাটানিক ভার্সেস’-এর লেখক। বর্তমানে মত প্রকাশের স্বাধীনতা চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে বলে দাবি করেছেন। গত সোমবার (১৫ মে) লন্ডনে ব্রিটিশ বুক অ্যাওয়ার্ডের অনুষ্ঠানে রুশদিকে সম্মানিত করা হয়। তাঁকে ‘ফ্রিডম টু পাবলিশ’ পুরস্কারে সম্মানিত করা হয়েছে।
অনুষ্ঠানে একটি ভিডিয়ো বার্তা দেন রুশদি। সেখানে ভারতীয় বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ-আমেরিকান ঔপন্যাসিক একটি ভিডিও ভাষণে মন্তব্য করেছেন যে রোয়ালড ডাহল এবং ইয়ান ফ্লেমিং সহ লেখকদের কাজ ‘সেন্সর’ করার প্রচেষ্টার উল্লেখ করে বলেন, ফ্লেমিংয়ের জেমস বন্ড বইগুলিকে আরও ‘পলিটিক্যালি’ সঠিক করার জন্য প্রকাশকদের সাম্প্রতিক প্রচেষ্টা ‘হাস্যকর’ ছিল। তিনি বলেন, “আমাকে বলতে হবে এটা উদ্বেগজনক ছিল যে প্রকাশকরা রোয়ালড ডাহল এবং ইয়ান ফ্লেমিং-এর মতো লেখকদের কাজকে সেন্সরের চেষ্টা হিসাবে দেখছেন।”
বিতর্কিত লেখক সেই বার্তায় স্বাধীনভাবে মত প্রকাশের উপর ফের গুরুত্ব আরোপ করেছেন। তিনি বলেন, বর্তমান সময়ে মত প্রকাশের স্বাধীনতার উপর হস্তক্ষেপের চেষ্টা চলছে। পশ্চিমী দেশগুলিতে এর আগে এমন চ্যালেঞ্জের মুখে কখনও পড়তে হয়নি। তিনি আরও বলেন, স্বাধীন মতপ্রকাশের কণ্ঠরোধ করার চেষ্টা করা হচ্ছে, সে সম্পর্কে সকলের সচেতন হওয়ার সময় এসেছে।
স্বাধীন মতপ্রকাশের চ্যালেঞ্জগুলির বিরুদ্ধে যাঁরা কঠিন লড়াই চালিয়ে গিয়েছেন, তাঁদেরই সম্মান জানিয়ে থাকে ব্রিটিশ বুক অ্যাওয়ার্ড-এর আয়োজকরা। এবার ‘ফ্রিডম টু পাবলিশ’ পুরস্কারে রুশদিকে সম্মানিক করা হয়। শুধু লেখক নয়, অসহিষ্ণুতার বিরুদ্ধে লড়াই করা প্রকাশক এবং বই বিক্রেতাদেরও সম্মানিত করা হয়ে থাকে।
গত বছর অগস্টে নিউ ইয়র্কে একটি অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখার সময় রুশদির উপর হামলার ঘটনা ঘটে। তিনি প্রাণে রক্ষা পেলেও হামলাকারীর ছুরির আঘাতে তাঁর একটি চোখ চিরদিনের জন্য নষ্ট হয়ে গিয়েছে। ১৯৮৯ সালে তাঁর লেখা বই ‘দ্য স্যাটানিক ভার্সেস’ নিয়ে বিতর্ক বাধে। বইটিতে ইসলাম ধর্মকে অবমাননা করা হয়েছে বলে অভিযোগ ওঠে। এরপর ইরান সরকার রুশদির বিরুদ্ধে ধর্মদ্রোহের অভিযোগ করে মৃত্যু পরোয়ানা জারি করে। সেই সময় বইয়ের অনুবাদককেও খুন করা হয়। ইরান সরকারের এই ফতোয়া জারির পর বেশ কিছুদিন আত্মগোপন করে থাকতে হয়েছিল রুশদিকে।
১৯৯৮ সালে তেহরান রুশদির উপর থেকে সেই আদেশ প্রত্যাহার করা নেয়। তারপর জনজীবনে ফিরে আসেন দ্য স্যাটানিক ভার্সেস-এর লেখক। গত বছর নিউ ইয়র্কে হামলার পিছনে ইরান সরকারের হাত রয়েছে বলে দাবি করা হয়েছিল কোনও কোনও মহল থেকে।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন