Julius Caesar : যে নাটক প্রতিবার নতুনভাবে আবিষ্কার করা যায় : রাজা চট্টোপাধ্যায়

অধিকাংশ নাটকের ক্ষেত্রে যে ব্যক্তিকে গুপ্তহত্যা করা হবে, তাকে প্রথমে মহান দেখিয়ে পাবলিক সেন্টিমেন্ট টানার চেষ্টা করা হয়ে থাকে। যদিও শেক্সপীয়র সেই পথে একেবারেই হাঁটেননি। তিনি সিজারকে গড়তে চেয়েছেন দোষে-গুণে মেশানো একটি রক্ত মাংসের মানুষ হিসেবে।

Julius Caesar : যে নাটক প্রতিবার নতুনভাবে আবিষ্কার করা যায় : রাজা চট্টোপাধ্যায়


জুলিয়াস সিজার উত্তেজিত হয়ে নেমে এলেন সিংহাসন থেকে - না। না। বন্দীকে তিনি মোটেও ক্ষমা করবেন না। আর তখনই তাঁর বিশ্বস্ত অনুচর বর্গের আস্তিনের তলা থেকে বের হয়ে এল ঝকঝকে ছুরি। একের পর এক আঘাতে ছিন্ন-ভিন্ন সীজার লুটিয়ে পড়লেন ক্যাপিটালের ( রাজসভা) মেঝেতে। এগিয়ে এলেন সিজারের ছোটবেলার বিশ্বস্ত বন্ধু প্রাণাধিক ব্রুটাস। কিন্তু একি? ব্রুটাসের হাতেও প্রাণঘাতী ছোরা। মুহূর্তে তা নেমে এল সিজারের বুকে। রক্তস্নাত, ক্লান্ত, বিধ্বস্ত, বিস্মিত সিজার তাঁর শেষ প্রাণশক্তি দিয়ে চেঁচিয়ে উঠলেন, "তুমিও ব্রুটাস?"......

জুলিয়াস সিজার না না কারণে আমার কাছে শ্রেষ্ঠ নাটক বলে মনে হয়। ছোট্ট করে আলোচনা করছি।

১) নাটকের শুরুতে শেক্সপীয়র, সিজারকে মোটেই কোনও মহান ব্যক্তি হিসেবে দেখাননি। সিজার যুদ্ধ জয় করে স্পেন থেকে ফিরছেন, সেখান থেকে নাটকের সূত্রপাত। রোমের সর্বশ্রেষ্ঠ সম্রাট পম্পাই-এর পুত্রদের তিনি হত্যা করেছেন আর তখন থেকেই ‘প্রাসাদ-ষড়যন্ত্র’ শুরু হতে দেখা যায়। সিজারের মহানতার প্রথম উল্লেখ পাই তার মৃত্যুর পর; যখন এন্টনি (Mark Antony) রোমের জনগণের সামনে বক্তব্য রাখছেন অর্থাৎ স্মতি-কথায়, তার আগে নয়।

প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, অধিকাংশ নাটকের ক্ষেত্রে যে ব্যক্তিকে গুপ্তহত্যা করা হবে, তাকে প্রথমে মহান দেখিয়ে পাবলিক সেন্টিমেন্ট টানার চেষ্টা করা হয়ে থাকে। যদিও শেক্সপীয়র সেই পথে একেবারেই হাঁটেননি। তিনি সিজারকে গড়তে চেয়েছেন দোষে-গুণে মেশানো একটি রক্ত মাংসের মানুষ হিসেবে।

২) সিজারকে প্রথমে আমরা অতি-আত্মবিশ্বাসী (over confident ) এবং মানুষের প্রতি অবজ্ঞার মনোভাব সম্পন্ন দাম্ভীক ব্যক্তি হিসেবে দেখি। কেননা যুদ্ধ জয় করে ফেরার পথে এক জ্যোতিষী যখন তাঁকে মার্চ মাসের ‘আইডজ’ বা পনেরো তারিখটা সাবধানে থাকতে বললেন, তখন সীজার তাকে ‘ভাবুক’ বলে উড়িয়ে দিলেন।

Soothsayer :Beware the ides of March.

CAESAR :He is a dreamer; let us leave him: pass.

এছাড়াও আরও দু'বার সাবধানবাণী এসেছিল ভিন্ন দু’জনের কাছ থেকে। একজন সিজার-স্ত্রী ক্যালিফুর্নিয়া (Calpurnia), যিনি স্বপ্নে দেখেছিলেন সীজারকে হত্যা করা হচ্ছে। অপরটি এক অধ্যাপকের কাছ থেকে, যিনি গুপ্তহত্যার ঠিক আগে ষড়যন্ত্রের কথা একটি চিরকূটে লিখে সীজারকে জানিয়েছিলেন। আর সেখান থেকেই রহস্যটা দানা বাঁধে অর্থাৎ হিচককের বিখ্যাত টেবিলের নিচে বোম থিয়োরি শেক্সপীয়রের করতলগত ছিল। যাই হোক, মোট তিনবার সতর্কীকরণ এসেছিল। আর তিন তিনবারই সীজার সেগুলোকে অবজ্ঞা করেছিলেন। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য ভবিষ্যতবাণী শেক্সপীয়রের অন্যান্য নাটকেও দেখা যায়, ( যথা: ‘ম্যাকবেথ’- তিন ডাইনী ম্যাকবেথ ও ব্রাবনসীয়কে ভবিষ্যতবাণী করছে) এ থেকে মনে হয় শেক্সপীয়র অতীন্দ্রিয়ের (Occult) প্রতি তীব্র আগ্রহী ছিলেন।

৩) ষড়যন্ত্রীদের বিশেষত মূল ষড়যন্ত্রী ক্যাসিয়াসের ‘সিজার-বিরোধিতা’ বেশ যুক্তিগ্রাহ্যভাবে তুলে ধরেছেন শেক্সপীয়র। মনে করা যাক, ক্যাসিয়াস (Cassius) যখন ব্রুটাসকে (Marcus Brutus) ( সীজারের অতি প্রিয় অনুচর) দলে টানার চেষ্টা করছিলেন তখন যুক্তি হিসেবে তিনি দেখালেন, একবার সাঁতার কাটার সময় সীজার তলিয়ে যাচ্ছিলেন সেই সময় ক্যাসিয়াস তাকে বাঁচায়। তাই তিনি জানেন সিজার মৃত্যুকে কত ভয় পান। আর একবার সিজারকে ভয়ের স্বপ্ন দেখে চেঁচিয়ে উঠতে দেখেছে তিনি স্বয়ং। তাই এইরূপ দুর্বল মনের মানুষ কীভাবে রোমের ভবিষ্যত ভাগ্য নিয়ন্ত্রক হতে পারেন? ব্রুটাস শেষ পর্যন্ত ষড়যন্ত্রীদের সঙ্গে হাত মিলিয়েছিলেন রোমের মঙ্গলের উদ্দেশ্যে।

৪) সীজারের হত্যার দৃশ্যটি কিন্তু বেশ সাদামাটাভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে। সিজার ক্যাপিটালে গিয়ে তাঁর আসনে বসলেন। মেটেলাস তাঁর ভাই সিম্বারের নির্বাসন দন্ড রদ করার জন্য সিজারের কাছে আবেদন করলেন। সিজার নাকচ করলে, ক্যাসিয়াস ও ব্রুটাস আবেদনকারীদের পক্ষ নিয়ে সাওয়াল করতে লাগলেন। সিজারের সেই একই কথা, “সিম্বারকে ক্ষমা করা যাবে না। কারো অনুরোধে সীজার নড়ে না। ধ্রূবতারার মত তিনি স্থির” আর তখনই এক এক করে কুচক্রীরা সীজারকে আঘাত করল। সবশেষে ব্রুটাস। সীজারের শেষ উক্তি, “ব্রুটাস, তুমিও?” বলে তিনি মাটিতে লুটিয়ে পড়লেন। দৃশ্যটা এতই অনাড়ম্বর হওয়ায় তা অব্যর্থভাবে দর্শক হ্রদয়ে আঘাত করল।

৫) কিন্তু এরপরেই সিজারের শবদেহটি রোমের জনসাধারণের কাছে তুলে ধরার অংশটি বেশ রোমাঞ্চকর! ব্রুটাস জনসাধারণকে বোঝালেন সিজারকে হত্যা করা কেন জরুরি ছিল। কেননা সিজার দিন দিন অত্যন্ত দাম্ভিক ও রোমের পক্ষে বিপজ্জনক হয়ে উঠেছিলেন। জনগন ব্রুটাসের নামে জয়ধ্বণী দিতে শুরু করল। এরপর অ‌্যান্টনি এসে যখন সিজারের মহানতার কথা জনসাধারণকে মনে করিয়ে দিলেন, তৎক্ষণাৎ সেই জনগণ বলতে লাগল, ‘ব্রুটাসে মুন্ডু চাই!’ তারা চারিদিক লন্ড ভন্ড করতে লাগল। রোমের সে দিনের সেই জনগনের সঙ্গে আজকের জনগনের কী অদ্ভুত মিল!

৬) জনগণেরর হাতে সিনা নামে এক নিরীহ কবি প্রাণ হারালেন। তাঁর দোষ সিনা নামের এক ষড়যন্ত্রীও সেই দলে ছিল। কবি সিনা, কুচক্রী সিনা নয় প্রমাণ করার পরেও জনগণ তাকে মেরে ফেলল! কেন তার নামের সাথে কুচক্রীর নামের মিল হয়েছে। এক নাগরিক বলল যে, ‘ওই নামের জন্যই তাকে প্রায়শ্চিত্ত করতে হবে।

CINNA THE POET :What is my name? Whither am I going? Where do I

dwell? Am I a married man or a bachelor? Then, to

answer every man directly and briefly, wisely and

truly: wisely I say, I am a bachelor.

Second Citizen :That's as much as to say, they are fools that marry:

you'll bear me a bang for that, I fear. Proceed; directly.

জনগণ চলে আবেগে, যুক্তিতে নয়, সেটা সেই মহান নাট্যকার ভালোভাবেই জানতেন।

৭) অ‌্যান্টনি চরিত্রটি ভাস্বর হয়ে উঠেছে, কারণ সিজারের মত্যুর পর সে কুচক্রীদের সঙ্গে হাত মেলাবার ভান করে। কিন্তু তারপর মূলতঃ তাঁর নেতৃত্বে হত্যাকারীরা শাস্তি পায়। ঠিক এই সময় শেক্সপীয়র মৃত সিজারকে বলীয়ান করে তুলেছেন। মনে করুন ব্রুটাসের সেই উক্তি, ‘সীজার তুমি এখনও শক্তিমান।’

BRUTUS :O Julius Caesar, thou art mighty yet!

Thy spirit walks abroad and turns our swords

In our own proper entrails.

অর্থাৎ একটা ইমেজ, একটা সুকৃতি কত শক্তিশালী হতে পারে, সেই চিত্রণ চিত্রিত করেছিলেন শেক্সপীয়র এবং এখানেই নাটকটির উত্তরণ।

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন