ভাইজাগ রিডস-এর আয়োজনে ভিএমআরডিএ সেন্ট্রাল পার্কে প্রতি রবিবার সকাল ন’টা থেকে এগারোটা পর্যন্ত সাপ্তাহিক গণপাঠের আসর বসে থাকে। কবিগুরুর শহর কলকাতায় কেন এমন উদ্যোগ হবে না?
জুনের মাঝে এক রৌদ্রজ্জ্বল রবিবারের সকাল। হাতে বই আর বগলে ম্যাটি নিয়ে নানা বয়সী একদল মানুষ হাজির ভিএমআরডিএ সেন্ট্রাল পার্কে। গাছতলাগুলি দখল করে বই খুলে বসে পড়েছে সবাই।কয়েক ঘণ্টা এভাবেই চলল একান্ত, অথচ গণ পুস্তক পাঠ। কোলাহলহীন উদ্যানে শুধুই কোয়েলের সুরেলা ডাক আর শুকনো পাতা ঝড়ার শব্দ। পাঠ শেষে বই হাতে একটি গ্রুপ ছবি। অভিনব সাপ্তাহিক আয়োজন ভাইজাগের বইপ্রেমীদের।
এটাই ভাইজাগ রিডস (Vizag Reads)-এর প্রথম সম্মীলন। সিরিন মেহের (Shireen Meher) নামে এক বিজনেস কনসালট্যান্ট, ফাইনাল ইয়ারের ছাত্রী মেঘলা গোর্লি (Meghana Gorli) বেঙ্গালুরুর কাবন রিডস (Cubbon Reads) থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে ভাইজাগেও এমন একটি রিডার্স কমিউনিটির উদ্যোগ নিয়েছেন। উল্লেখ্য, বেঙ্গালুরুর কাবন পার্কে দুই বন্ধুর উদ্যোগে শুরু হওয়া সাপ্তাহান্তিক গণ পুস্তক পাঠের আয়োজনটি ছ’মাসের কম সময়ের মধ্যেই বিশ্বব্যাপী নীরব পাঠ আন্দোলনে পরিণত হয়েছে। যার সঙ্গে জুড়ে রয়েছে ভারতের ১৩টির বেশি শহর এবং বিশ্বের ১৫টি শহর। এমনকি উদ্যোগটি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির প্রশংসাও পেয়েছে। প্রতিটি শহরে স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবকদের দ্বারা স্বাধীনভাবে গণ পুস্তক পাঠ পরিচালিত হয়।
ভাইজাগ রিডস-এর আয়োজনে ভিএমআরডিএ সেন্ট্রাল পার্কে প্রতি রবিবার সকাল ন’টা থেকে এগারোটা পর্যন্ত সাপ্তাহিক গণপাঠের আসর বসে থাকে। বিশাখাপত্তনমে কয়েকটি বইয়ের ক্লাব রয়েছে যেখানে অংশগ্রহণকারীরা পূর্ব-নির্ধারিত শিরোনাম এবং লেখকদের বই পড়ে এবং আলোচনা করে। কিন্তু ভাইজাগ রিডস-এ পাঠক তাঁর পছন্দের যে কোনও বই, সাময়িক পত্রিকা, এমনকি একটি সংবাদপত্র বা গবেষণাপত্রও আনতে পারেন। যে কোনও ভাষার অডিও বুকও আসরে স্বাগত। কারও সঙ্গে দেখা করা বা শুভেচ্ছা জানানোর কোনও বাধ্যবাধকতা নেই। কেউ শুধু পার্কে হাঁটতে পারেন, কোনও জাগায় বসতে পারেন, বই পড়তে পারেন। অধিবেশনের পরে, কিছু অংশগ্রহণকারী তাঁদের বইটি নিয়ে একটি গ্রুপ ছবির জন্য একত্রিত হন।
শিরিন মেহের চার বছর ধরে বেঙ্গালুরুতে ছিলেন। সেখানে তিনি একটি সমৃদ্ধ বই পড়ার সংস্কৃতি খুঁজে পান। এক সংবাদ সংস্থাকে তিনি বলেন, “আমি ইনস্টাগ্রামে কাবন রিডের একটি ভাইরাল রিল দেখেছিলাম। সেটা দেখে আমি অবাক হয়ে গিয়েছিলাম যে কিভাবে তারা নীরবতার সৌন্দর্য রক্ষা করে বইপ্রেমী মানুষকে একত্রিত করেছে। রিডার কমিউনিটির অংশ হওয়ার জন্য কোনও সীমাবদ্ধতা বা শর্ত নেই। আপনকে শুধু একটি বই সঙ্গে আনতে হবে। সমাজের সর্বস্তরের মানুষকে এর অংশ হিসেবে গড়ে তোলার জন্য একটি সম্প্রদায়কে এতটাই সরল হতে হবে।”
শিরিন জানান, এই ব্যাপারে কিউবন রিডসের প্রতিষ্ঠাতা হর্ষ স্নেহাংশু এবং শ্রুতি শাহ তাঁকে এই কাজে উত্সাহিত করেছিলেন। তাঁদের প্রত্যক্ষ সহযোগিতা এবং মেঘনার সঙ্গে একত্রিত হয়ে ভাইজাগ রিডস ১৮ জুন উদ্বোধনী অধিবেশনের আয়োজন করেছিল। উদ্বোধনী বৈঠকে তিন বছরের কম বয়সী অংশগ্রহণকারীরাও ছিল তাদের বাবা-মায়ের সঙ্গে। কলকাতায় কেন এমন একটি উদ্যোগ নিয়ে কেউ এগিয়ে আসবেন না!
বইতন্ত্র ডেস্ক
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন