অনুগল্প : নায়িকা সংবাদ : দেবজিৎ ঘোষ

জীবিত অবস্থায় অপরূপ সুন্দরী, তন্বী এই নায়িকার শরীর আজ ফ্যাকাসে, ঠোঁট বিবর্ণ, বাঁ-চোখ আধবোজা, মুখের পাশে গ্যাঁজলার দাগ।
অনুগল্প : নায়িকা সংবাদ : দেবজিৎ ঘোষ
AI Generated

মুম্বই-এর জে জে হসপিটালের বাইরে মিডিয়া, সাধারণ মানুষ , পুলিসের ভিড়। হাসপাতালের পোস্টমর্টেম রুমে কাটাছেঁড়া চলছে। ড. ভেঙ্কটেশ রাও-এর সামনে টেবিলে শোয়ানো ইণ্ডাস্ট্রির বিখ্যাত নায়িকা ইশা পারেখের নগ্ন,নিথর দেহ।
মুম্বই শহরের অফিস-কাছারি তখন সদ্য কর্মব্যস্ত হতে শুরু করেছে , ঠিক তখনই খবরের চ্যানেলগুলোতে ব্রেকিং নিউজ– অভিনেত্রী ইশা পারেখের অচেতন দেহ উদ্ধার বন্ধ ফ্ল্যাট থেকে। হাসপাতালে নিয়ে এনে পরীক্ষা করলে বোঝা যায় ব্রট-ডেড কেস , দেহে রাইগর মর্টিস শুরু হয়ে গিয়েছে। ডেডবডি তৎক্ষণাৎ পৌঁছে যায় মর্গে আর খবরটা পৌঁছে যায় মিডিয়া হাউসগুলোর কাছে।
জীবিত অবস্থায় অপরূপ সুন্দরী, তন্বী এই নায়িকার শরীর আজ ফ্যাকাসে, ঠোঁট বিবর্ণ, বাঁ-চোখ আধবোজা, মুখের পাশে গ্যাঁজলার দাগ। কোনরকম বিষক্রিয়াতেই যে মৃত্যু ঘটেছে বহু পুরুষের বুকে ঝড় তোলা মিস পারেখের তা নিঃসন্দেহে বলাই যায়। এটা খুন নাকি আত্মহত্যা , খুন হলে কে খুন করল , কেনই বা খুন করল এইসব অনুসন্ধানের দায়িত্ব ড. রাও-এর।
সত্যি বলতে নিজের এক সুন্দরী স্ত্রী থাকলেও বারেবারে এই নায়িকার প্রেমে পড়েছেন ড. রাও। লাস্যময়ী নায়িকার অমোঘ আকর্ষণ এড়ানো সহজ ছিল না মোটেও। নিয়তির কী নির্মম পরিহাস ! সেই শরীরই আজ নগ্ন, নিষ্প্রাণ, শীতল হয়ে পড়ে আছে পোস্টমর্টেম টেবিলে।
দক্ষ হাতে ছুরি চলতে লাগল ইশা রাও-এর শরীরে। এক টানে ড. রাও ঐ শরীরটাকে গলার নীচে থেকে নাভি পর্যন্ত কেটে দু'ফাঁক করে ফেললেন। মেদ ও মাংসের এক একটা স্তর সরিয়ে তিনি সংগ্রহ করছেন বিভিন্ন নমুনা , ডাক্তারি পরিভাষায় যাকে ভিসেরা স্যাম্পেল বলে। ড. রাও ঠিকই আন্দাজ করেছিলেন --- মৃত্যু বিষক্রিয়াতেই। পাকস্থলীতে একটু খাদ্যমণ্ড , তরল ও বিষের উপস্থিতি দেখা গিয়েছে। মৃত্যু ঘটেছে আন্দাজ রাত একটা থেকে ভোর চারটের মধ্যে।
ইশা মারা গেলেন কেন ? তাঁকে কেউ খুন করল ? নাকি তিনি আত্মহত্যা করলেন ? রূপ-যৌবন যেমন ছিল , তেমনিই অর্থ, ফ্যানডম এইসবের প্রাচুর্য্য-ও ছিল ... অভাব কোনকিছুর ছিল বলে তো মনে হয়না। ইশা নিজেই একবার স্বীকার করেছিলেন তিনি বরাবরই উচ্চাকাঙ্খী। উচ্চাকাঙ্খী হওয়া দোষের নয় কিন্তু অনিয়ন্ত্রিত জীবনযাপন করা বিপজ্জনক। লেট নাইট পার্টি , ফাস্ট ফুড যেমন তাঁর শরীরকে ব্যাঘাত করেছিল তেমনিই একটার পর একটা ব্রেকাপ, ইন্ডাস্ট্রির চাপ এইসব ভিতরে ভিতরে ফোঁপড়া করে দিয়েছিল ইশাকে। ফেসবুক , ইনস্টাগ্রামে যতই নিজেকে হ্যাপি , সর্টেড দেখানোর চেষ্টা করুন না কেন , বাস্তব জীবনে জট পাকিয়ে গিয়েছিল ইশার জীবনটা।
ADVERTISEMENT

হাঁ হয়ে থাকা ধড়টাকে সেলাই করে পোস্টমর্টেম রিপোর্ট জমা দিতে পারলে বাঁচেন ড. রাও। এইসব হাইপ্রোফাইল কেসে এমনিতেই চাপ থাকে । ভিক্টিমের শরীরে মৃত ভ্রূণের উপস্থিতি মিলেছে । মা হতে চলেছিলেন অভিনেত্রী ইশা পারেখ।

লেখক পরিচিতি :
দেবজিৎ ঘোষ । জন্ম হুগলির উত্তরপাড়ায়। বেড়ে ওঠা উত্তরপাড়া ও কলকাতাতে। উত্তরপাড়া রাষ্ট্রীয় উচ্চ বিদ্যালয়ে আড়াই বছর পড়াশুনা করার পর বদলি নিয়ে ভর্তি হন হিন্দু স্কুলে । সেখান থেকেই সসম্মানে মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা পাস করেন। এরপর সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়ে পড়াশুনা করেন। পরবর্তীকালে ডেটা সায়েন্স ও মেশিন লার্নিং নিয়েও চর্চা করেছেন। কর্মসূত্রে কলকাতার পূর্ব পুটিয়ারী-তে থাকেন। পেশাগত ভাবে প্রযুক্তিবিদ হলেও নেশা গত ভাবে লেখক। 

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন