HORROR STORY : বিনোদ ডাক্তার : সুমন সেনাপতি

ভূতের গল্প কথাটা শুনে যেন চমকে উঠলো বিনোদ ডাক্তার। হ্যাঁ চিকিৎসা করেছিল বটে কিন্তু নগেনের যা অবস্থা ছিল তাতে তো খুব বেশিদিন বাঁচার কথা ছিল না তার।

HORROR STORY : বিনোদ ডাক্তার : সুমন সেনাপতি

এ ঘটনা যখনের তখন ও গ্রামের দিকে আধুনিকতার ছোঁয়া পৌঁছয়নি। সাপে কামড়ালে ওঝা আর ভূতে ধরলে লোকে তান্ত্রিক, ঝাড়ফুঁকে বিশ্বাস করতো।হরিনারায়নপুর ছিল এমন একটা গ্রাম। তবে গ্রামে তখন সদ্য একটা ডাক্তার এসেছে , নাম বিনোদ বিহারী চৌধুরী। বিনোদ ডাক্তার চিকিৎসা করতো ভালো। ওষুধে কাজও দিত। তবে সেই অনুপাতে তার আয় হতো খুব কম। গ্রামের চাষা ভুসো লোকেদের কাছে ডাক্তারকে পয়সা দেওয়ার মতো অর্থ থাকতো না। কিন্তু বিনোদ ডাক্তার তো আর চিকিৎসা ছেড়ে দিতে পারেন না, তার বিবেকে বাধে। অগত্যা আর কী, চিকিৎসা চালিয়ে যেতে হলো।

তবে অভাবের তাড়নায় বিনোদ ডাক্তার ওষুধে একটু করে ভেজাল মেশাতে লাগলো। ইনজেকশান এর ওষুধ গুলোতে মেশাতে লাগলো বিশুদ্ধ জল। ফলে যেই রুগীর রোগ দু দিনে সেরে যেত সেই রোগ সারতে সারতে লেগে যেত এক সপ্তাহ। এভাবে মাস যায় বছর যায় লোকেরা দেরি করে সুস্থ হলেও বিনোদ ডাক্তার ছাড়া অন্য কোনও উপায়ও নেই তাদের কাছে। তাই এভাবেই চলতে লাগল।
বেশ কিছু বছর পরের ঘটনা। একদিন বৃষ্টির রাতে বিনোদ ডাক্তারের কাছে একজন লোক এসে বলল, ডাক্তার বাবু আছেন না কি ?
- হ্যাঁ আছি এসো, কে?
- ডাক্তার বাবু আমি ও পড়ার নগেন দলুই। সেই যাকে আপনি আগের মাসে ওষুধ আর ইনজেকশান দিয়েছিলেন ।
- নগেন দোলুই ! কথাটা শুনে যেন চমকে উঠলো বিনোদ ডাক্তার। হ্যাঁ চিকিৎসা করেছিল বটে কিন্তু নগেনের যা অবস্থা ছিল তাতে তো খুব বেশিদিন বাঁচার কথা ছিল না তার। তারপরও ও এখন এই রাতে এসেছে! যাই হোক এসব কথা ভাবতে ভাবতেই বিনোদ ডাক্তার বলল, তা কী হলো তোমার? এত রাতে? শরীর ঠিক আছে তো?
- শরীর ঠিক আছে বলেই ত আসতে পারলুম ডাক্তারবাবু, তবে ডাক্তারবাবু একটা কথা খুব জানতে ইচ্ছে করছিল তাই এই সময় এলাম।
- কি কথা নগেন ?
- ডাক্তার বাবু আপনি যে ইনজেকশানটা দিয়েছিলেন সেটাতে এত জল মিশিয়ে দিয়েছিলেন কেনো? একটু ওষুধ থাকলে তো আমি আর কটা দিন বেঁচে যেতাম।
বিনোদ ডাক্তার হকচকিয়ে বললো, কী বলতে চাস তুই? আমি জাল ওষুধ দিই? তোর এত বড় সাহস, দাড়া দেখাচ্ছি মজা।
এই বলে যেই না সে নগেনকে ধরতে গেল অমনি নগেন যেন হওয়া হয়ে উড়ে গিয়ে নাকি গলায় বলতে লাগলো, ধঁরতে পাঁরবেন না ডাক্তারবাবু আঁজ বিকেলেই যে আমার আত্মারাম খাঁচাছাড়া হয়েছে ।
বিনোদ ডাক্তার তখন দরদর করে ঘামতে লাগল। ধপাস করে বসে পড়ল চেয়ারে। একটু পরে দুর থেকে কারা যেন হরিধ্বনি করতে করতে আসছে– বল হরি হরি বল; বল হরি হরি বল। 
বিনোদ ডাক্তার ততক্ষনে একটু শান্ত হয়েছে। মুখ বের করে দেখল একদল লোক একটা মড়া নিয়ে এদিকেই আসছে। তখন সে মুখ বাড়িয়ে জিজ্ঞেস করলো, কে মরেছে গো ?
শব বাহক রা একটু গতি শ্লথ করল। শ্মশানযাত্রীদের মধ্যে একজন বলল, ও পাড়ার নগেন দলুই মরেছে ডাক্তারবাবু , সেই যাকে আপনি আগের হপ্তায় ওষুধ দিয়ে এসেছিলেন ।
বিনোদ ডাক্তার আবার যেন ঠকঠক করে কাঁপতে লাগল। মড়ার দিকে তাকিয়ে দেখলো নগেন দলুই যেনো তার দিকে তাকিয়ে কুটিল হাসি হাসছে। এখনও।

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন