HORROR STORY : পুরানো মর্গটার কাছে : শাশ্বত বোস

ভূতের গল্প এসআই হাসপাতালের পুরোনো মর্গ। গেটটা সব সময় বন্ধই থাকে, কেউ বড় একটা যায় না ওইদিকে। 


জায়গাটার চারপাশে বেশ ভিড় জমে গেছে। ভরসন্ধ্যেবেলা বড় রাস্তার মোড়ের বাঁকের আশপাশের দোকানগুলোতে যারা ছিল সবাই দৌড়ে এসেছে। এই নিয়ে একমাসে তিনবার। আবার সেই শনিবার, নাহ এই বারবেলাটাও নিশ্চিন্তে কাটল না। \
পাশের কালীমন্দিরে তখন পুজো চলছিল। ধূপ-ধুনোর গন্ধ, কাঁসর ঘন্টার আওয়াজ, সব কিছু ছাপিয়ে এলাকাটাকে প্রায় কাঁপিয়ে দিল প্রচণ্ড দানবিক শব্দটা। সেই সঙ্গে বুকফাটা আর্তনাদ। কালের নিষ্ঠুর পরিহাসে অকাল মরণেও বাঁচতে চাওয়ার অভিলাষে তীব্র চিৎকার। বাসটা পালিয়েছিল তরতাজা দুটো শরীর বড় রাস্তার বাঁকে পিষে ফেলে। রাস্তাটা ভেসে যাচ্ছিল তাজা রক্তে।
মাথাটা থেতলে গেছে ছেলেটার। চাপ চাপ রক্তের সঙ্গে ঘিলু ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়েছিল চারপাশে। পাড়ার কুকুরগুলো স্থান-কাল ভুলে ছুটে এসেছিল, তাজা রক্ত আর টুকরো মাংসের লোভে, নিজেদের ইতর সত্তার নির্মোঘ প্রশ্রয়ে। বাইকটার পার্টস গুলো টুকরো টুকরো হয়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে ছিল বড় রাস্তায়।
“চিমা”র তবু জ্ঞান ছিল। হাত-পা গুলো ভেঙে টুকরো টুকরো হয়ে ঝুলছিল। শেষ সময়ে একবার নিজের বাবাকে দেখতে চাইছিল। বাবার সঙ্গে তেমন বনিবনা ছিল না। তবু ভুবনকাকুকে, এই অ্যাকসিডেন্টের পর ওই জায়গাটায় গিয়ে রাতে আমি কাঁদতে দেখেছি পরপর চার দিন।হৃদয় তোলপাড় করা সে কান্না। সঙ্গে রাস্তার কুকুরগুলোর সমবেত কলতান, যেন মূর্তিমান অশনি নির্ঘোষ। বড় রাস্তার ওই বাঁকের কাছেই স্টেট এসআই হাসপাতালের পুরোনো মর্গ। গেটটা সব সময় বন্ধই থাকে, কেউ বড় একটা যায় না ওইদিকে। বড়ঠাকুরের মন্দিরের পুরোহিত ঠাকুর নিদান দিয়েছেন, ওই মর্গটাই টেনে নিচ্ছে এলাকার মানুষজনকে। হঠাৎ করেই টেনে নেবার ধুমটা যেন বেড়েছে। পরপর তিনটে শনিবার হল এই নিয়ে।
গত পরশু অনেক রাতে আমি ওই মর্গটার সামনে “চিমা”কে বসে কাঁদতে দেখেছি। মুখে তখনও চাপ করা রক্ত জমাট বেঁধে আছে। অন্ধকারে হাতের ব্যান্ডটা কিন্তু ঠিক চেনা যাচ্ছে। এটা ও সেই সন্ধ্যেবেলায় পরেছিল। গায়ে সেই চেকশার্ট আর নীল ডেনিম জিন্স। আমাকে দেখে মুখ তুলে চাইল। দুটো চোখের শূন্য দৃষ্টিতে না বলা কথারা ভিড় করে আছে শুধু।
কত কী করার ছিল ওর! মাঠে নেমে রাইট উইং থেকে বল নিয়ে যখন ফিনিক্স পাখির মতো উড়ত, তখন এলাকার লোকজন বলত হুগলী জেলার “চিমা”। আমরাও তো ওকে ওই নামেই ডাকতাম সবাই পাড়ায়।
কাছে এগিয়ে গিয়ে কাঁধে হাত রাখলাম ওর। হঠাৎ খেয়াল হতে সেই হাতটা নিজের মুখের কাছে নিয়ে যেতে চমকে উঠলাম। আমার মাথা থেকেও চিটে গুড়ের মতো রক্ত চুইয়ে পড়ছে। আসলে সেই সন্ধ্যেতে চিমার বাইকের পিছনে যে আমি ছিলাম!

Saswata Bose

লেখক : শাশ্বত বোস
পেশা : সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার
শ্রীরামপুর, হুগলী

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন