Twelfth Fail : পাঁচ বছর আগেই হইচই ফেলেছিল যে বই

সিনেমার সাথে অনুরাগ পাঠকের বইয়ের কাহিনির শতভাগ মিল নেই। পরিচালক যথেষ্ট স্বাধীনতা গ্রহণ করেছেন। তাই বই এবং সিনেমা দুটোকে এক ভাবা যাবে না। 

Twelfth Fail : পাঁচ বছর আগেই হইচই ফেলেছিল যে বই
হিন্দিতে প্রকাশিত বইয়ের প্রচ্ছদ ও লেখক অনুরাগ পাঠক

দেবলীনা কর্মকার
কোনও কোনও সময় বামন হয়ে চাঁদে হাত বাড়ালে, হয়তো চাঁদ হাতে এসে ধরা দিলেও দিতে পারে! তার জন‌্য অবশ‌্যই প্রবল জেদ প্রয়োজন বামনের। লেখক অনুরাগ পাঠক আমাদের এমন একজন ব‌্যক্তির সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিয়েছিলেন, যাঁর জীবনের অন্যতম মন্ত্র ছিল, ‘জিততে গেলে লড়তে হবে। হারা ওহি জো লড়া নহি।’ তিনি আইপিএস মনোজ কুমার। দ্বাদশের পরীক্ষায় অকৃতকার্য, ছোট শহরের একটি ছেলে একেবারে অটোচালক থেকে উঠে এসেছেন পুলিশের শীর্ষপদে। নিজের বন্ধুর সাফল্যের এই চমকপ্রদ কাহিনী নিয়ে অনুরাগের লেখা হিন্দি উপন‌্যাস ‘টুয়েলভথ ফেল’ (Twelfth Fail) প্রথম প্রকাশ হয় ২০১৯-এর ১ জানুয়ারি। তবে ২০২৩-এর শেষে বিধু বিনোদ চোপড়ার ‘টুয়েলভথ ফেল’ ছবিটি মুক্তি পাওয়ার পর দেশ জুড়ে যেভাবে হইচই পড়ে গিয়েছে, সেটা কিন্তু সেই সময় হয়নি। পরে অবশ‌্য বইটির ইংরেজি অনুবাদও প্রকাশিত হয়েছে। তবে, সিনেমার সাথে বইয়ের কাহিনির শতভাগ মিল নেই। পরিচালক যথেষ্ট স্বাধীনতা গ্রহণ করেছেন। তাই বই এবং সিনেমা দুটোকে এক ভাবা যাবে না। এবং মনোজ কুমার এবং অংশু কোনও কাল্পনিক চরিত্র নয়।

মনোজের লড়াইটা শুরু হয়েছিল সেই দিন থেকে, যেদিন তাঁর জেলার সাব-ডিভিশনাল ম‌্যাজিস্ট্রেট (এসডিএম) দুষ্মন্ত সিং সমস্ত স্কুলে পরীক্ষায় টোকাটুকি বন্ধ করে দিলেন। যে প্রদেশে গাঁয়ে-গঞ্জে-মফঃস্বলে পরীক্ষায় গণটোকাটুকি দস্তুর, সেখানে দুষ্মন্তর এই কড়াকড়িতে অনেক ছাত্রই বিপদে পড়ে গেল। যেমন তাদের মধ্যে অন‌্যতম দ্বাদশের ছাত্র মনোজ। অতঃপর, অন‌্যদের সঙ্গে সেও পরীক্ষায় অকৃতকার্য হল। কিন্তু, এই ঘটনার মধ‌্য দিয়ে মনোজের মনে বেশ প্রভাব ফেললেন এসডিএম।

এরপরের ঘটনাটি অন‌্যরকম। পাড়ার একটি ক্রিকেট ম‌্যাচে প্রধান অতিথি হয়ে আসছেন দুষ্মন্ত‌ সিং। চারিদিকে সে বার্তা রটে গিয়েছে। মনোজের ইচ্ছা এই সুযোগে একবার সে দুষ্মন্তর সঙ্গে আলাপ জমাতে পারবে। কিন্তু হয়ে উঠল না। সেই টুর্নামেন্টে অংশ নেওয়ার আর্থিক সামর্থ মনোজের ছিল না।

তৃতীয়বার অবশ‌্য দেখাটা হল। মনোজের দাদা চালাতো টেম্পো। কোনও এক কারণে পুলিশ একবার সেই টেম্পো আটক করে। তাদের দুই ভাইকে একটা রাত কাটাতে হয় থানার লক-আপে। পরদিন সকালে হাজত থেকে ছাড়া পেয়েই মনোজ সিদ্ধান্ত নেয় সে এসডিএমের সঙ্গে দেখা করে পুরো বিষয়টা জানাবে। দেখা হলও দু্ষ্মন্তর সঙ্গে। কিন্তু আগের দিনের ঘটনা জানানোর পরিবর্তে তাঁকে প্রশ্ন করে বসলেন, এসডিএম হওয়ার জন‌্য তাঁকে কী করতে হবে? দুষ্মন্ত তখন তাঁকে জানান, এর জন‌্য ইউপিএসসি পরীক্ষায় বসতে হয়। বললেন ইউপিএসসি-র আদ‌্যপান্ত।

দুষ্মন্তর সেদিনের কথাগুলে মনোজের কাছে যেন মন্ত্রের মতো কাজ করেছিল। কীভাবে জানা নেই, তবু ওই পরীক্ষায় পাসের জন‌্য যা কিছু করতে হয় প্রস্তুত ছিল মনোজ। এই সময় পড়াশোনা নিয়ে অত‌্যন্ত সিরিয়াস হয়ে পড়ে মনোজ। জেলায় স্কুলের পরীক্ষায় টুকলি-সংস্কৃতি ফিরলেও নিজের মেধা-সামর্থে পরীক্ষা দেয় মনোজ। এরপর নিজের স্বপ্নপূরণে গোয়ালিয়রে এসে কলেজে ভর্তি হয়ে সে। শুরু হয় সংগ্রাম। কখনও চাক্কিতে কাজ, কখনও লাইব্রেরির পিয়নের কাজ। কখনও ফুটপাথবাসীদের পাশে শুয়ে রাত কাটানো।

এরমধ্যে দেখা হয় অংশুর সঙ্গে। ক্লাসে আলাপ। ক্রমে তাঁর সঙ্গে একটা প্রেমের সম্পর্কও গড়ে ওঠে। অনেক বন্ধুস্থানীয় বলেছিল, মনোজ এখনই প্রেমে পড়ো না। কেরিয়ারের ক্ষতি হবে। কিন্তু, কে কবে আর প্রেমকে অস্বীকার করতে পেরেছে। বরং, অংশু প্রেরণা হয়ে আসে মনোজের জীবনে।

অবশেষে, অনেক চ্যালেঞ্জ পার করে মনোজ কুমার তাঁর লক্ষ্যে পৌঁছন। আজ তিনি একজন সফল আইপিএস। আপনি যখন এই বইটি পড়বেন তখন সমস্ত ছবি পরিষ্কার হয়ে যাবে। এটি একটি অনুপ্রেরণামূলক গল্প। যে কেউ এটি পড়তে পারে। যারা সিভিল সার্ভিস সম্পর্কে সচেতন নন তারা অনেক অসুবিধার সম্মুখীন হতে পারেন, তাই যারা অনুপ্রাণিত হতে চান এবং বিশেষ করে যারা প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন তাদের এই বইটি পড়া উচিত। এই উইকএন্ডে ১৭০ পৃষ্ঠার পেপারব‌্যাক বইটি সহজেই শেষ করে ফেলা যাবে।

আমি অনেক সংগ্রাম এবং সরকারী কর্মচারীদের গল্প সম্পর্কে জানি। কিন্তু মনোজের গল্পটি অনন‌্য। আমি শিখেছি যে পরিস্থিতি আমাদের জীবনে স্থায়ী নয়, ধৈর্যের সঙ্গে সেগুলির মোকাবিলা করা উচিত এবং খারাপ সময়ে আমাদের স্বপ্ন দেখা ছেড়ে দেওয়া উচিত নয়। এটাও সত্য যে প্রেম পড়াশোনা বা কাজে বাধা নয় বরং এটি একটি শক্তি হিসাবে কাজ করে এবং আমাদের আরও ভাল এবং আরও ভাল করতে অনুপ্রাণিত করে।

অনুরাগ পাঠক ১৯৭৬ সালের ৫ আগস্ট গোয়ালিয়রে জন্মগ্রহণ করেন। অল্প বয়স থেকেই হিন্দি সাহিত্যের প্রতি তাঁর গভীর আগ্রহ ছিল। তিনি মহারানি লক্ষ্মীবাই আর্টস অ্যান্ড কমার্স কলেজ, গোয়ালিয়র থেকে হিন্দি সাহিত্যে 
এমএ এবং পিএইচডি করেন। আজকের আধুনিক বিশ্বে সোশ্যাল মিডিয়ার প্রভাবের উপর ভিত্তি করে তার প্রথম বইটি ছোটগল্পের একটি সংকলন। 'হোয়াটসঅ্যাপ পার ক্রান্তি' নামে, এটি ভারতে বিশেষ সমাদৃত হয়েছিল এবং বহু সমালোচকদের দ্বারা প্রশংসিত হয়েছিল। লেখালেখির ক্ষেত্রে তাঁর দ্বিতীয় উদ্যোগ, 'টুয়েলভথ ফেল'-এ লেখক আরও জীবনী শৈলীতে পরিণত হয়েছেন এবং ভারতের তরুণদের অনুপ্রাণিত করার আশা করছেন। পাঠক বলেছেন যে এই বইটি লেখার উদ্দেশ্য ছিল পরীক্ষায় ব্যর্থতার ভয় পাওয়া শিক্ষার্থীদের সাহায্য করা।

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন