প্রকাশিত পুস্তক হোক বা অপ্রকাশিত পাণ্ডুলিপি, এটি একটি মেধাসম্পত্তি। জায়গা-জমির যেমন আইনি দখল ও মালিকানা বজায় রাখতে হয়, তেমনি মেধা সম্পদেরও দখল ও মালিকানা থাকে।
শিপ্রা দে
যে কোনও সৃষ্টিশীল কাজের ক্ষেত্রে ‘কপিরাইট’ বা ‘স্বত্ত্ব’ বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তা কোনও লিখিত বিষয়বস্তু হোক বা অডিও, ভিডিও বা অডিও ভিস্যুয়াল, ফটোগ্রাফ কিংবা হাতে আঁকা ছবি। বিশেষ করে আজকের ডিজিটাল যুগে সৃষ্টিকর্তার স্বত্ত্বধিকারের বিষয়টি বড় চ্যালেঞ্জের মুখোমুখী হয়েছে। এখানে সবার সুবিধার্থে সরল ভাষায় স্বত্ত্বাধিকার নিয়ে কিছু আলোচনা করা হল। কোনও লেখকের লেখা গল্প-উপন্যাস তাঁর অনুমতি না নিয়েই পিডিএফ অডিও বুক বা ওই ধরনের ডিজিটাল সংস্করণ নেটদুনিয়া ছেড়ে দেওয়ার ঘটনা আজকাল হরহামেশাই হচ্ছে। এই নিয়ে বেশ কয়েকজন বড়মাপের লেখক গভীর উদ্বেগপ্রকাশ করেছেন। অন্যদিকে, প্রয়াত লেখকের গল্প-উপন্যাস তাঁর স্বত্বের উত্তরাধিকারীদের অনুমতি না নিয়ে বই হিসাবে ছেপে দেওয়া হচ্ছে, বা ডিজিটাল সংস্করণ নেটে আপলোড করা হচ্ছে। আসলে এ কারণে সৃষ্টিকর্তা ও তাঁর অবর্তমানে তাঁর উত্তরাধিকারীরা অর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হন। অথচ, কপিরাইট অ্যাক্ট, ১৯৫৭-তে সৃষ্টিকর্তার স্বত্ত্বাধিকার সুরক্ষিত করা হয়েছে।
প্রকাশিত পুস্তক হোক বা অপ্রকাশিত পাণ্ডুলিপি, এটি একটি মেধাসম্পত্তি। জায়গা-জমির যেমন আইনি দখল ও মালিকানা বজায় রাখতে হয়, তেমনি মেধা সম্পদেরও দখল ও মালিকানা থাকে।
প্রথমত, কপিরাইটের মালিক হচ্ছেন বইয়ের প্রণেতা বা লেখক। সাহিত্যের ক্ষেত্রে লেখকের জীবনকাল এবং মৃত্যুর পর থেকে ৬০ বছর পর্যন্ত কপিরাইট থাকে। এ ৬০ বছর লেখকের উত্তরাধিকারীরা ভোগ করেন। ৬০ বছর পর কপিরাইটের অধিকার সাধারণ জনগণ ভোগ করতে পারবে। ধরা যাক কোনও লেখক ২০০০ সালে প্রয়াত হয়েছেন। ২০৬১ সালের ১ জানুয়ারি থেকে তাঁর লেখার উপর কপিরাইট উঠে যাবে।
যে কোনও বইতে সাধারণত দ্বিতীয় পৃষ্ঠায় সেই বইয়ের স্বত্ত্বাধিকার ঘোষণা করা হয়– All rights reserved. No part of this publication may be reproduced, distributed, or transmitted in any form or by any means, including photocopying, recording, or other electronic or mechanical methods, without the prior written permission of the author. তবে শুধু লিখে দিলেই হল না, কপিরাইট সুরক্ষার জন্য লেখক বা প্রণেতার উচিত তাঁর বইটির কপিরাইট নিবন্ধন করে নেওয়া। কপিরাইট শুধু প্রকাশিত বইয়ের ক্ষেত্রেই করা যায় তা নয়, পাণ্ডুলিপিরও কপিরাইট নিবন্ধন করা যায়। ভারত সরকারের কপিরাইট অফিসের https://copyright.gov.in পোর্টালে গিয়ে সহজেই আপনার লেখা কাজ নিবন্ধিকরণ করতে পারেন। খরচ ৫০০ থেকে ৫০০০ টাকা।
কেউ যদি কোনও লেখকের বা প্রণেতার বই বা পাণ্ডুলিপি নকল করা হয়, তাহলে আইনের চোখে তা অপরাধ হিসাবে গণ্য হয়। এ জন্য দেওয়ানি (সিভিল) আদালতে সরাসরি প্রতিকার চাওয়া যায়। জেলা জজ আদালতে ক্ষতিপূরণ, নিষেধাজ্ঞাসহ অন্যান্য প্রতিকার চাওয়া যায়। তাছাড়া ফৌজদারি (ক্রিমিনাল) মামলারও সুযোগ রয়েছে। কপিরাইট আইন ভঙ্গকারী হিসেবে প্রমাণিত হলে সর্বোচ্চ চার বছরের জেল এবং সর্বোচ্চ দুই লাখ টাকা পর্যন্ত জরিমানা হতে পারে। গ্রেপ্তারি পরোয়ানা ছাড়াই নকল বই বাজেয়াপ্ত করার ক্ষমতা রয়েছে পুলিশের।
আরও জানতে ও বুঝতে অবশ্যই একজন আইনজীবীর সঙ্গে পরামর্শ করুন।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন