Ligal Issue : সোশ‌্যাল মিডিয়ায় বইয়ের সমালোচনায় রাশ থাকা উচিত?

কেরল হাই কোর্ট শুধু রিভিউ দেরিতে প্রকাশ করার কথাই বলেনি, সেইসঙ্গে কোনও চলচ্চিত্রকে খারাপ প্রমাণ করার বিষয়টি তদন্তেরও নির্দেশ দিয়েছে। বইয়ের ক্ষেত্রেও কেন সেই রায় প্রযোজ‌্য হবে না।

Ligal Issue : সোশ‌্যাল মিডিয়ায় বইয়ের সমালোচনায় রাশ থাকা উচিত?
প্রতিকী ছবি।

দ্বৈপায়ণ কর
গত বছর ১৩ অক্টোবর মুক্তি পায় মালয়ালম চিত্রপরিচালক পরিচালক উবাইনি ই.-এর ছবি ‘রাহেল মাকান কোরা’। এর প্রায় সঙ্গেসঙ্গেই সোশ‌্যাল মিডিয়ায় ছবিটি নিয়ে বেশকিছু নেতিবাচক সমালোচনা (Film Review) পোস্ট হয়। বাস্তবিকই, একটি নতুন ছবি বেশিরভাগ দর্শকদের কাছে পৌঁছনোর আগেই এই ধরনের সমালোচনা ভুল বার্তা দেয়। বাধ‌্য হয়ে ছবিটির পরিচালক কেরলের এর্নাকুলাম সেন্ট্রাল থানায় এফআইআর দায়ের করেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে পুলিশ সাতজন অনলাইন মুভি সমালোচককে গ্রেফতার করে। তাঁদের মধ্যে একটি সিনে প্রমোশন সংস্থার মালিক, দুই ইউটিউবার, তিন ইউটিউব চ‌্যানেলের পরিচালক রয়েছেন। শুধু তাই নয়, ইউটিউব ও ফেসবুককেও এই মামলায় ‘অভিযুক্ত’ করা হয়।

কীভাবে সম্ভব হল?
ওই অক্টোবরের শুরুতেই কেরল হাই কোর্ট অনলাইন ফিল্ম সমালোচক এবং ভ্লগারদের জন্য একটি স্পষ্ট এবং স্বচ্ছ গাইড লাইন তৈরির জন‌্য কেন্দ্রীয় তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রক এবং সেন্ট্রাল বোর্ড অফ ফিল্ম সার্টিফিকেশন (সিবিএফসি)-কে নোটিশ জারি করেছে। পাশাপাশি, ওই মামলায় কেরালা হাই কোর্ট এক নির্দেশ বলে যে সিনেমার রিলিজ করার সাত দিন পরেই রিভিউ প্রকাশ করা যাবে। আদালতের বক্তব‌্য, ফিল্ম রিভিউগুলো নতুন ছবি মুক্তির সাত দিন পরেই প্রকাশ করা উচিত কারণ অনেকসময়েই প্রাথমিক নেতিবাচক অনলাইন সমালোচনায় ছবি সেভাবে দর্শকদের কাছে পৌঁছায় না, তার প্রভাব পড়ে ব্যবসাতেও। প্রসঙ্গত, ‘অ্যারোমালিনতে আদ্যাথে প্রাণায়ম’-এর পরিচালক মুবিন রুফের আবেদনের প্রেক্ষিতেই ওই নির্দেশ দেয় আদালত। যে মামলায় সিনেমাকে ‘মেধাসত্ত্ব’ হিসাবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে। নতুন প্রকাশিত বইয়ের ক্ষেত্রেও সোশ‌্যাল মিডায়ায় সমালোচনার একটা সময়সীমা থাকা দরকার। এই ব‌্যাপারে লেখক-প্রকাশক সংগঠগুলি সক্রিয় ভূমিকা নিতে পারে।

কেরল হাই কোর্টের রায় প্রকাশিত কোনও বইয়ের ক্ষেত্রেও প্রযোজ‌্য হওয়া উচিত। ইদানিংকালে, কোনও বই প্রকাশ হওয়া মাত্রই সোশ‌্যাল মিডিয়ায় তা নিয়ে ‘সমালোচনা’ শুরু হয়ে যায়। বস্তুত, অনেক ক্ষেত্রেই ‘পুস্তক সমালোচনা’র নামে বইটির নেতিবাচক পর্যবেক্ষণ দেওয়া হয়ে থাকে। এর ফলে, যে সময়ের মধ্যে নতুন বইটি রাজ্যের সর্বত্র পৌঁছতে পারেনি, তার আগেই দ্রুতগতিতে বইটি সম্পর্কে একটি খারাপ ধারাণা ‘বাজারে’ ছড়িয়ে পড়ে। পাঠক বইটির সন্ধান করার আগেই, পুস্তক পরিবেশক-বিক্রেতার আর সেই বই নিয়ে কাজ করার ঝুঁকি নেন না।

কেরল হাই কোর্ট শুধু রিভিউ দেরিতে প্রকাশ করার কথাই বলেনি, সেইসঙ্গে কোনও চলচ্চিত্রকে খারাপ প্রমাণ করার বিষয়টি তদন্তেরও নির্দেশ দিয়েছে। ছবিকে মেধাস্বত্ব হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে, যার সঙ্গে অসংখ্য মানুষের পরিশ্রম ও লাভ-ক্ষতি জড়িত থাকে।

একটি বই প্রকাশের ক্ষেত্রেও কিন্তু এই কথাগুলি প্রযোজ‌্য। প্রকাশনা একটি ‘ইন্ডাস্ট্রি’। এর সঙ্গে হাজার-হাজার মানুষের রুটি-রুজি যুক্ত। একটি বই একজন লেখকের মেধাস্বত্ত্ব শুধু নয়, কালি-কাগজ, ছাপা, বাঁধাই, পরিবেশন, বিক্রি– সম্মিলিত শ্রম রয়েছে একটি বইয়ের পাঠকের হাতে পৌঁছনো পর্যন্ত। এটা লেখক-প্রকাশক-পাঠক-সমালোচক সবার মনে রাখা প্রয়োজন। মতপ্রকাশের স্বাধীনতার মর্যাদা দিয়েও, এটা বলতেই হয় যা তাকে অজুহাত হিসাবে খাঁড়া করে সেই শ্রমের অমর্যাদা করা উচিত নয়।

কেরল হাই কোর্টের মামলাটিতে আবেদনকারীদের বক্তব‌্য ছিল, কোনও সিনেমা মুক্তি পাওয়ার পরেই নেতিবাচক পর্যালোচনা সেই সিনেমাটির জন্য ক্ষতিকর। যার প্রভাব সুদূরপ্রসারী। ছবিটি মুক্তির দিনে এই ধরনের সমালোচনার ফলে অনেক সময়ই মানুষ সিনেমাটি দেখার উৎসাহ হারিয়ে ফেলে। আবেদনকারী প্রশ্ন তোলেন যে ইতিবাচক রিভিউয়ের বিনিময়ে অনলাইন ব্লগাররা অনেকক্ষেত্রেই অর্থ দাবি করে থাকেন। এর ফলে চলচ্চিত্র শিল্পের মধ্যে শোষণের পরিবেশ তৈরি হচ্ছে যে প্রবণতা খুবই খারাপ।

একই কথা খাটে বই প্রকাশনার ক্ষেত্রেও। একটি বই প্রকাশমাত্রই বিরোধী শিবিরের প্রকাশকরা সেই বইটির প্রচার ও বিক্রি আটকাতে আদাজল খেয়ে নেমে পড়ে। বইটির বিষয়বস্তুকেই শুধু খাটো করা হয় না, বইটির গেটআপ, বাঁধাই, কাগজের গুনমান– সবকিছুই খারাপ হিসাবে দেখিয়ে যে ভাবে সোশ‌্যাল মিডিয়ায় প্রচারে নামা হয়, তাতে সাহিত‌্য মহলের ঘরোয়া দ্বন্দ্ব, ইর্ষা, হীনমণ‌্যতা প্রকাশ হয়ে পড়ে। এতে সংশ্লিষ্ট লেখক-প্রকাশকেরই শুধু ক্ষতি হচ্ছে না, বরং পুরো প্রকাশনা ইন্ডাস্ট্রিরই ক্ষতি হচ্ছে।

লেখক-প্রকাশকদের পাশে থাকুন। বইবাজার বাড়াতে সহযোগিতা করুন।

মতামত লেখকের নিজস্ব। তার সঙ্গে ‘বইতন্ত্র’-এর দৃষ্টিভঙ্গি এক না-ও হতে পারে।

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন