The Last Days of August : নীল নায়িকার মৃত্যু ঘিরে প্রশ্ন

অ‌্যামাজনের অডিও বুক প্ল‌্যাটফর্ম ‘অডিবেল’-এ প্রখ‌্যাত সাংবাদিক জন রনসনের ‘দ‌্য বাটারফ্লাই এফেক্ট’-এ ‘দ‌্য লাস্ট ডেজ অফ অগাস্ট’ (The Last Days of August) স্ট্রিমিং হয়। সাক্ষাৎকার, গবেষণা ও তদন্তমূলক সিরিজটি পর্ন তারকা অগাস্ট আমেসের মৃত্যু ঘিরেই। যার পরতে পরতে খুলে গিয়েছে পর্ণ দুনিয়ার অন্দরমহলের শোষণ, কান্না।

The Last Days of August : নীল নায়িকার মৃত্যু ঘিরে প্রশ্ন
Symbolic Image. Source- Ms.
দ্বৈপায়ন কর
কাগনি লিন কার্টার, জেসি জেন ও তাঁর প্রেমিক ব্রেট হাসেনমুলার এবং সোফিয়া লিয়নে। তিনমাসের মধ্যে চারটি 
মৃত্যু। সবগুলিই অস্বাভাবিক। চারটি মৃত্যুর মধ্যে আরও একটি যোগসূত্র রয়েছে, তাঁরা সকলেই অ‌্যাডাল্ট ফিল্মের তারকা। আমাদের দেশে ‘অ‌্যাডাল্ট ফিল্ম’ বা ‘এ’ মার্কা ছবি বলতে যা বুঝি, আমেরিকায় সেটা ‘এক্স’ রেটেড ছবি, এবং আমাদের ভাষায় নীল ছবি বা পর্ন।

গত ১ মার্চ ২৬ বছর বয়সী সোফিয়া লিওনকে তাঁর অ্যাপার্টমেন্টে পাওয়া যায় মৃত অবস্থায়। পুলিশ একটি অস্বাভাবিক 
মৃত্যুর মামলা রুজু করে তদন্ত শুরু করেছে। প্রাথমিক অনুমান, সোফিয়া আত্মহত‌্যা করেছেন। প্রসঙ্গত, গত ফেব্রুয়ারিতে আত্মহত্যা করেন অ্যাডাল্ট ফিল্ম তারকা কাগনি লিন কার্টার। ওহাইওতে নিজ বাসভবনে তাঁর দেহ মেলে। তার আগে জানুয়ারিতে ওকলাহোমায় জেসি জেন ও তাঁর প্রেমিক ব্রেট হাসেনমুলারের মৃতদেহ উদ্ধার হয়। মনে করা হয় ড্রাগ ওভারডোজে তাঁদের মৃত্যু হয়েছে।

২০১৮ সালে একইভাবে আমেরিকায় একের পর এক পর্নস্টারের অস্বাভাবিক 
মৃত্যুর খবর সামনে আসে। তিনমাসের কম সময়ে পাঁচ তারকা–অলিভিয়া লুয়া, অলিভিয়া নোভা, অগাস্ট আমেস, টুরি লাভ এবং শিলা স্টাইলেজের মৃত্যু হয়। কোনওটিই স্বাভাবিক ছিল না।
পঁাচ যুবতী। এদের মৃতু্য হয়েছে তিনমাসেরও কম সময়ে। কোনও কোনওটা আবার অস্বাভাবিক মৃতু্য। এদের মধ্যে একটি বিষয়ে বিশেষ মিল আছে। তা হল এরা সবাই পর্নস্টার। সেবারও এত কম সময়ের মধ্যে আচমকা ‘এক্স রেটেড’ ছবির অভিনেত্রীরদের মৃতু্যতে হতবাক হয়ে গিয়েছিল আমেরিকার পর্ন ইন্ডাস্ট্রি।

লুয়া আর নোভার ম্যানেজার ডেরেক হে’র মতে ‘সমাপতন’। যদিও ইন্ডাস্ট্রির সঙ্গে যুক্ত অনেকেই মনে কর, হতাশা এবং তার সঙ্গে মাদকের অত্যধিক ব্যবহারই এই তারকাদের অকালমৃতু্যর কারণ। তাঁদের মতে, এই প্রবণতা আটকাতে পর্ন স্টারদের একটা পেশাগত রক্ষাকবচের প্রয়োজন আছে। এই হতাশার মধ্যে রয়েছে পেশাগত চাপ এবং সোশাল মিডিয়ায় ক্রমাগত ট্রোল থেকে আক্রমণ এবং কাস্টিং কাউচ।

২০১৮-র ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি চলতি সপ্তাহের মাঝামাঝি ক্যালিফোর্নিয়ার একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায় ২৩ বছর বয়সি লুয়া। তার আগে ওই বছরই ৭ জানুয়ারি লাস ভেগাসে নিজের বাড়িতেই বছর কুড়ির নোভার প্রাণহীন দেহ উদ্ধার হয়। ডিসেম্বরে গলায় দড়ি দিয়ে আত্মহত্যা করেন ২৩ বছরের আমেস।

আমেসের 
মৃত্যুটি নিয়ে কিন্তু পর্ন ইন্ডাস্ট্রিতে খুব আলোচনা চলেছিল। আসলে তাঁর স্বামী কেভিন মুর বিষয়টিতে প্রবলভাবে সরব হয়েছিলেন। তাঁর কথায়, আমেস একসময় তো নেট দুনিয়া সম্পর্কে আতঙ্কিত হয়ে পড়েছিলেন, সেই সঙ্গে তাঁর উপর ‘হোমোফোবিক’ লেবেল সেঁটে দেওয়া হয়েছিল। এর কারণ হল, সমকামী পুরুষদের সঙ্গে ছবিতে কাজ করতে চাইতেন না আমেস। কেভিন সোশ‌্যাল মিডিয়ায় আমেসের প্রতি কুমন্তব্যগুলির স্ক্রিনশট পোস্টও করেন। আর স্ত্রীর অকালমৃত্যুর জন্য সেগুলিকেই দায়ী করে বলেন, “আপনাদের হাতে আমেসের রক্ত লেগে আছে।”

তদন্তে জানা যায়, অত্যধিক মাদক সেবনের কারণেই ৩১ বছর বয়সি পর্নস্টার টুরি লাভের মৃতু্য হয়েছে। ৩৫ বছর বয়সি স্টাইলেজ সম্প্রতি পর্নছবি থেকে অবসর নেন। ’১৭-র নভেম্বের তাঁকে তাঁর নিজের ফ্ল্যাটে মৃত অবস্থায় পাওয়া গিয়েছিল।

‘দ্য মিরর’ পত্রিকাখবর করেছিল, পর্নস্টার জিনজার ব্যাঙ্কস এরপর তাঁদের অধিকার নিয়ে সরব হন। তিনি পর্ন ছবির অভিনেতা-অভিনেত্রীদের মানসিক স্বাস্থ্যের বিষয়টি বুঝতে চেষ্টা করার জন্য সমালোচকদের কাছে আবেদন জানিয়েছেন। তিনি বলেন, সমাজের দৃষ্টিভঙ্গি এবং ‘অশ্লীল’ আচরণ আমাদের আরও হতাশ করে তোলে। আমরা মনে করি না যে আমরা স্বাধীন নয় বা আমরা দ্বিতীয় শ্রেণির নাগরিক।

আসলে আমেরিকায় পর্ন নিষিদ্ধ নয়। সে ছবিকেও সেন্সর বোর্ডের বেড়া ডিঙোতে হয়। ‘এক্স’ রেটেড সার্টিফিকেট পাওয়ার পরই সেই ‘অ্যাডাল্ট মুভি’ মুক্তি পায়। পর্ন ছবি তৈরির জন্য বেশ কিছু বিধি রয়েছে সে দেশে। যেমন, অভিনেত্রীকে একেবারে বিবস্ত্র করা যাবে না। কন্ডোমের ব্যবহার দেখানো জরুরি। এতদিন পর্যন্ত আমেরিকার সমাজে পর্ন স্টাররা অচ্ছুৎ ছিলেন না। যদিও তাঁরা কখনও হলিউডের মেইন স্ট্রিমের অভিনেতা-অভিনেত্রীদের মতো মর্যাদা পেতেন না, তবু অনেকেরই জনপ্রিয়তা রয়েছে। কিন্তু ইদানীং পরিস্থিতির পরিবর্তন হয়েছে। ইন্ডাস্ট্রিতে শোষণ ছিলই। এবার সেই প্রিয় দর্শকরাই যখন সমালোচনায় বিদ্ধ করেন, তখন কী উপায়?

২০১৯-এর জানুয়ারির শুরুতে অ‌্যামাজনের অডিও বুক প্ল‌্যাটফর্ম ‘অডিবেল’-এ প্রখ‌্যাত সাংবাদিক জন রনসনের ‘দ‌্য বাটারফ্লাই এফেক্ট’-এ ‘দ‌্য লাস্ট ডেজ অফ অগাস্ট’ (The Last Days of August) স্ট্রিমিং হয়। সাক্ষাৎকার, গবেষণা ও তদন্তমূলক সিরিজটি এই অগাস্ট আমেসের 
মৃত্যু ঘিরেই। যার পরতে পরতে খুলে গিয়েছে পর্ণ দুনিয়ার অন্দরমহলের শোষণ, কান্না।

খব সুচারুভাবেই রনসন সেখানে দেখিয়েছেন অ‌্যাডাল্ট বিনোদন ব্যবসা, যা একটি শিল্পের সহানুভূতিশীল চিত্র উপস্থাপন করে বটে কিন্তু তাকে বোঝার ক্ষমতা খুব মানুষেরই রয়েছে। উল্কারগতি প্রযুক্তির অগ্রগতি, পর্নোগ্রাফির সহজলভ্যতা এবং এর কেন্দ্রস্থলে থাকা মানুষগুলোর মধ্যে যে মোটা দাগের সীমারেখাটি প্রকট সেটিই দেখিয়েছেন রনসন। রনসন আরও দেখিয়েছেন, বিশেষ করে, সোশ‌্যাল মিডিয়া যে কখনও কখনও একজন মানুষের জীবনে বিপর্যয়কর প্রভাব ফেলে, সেটি আমেসের পরিণতিতেই স্পষ্ট।

এই পডকাস্টে আমেসের স্বামী কেভিন মুর, একজন অ‌্যাডাল্ট ফিল্ম প্রযোজক বিস্তারিত সাক্ষাৎকার দিয়েছেন। আগেই বলেছি, স্ত্রীর 
মৃত্যু জন‌্য তিনি সাইবারবুলিংকে দায়ী করেছিলেন। ৩০ মিনিটের সাতটি পর্বে গল্প উন্মোচিত হয়। মুরের সাক্ষাৎকার ছাড়াও আরও সম্পূর্ণ একটি ছবি আঁকার জন্য আমেসের জীবন এবং তাঁর করুণ পরিণতির দিকে যাওয়ার আগে ঠিক কী ঘটেছিল, তা জানতে আমেসের পরিবার, বন্ধুবান্ধব, সহকর্মী এবং মুরের পরিচিতদের সঙ্গেও কথা বলেন রনসন। আর তাতেই উঠে এসেছে যে আমেস শুধুমাত্র সাইবারবুলিংয়ের শিকার নয়। ক্রমে সেই বিশেষ সত্য উন্মোচিত হয়েছে। ফলে এটি হয়ে উঠেছে সেই সব ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের একটি আবেগপূর্ণ গল্প। যেখানে বিনোদনের এই ক্ষেত্রটির সঙ্গে যুক্তদের মানসিক স্বাস্থ্য়ের ভারসাম‌্য রক্ষার লড়াইটা উঠে এসেছে। যদি ‘বাটারফ্লাই এফেক্ট’ তার শ্রোতাদের জন্য একটি অজানা শিল্পকে মানবিক করে তোলে, তবে এটি সেই বিশ্বের অন্ধকার দিকটি মোকাবিলা করতে আরও ইচ্ছুক বলে মনে হয়। যদিও এটি শুনতে অত‌্যন্ত অস্বস্তিকর হতে পারে।

পুরো সিরিজ জুড়ে আমার আমরা পরিচালক হলি র‌্যান্ডালের সঙ্গে অামেসের একটি পুরানো সাক্ষাত্কারের স্নিপেট শুনতে পাই। যেখানে তিনি অ‌্যাডাল্ট ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে কীভাবে তাঁরা যৌন নির্যাতনের শিকার হন, তা তুলে ধরেছিলেন। তখন কিন্তু তাঁর কথা গ্রাহ‌্য হয়নি, আদপে কেউ বিশ্বাসই করেনি।

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন