তাঁর লেখা ছেড়ে দেওয়ার জল্পনা সম্পর্কে প্রশ্নের জবাবে মার্কেজ বলেছিলেন, “এটি শুধু অসত্যই নয়, তবে আমি যা করি তা শুধু লেখাই।”
বইতন্ত্র ডেস্ক : এক দশক আগে প্রয়াত হয়েছেন নোবেল পুরস্কার বিজয়ী লেখক গ্যাব্রিয়েল গার্সিয়া মার্কেজ। জীবনের শেষপর্বে পৌঁছে, তিনি যখন অন্যান্য শারীরিক অসুস্থতার পাশাপাশি ডিমেনশিয়া রোগে ভুগছেন, সেই সময়েও তাঁর কলম থামেনি। লিখে ফেলেন একটি আস্ত উপন্যাস। মৃত্যুর আগে তিনি ছেলেদের সেই পাণ্ডুলিপি নষ্ট করে ফেলার নির্দেশ দিয়েছিলেন। অবশ্য, অন্তত এই একটি ক্ষেত্রে তাঁরা বাবার কথা রাখতে পারেননি। এটুকু বিশ্বাসঘাতকতা তাঁদের করতেই হয়েছে, মার্কেজের বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে থাকা ভক্তদের জন্য। হয়তো, তাঁরা এটি না করলে তা বিশ্ব-সাহিত্যের সঙ্গে অন্যায়ও হত।
২০০৯ সাল। ৮২-র মার্কেজের শরীর ভেঙে পড়েছে বার্ধক্যজনিত সমস্যায়। বছর দশেক আগে ক্যান্সার থেকে সেরে উঠেছেন, কিন্তু তার ধকল শরীরের প্রভূত ক্ষতি করেছে। রটে যায় যে মার্কেজ হয়তো আর কোনওদিনই কলম ধরতে পারবেন না। বাস্তবিকই, বন্ধু-আত্মীয়দের থেকে নিজেকে তিনি প্রায় বিচ্ছিন্ন করে ফেলেছিলেন তখন। কারও ফোনও ধরছিলেন না। ওই সময় একটি পত্রিকা তাঁকে সাক্ষাৎকারের জন্য রাজি করানোর চেষ্টা করে। তিন তাতে সম্মতি না দিলেও, দু’টি প্রশ্নের উত্তর দিতে শেষ পর্যন্ত রাজি হন। তাঁর লেখা ছেড়ে দেওয়ার জল্পনা সম্পর্কে প্রশ্নের জবাবে মার্কেজ বলেছিলেন, “এটি শুধু অসত্যই নয়, তবে আমি যা করি তা শুধু লেখাই।” সেকারণেই তাঁর কলম কখনও থেমে থাকেনি, ব্যতিক্রম শুধু ২০০৫। এ সম্পর্কে তিনি নিজেই জবাব দিয়েছিলেন, আমি হয়তো লিখতেই পারতাম, কিন্তু পাঠকের কাছে ধরা পড়ে যেতাম যে তাতে আমার মন ছিল না।”
২০০৮ সালের মে মাসে ঘোষণা করা হয় যে গার্সিয়া মার্কেজ একটি নতুন ‘প্রেমের উপন্যাস’-এর পাণ্ডুলিপি শেষ করছেন। যার শিরোনাম এখনও ঠিক হয়নি। বছরের শেষ বইটি প্রকাশের সম্ভাবনা রয়েছে। যদিও, ২০০৯ সালের এপ্রিলে তাঁর এজেন্ট, কারমেন বলসেলস চিলির সংবাদপত্র ‘লা টেরসেরা’কে বলেছিলেন যে গার্সিয়া মার্কেজের আর লেখার সম্ভাবনা নেই। তাঁর সেই দাবিকে নস্যাৎ করে র্যান্ডম হাউস মন্ডাডোরির সম্পাদক ক্রিস্টোবাল পেরার বলেছিলেন যে গার্সিয়া মার্কেজ একটি নতুন উপন্যাস শেষ করছেন যার নাম ‘উই'ল মিট ইন আগস্ট’।
তারপর দেড় দশক কেটে গিয়েছে। অবশেষ প্রকাশিত হল ‘একশো বছরের নির্জনতা’র লেখকের শেষতম উপন্যাসটি। তবে ‘অানটিল আগস্ট’ নামে। উপন্যাসের মূল চরিত্র আনা ম্যাগডালেনা বাখ। তিনি একজন মধ্যবয়সী মহিলা। প্রতি বছর আগস্ট মাসে ক্যারিবীয় দ্বীপপুঞ্জে তাঁর মায়ের সমাধি দেখতে আসেন। আর এই সুযোগে সেখানে আগন্তুকদের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তোলেন তিনি। ১৯৯৯ সালে এই উপন্যাসের প্রথম অধ্যায় জনসমক্ষে পড়ে শুনিয়েছিলেন মার্কেজ। কিন্তু উপন্যাসের বাকিটুকু নিয়ে তিনি ঠিক সন্তুষ্ট ছিলেন না সে সময়ে। তাই লেখাটি প্রকাশ করতে রাজি হননি তিনি। তাই পুরো পাণ্ডুলিপিটিই নষ্ট করে ফেলার জন্য ছেলেদের নির্দেশ দিয়েছিলেন।
মার্কেজের পুত্ররা জানিয়েছেন, পেঙ্গুইন র্যান্ডম হাউজ প্রকাশনী থেকে গার্সিয়া মার্কেজের এই উপন্যাসটি প্রকাশিত হচ্ছে। আগে মূল স্প্যানিশে বইটি প্রকাশিত হল। আগামী ২০ মার্চ ইংরেজিতে প্রকাশিত হবে উপন্যাসটি।
মার্কেজের ওই উপন্যাসটির বৈশিষ্ট্য হল, তিনি এই প্রথম (এবং যথার্থভাবে শেষ) কোনও উপন্যাসে কেন্দ্রীয় চরিত্রে একজন নারীকে রেখেছেন।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন