The Online Effect : ভোটের ভবিষ্যত কি টুইটারই, উত্তর খুঁজলেন প্রাক্তন সাংবাদিক

সামাজিক মাধ‌্যম, বিশেষ করে ‘টুইটার’ বর্তমানে ‘এক্স’ কীভাবে ২০১৭ থেকে ২০২০-র মধ্যে ভারতীয় রাজনীতিকে প্রভাবিত করেছে, সে সম্পর্কে একটি অন্তর্দৃষ্টি প্রদান করে পোড় খাওয়া সাংবাদিকের এই বইটি। লিখছেন দ্বৈপায়ন কর

The Online Effect : ভোটের ভবিষ্যত কি টুইটারই, উত্তর খুঁজলেন প্রাক্তন সাংবাদিক

বিশ্বের বৃহত্তম গণতন্ত্র ভারতে নির্বাচনের মরশুম কোনও উৎসবের থেকে কম নয়। মিছিল থেকে শুরু করে সভা-সমাবেশ, প্রার্থী এবং তাদের দলগুলিকে নিয়ে লেখা স্লোগান, প্রকৃতপক্ষে ‘দ্য গ্রেট ইন্ডিয়ান ইলেকশন’-এর একেকটি অংশ। ২০২৪-এর লোকসভা নির্বাচনের আবহে যখন ছোট-বড় সব রাজনৈতিক দল প্রচারে ঝড় তুলেছেন, তখন অনেকের মাথাতেই এই ভাবনাটি ঘুরপাক খাচ্ছে যে একটি সফল প্রচার কী, এবং কেমন প্রচার একজন প্রার্থী ও একটি দলকে শেষপর্যন্ত জয়ের দিকে নিয়ে যেতে পারে। এই সময়ে প্রাক্তন সাংবাদিক সঞ্জীব সিং-এর সদ‌্য প্রকাশিত ‘অনলাইন এফেক্ট: ডিকোডিং এক্স টু প্রেডিক্ট ইলেকশন রেজাল্ট’ (The Online Effect: Decoding X to Predict Election Outcomes) বইটি উৎসাহিত পাঠককে কিছুটা ধারণা দিতে পারে।

সামাজিক মাধ‌্যম, বিশেষ করে ‘টুইটার’ বর্তমানে ‘এক্স’ কীভাবে ২০১৭ থেকে ২০২০-র মধ্যে ভারতীয় রাজনীতিকে প্রভাবিত করেছে, সে সম্পর্কে একটি অন্তর্দৃষ্টি প্রদান করে পোড় খাওয়া সাংবাদিকের এই বইটি। লেখক রিয়েল-টাইম ডেটা প্রদানের টুইটারের অনন্য ক্ষমতা এবং তার উপর আলোকপাত করেছেন। কঠোর গোপনীয়তা নীতির ফেসবুক বা ওই ধরনের সামাজিক ম‌াধ‌্যমগুলির বিপরীতে ‘টুইটার’ কীভাবে বিশ্বব‌্যাপী সংবাদের উৎস হিসাবে উঠে এল এবং অঞ্চল-কেন্দ্রিক রাজনৈতিক কথোপকথনের মঞ্চ হয়ে উঠল, গবেষণায় সেটাই উঠে এসেছে।

সঞ্জয় সিং তাঁর বইতে লিখছেন,– ২০১২-র শেষ থেকে ২০১৩-র শুরুর মধ্যে, আমি লক্ষ্য করেছি যে রাজনীতিবিদরা তাদের সমর্থকদের সঙ্গে যুক্ত থাকার জন্য টুইটার, ফেসবুক এবং ইউটিউবের মতো সামাজিক মাধ‌্যম প্ল্যাটফর্মগুলি ব্যবহার করতে শুরু করেছিলেন। অনেক বিশ্লেষক বিশ্বাস করে ফেলেন যে দিল্লিতে আম আদমি পার্টির (আপ) উত্থান ঘটেছে আম জনতার একটি বড় অংশ, যাদের বেশিরভাগই সামাজিক মাধ‌্যমে ছিল, নিজস্ব একটি রাজনৈতিক প্ল্যাটফর্ম চেয়েছিলেন। জন লোকপাল বিলের দাবিতে সমাজকর্মী আন্না হাজারের নেতৃত্বে জনপ্রিয় দুর্নীতিবিরোধী আন্দোলনের একটি যুক্তিসঙ্গত রাজনৈতিক সম্প্রসারণ ছিল এই দলটি।

কয়েক মাস অতিবাহিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আমি লক্ষ‌্য করেছি বেশ কয়েকজন শীর্ষ রাজনীতিবিদ, কিছু রাজনৈতিক দল এবং কিছু সরকারী দফতর সামাজিক মাধ‌্যমে প্রভাব ফেলতে শুরু করেছে। তারা শুধুমাত্র তাদের ফলোআর-দের সঙ্গে ব্যাপকভাবে সংযুক্ত ছিল না, মতামত প্রকাশ করেছে এবং সংবাদ পোস্ট করেছে। কিন্তু তারা প্রথাগত সংবাদমাধ‌্যম এবং সাংবাদিকদের গেটকিপিং স্ক্রুটিনিকে বাইপাস করতে তাদের সামাজিক মাধ‌্যম অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করেছে।

সঞ্জীববাবু ২০০২ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত উত্তরপ্রদেশ, বিহার, দিল্লি, পাঞ্জাব, রাজস্থান, মধ‌্যপ্রদেশ, ছত্তিশগড়, ঝাড়খণ্ড, ওড়িশা, কর্নাটক, মহারাষ্ট্র ও তেলেঙ্গানায় বিভিন্ন নির্বাচন কভার করেছেন। তাঁর গবেষণায় ২০১৯-এর লোকসভা নির্বাচনের সময় টুইটারে ব্যবহার সম্পর্কে জানা যায়, যা হিন্দিভাষী রাজ্যের রাজনীতিবিদদের এবং অন্যদের মধ্যে পার্থক্য স্পষ্ট করেছে। টুইটার, একটি অভিজাত মাধ্যম থেকে সাধারণ ভোটারদের কাছে অ্যাক্সেসযোগ্য একটি হয়ে ওঠা পর্যন্ত বিবর্তন লিপিবদ্ধ করেছেন এই বইটিতে। সিং অন্বেষণ করেছেন, কিভাবে টুইটারে টার্গেট করা প্রচারাভিযান, বার্তাগুলি অন্যান্য প্রথাগত সংবাদমাধ‌্যমকে প্রভাবিত করতে পারে, যা তাকে টুইটার ব্যস্ততা এবং ভোট ভাগের মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্ক তদন্ত করতে সূত্র দিয়েছে।

বইতে সঞ্জীববাবু লিখেছেন, –ভারতে টুইটার নিজেই ২০১৮ থেকে ২০১৯-এর শেষের দিকে রাজনীতিবিদ এবং তাদের সামাজিক মাধ‌্যমের ফলোয়ারের মধ্যে অ‌্যাক্টিভিটি মাত্রা বিশ্লেষণ করেছে। যেখানে দাবি করা হয়েছে, 2018-র অক্টোবর-নভেম্বরে ৪৮ লাখেরও বেশি নির্বাচন-সম্পর্কিত টুইট রেকর্ড হয়েছে। যেসময় দেশের পাঁচ রাজ‌্য– ছত্তিশগড়, মদ‌্যপ্রদেশ, রাজস্থান, তেলেঙ্গানা এবং মিজোরামে বিধানসভা ভোট ছিল।

টুইটার ইন্ডিয়ার তৎকালীন জননীতি ও সরকারের প্রধান মহিমা কৌল বলেছিলেন, বিধানসভা নির্বাচন সংক্রান্ত ৪০ লাখ টুইটে এটা স্পষ্ট যে আঞ্চলিক দল এবং নেতারা এই প্ল্যাটফর্মটি ব্যবহার করে ভোটার, ওপিনিয়ন মেকার, তরুণ সমাজ ও সংবাদমাধ‌্যমের সঙ্গে সংযোগ স্থাপন করছে, যা এখনও পর্যন্ত ভারতের কোনও রাজ্য নির্বাচন সম্পর্কে টুইটারে সবচেয়ে বেশি আলোচিত।

গবেষণাটি তিনটি মূল প্রশ্ন উত্থাপন করে:– উচ্চতর টুইটার ব্যস্ততা কি ইতিবাচক নির্বাচনী ফলাফলের দিকে নিয়ে যায়? রাজনীতিবিদরা কীভাবে এজেন্ডা চালান এবং শেষে ব্যবহারকারীদের সঙ্গে যুক্ত হন এবং টুইটার সক্রিয়তা চূড়ান্ত ভোট ভাগের উপর কি প্রভাব ফেলে?

সঞ্জীববাবু ব্যাখ্যা করেছেন কিভাবে রাজনৈতিক ইস্যুতে বার্তাগুলি টুইটারকে অতিক্রম করে, প্রথাগত মিডিয়াকে প্রভাবিত করে এবং টুইটার ব্যবহারকারীদের বাইরেও সেগুলি পৌঁছে যেতে পারে। উদাহরণগুলির মধ্যে রয়েছে অরবিন্দ কেজরিওয়াল এবং কিরণ বেদির মতো রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বদের টুইটগুলি, যা বিভিন্ন সংবাদপত্রে শিরোনাম হয়েছে, তাদের প্রভাব বাড়িয়েছে৷

সামগ্রিকভাবে, সিংয়ের বইটি রাজনৈতিক বক্তব‌্য গঠনে এবং নির্বাচনের ফলাফলকে সম্ভাব্যভাবে প্রভাবিত করার ক্ষেত্রে টুইটারের ভূমিকা সম্পর্কে মূল্যবান অন্তর্দৃষ্টি প্রদান করে, রাজনীতিতে সামজিক মাধ‌্যমের বিকশিত গতিশীলতার উপর আলোকপাত করে বইটি।

Post a Comment

Previous Post Next Post